ছয় দিনে টিকাদান ৩৫ লাখ ছাড়ানোর আশা
Published : Monday, 9 August, 2021 at 12:00 AM
নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে গণ টিকাদান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে কেন্দ্রগুলোতে বরাদ্দ ভ্যাকসিনের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ আসায় অনেককে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। দ্বিতীয় দিনে সিটি করপোরেশন এলাকায় এ কর্মসূচি চলছে, এছাড়া প্রথম দিন যেসব এলাকায় টিকা দেওয়া যায়নি সেসব এলাকার মানুষও রোববার টিকা পাচ্ছেন।
ছয় দিনে ৩২ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দিতে শনিবার সকালে দেশজুড়ে সম্প্রসারিত এই গণ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। তবে যে পরিমাণ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, তাতে ছয় দিনে ৩৫ লাখের বেশি মানুষ টিকার প্রথম ডোজের আওতায় আসবে বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ধারণা।
কর্মসূচির আওতায় দুর্গম এলাকাগুলোতে টিকাদান নিশ্চিত করতে হেলিকপ্টারে টিকা পাঠানোর পরিকল্পনাও নিয়েছে সরকার।
কোভিড-১৯ টিকা বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে টার্গেট ছিল, আমরা তার কাছাকাছি চলে এসেছি। ২৯ লাখ মানুষ টিকা নিয়েছেন। আমাদের ধারণা এটা ৩৫ লাখের উপরে চলে যাবে।”
এদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় রোববার সকাল থেকেই টিকা কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। সকাল ৯টায় টিকাদান শুরু হলেও এর আগেই দীর্ঘ লাইন দেখা যায় ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে। প্রতি ওয়ার্ডে দিনে ৩৫০ জনকে দেওয়ার মত টিকা বরাদ্দ থাকায় অনেক মানুষকে টিকা না নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে।
আগামী ১২ অগাস্ট পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গণ টিকাদানে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আসলে গণজাগরণ মনে হচ্ছে। মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা তো দেখাই যাচ্ছে।
“আমাদের একটা কেন্দ্রে প্রতিদিন ৩৫০ জনকে টিকা দিচ্ছি। কিন্তু মানুষ আসছে তার চেয়ে অনেক বেশি।”
কেউ টিকার বাইরে থাকবে না মন্তব্য করে উত্তর সিটি করপোরেশনের কোভিড-১৯ টিকা বাস্তবায়ন কমিটির এই সদস্য সচিব বলেন, “যারা টিকা পাচ্ছে না, আমরা তাদের আশ্বস্ত করছি। তারাও টিকা পাবে। আজকে না পেলে কালকে পাবে। কালকে না পেলে পরশু পাবে। এভাবে ছয় দিন চলবে। তারপর আগামী সপ্তাহেও তো হবে।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে টিকা দিতে আসছে। ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।
“আমাদের টার্গেট, আমরা ছয় দিনের প্রতি দিন প্রতিটি ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ৩৫০ জনকে টিকা দিতে পারব। ৭৫টি ওয়ার্ডে আমরা টিকা দিতে পারব।”
গণ টিকাদানের প্রথম দিনে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২৩ হাজারের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কোভিড-১৯ টিকা বাস্তবায়ন কমিটির এই সদস্য সচিব। সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে শনিবার যেসব এলাকার মানুষ টিকা পাননি, তাদেরও টিকা দেওয়া হচ্ছে।
ডা. শামসুল হক বলেন, “প্রত্যেক এলাকা যেন টাচে আসে সে চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা। অনেক বড় এলাকা আছে যেগুলো গতকাল কাভার হয়নি, আবার বরিশাল, খুলনা, কক্সবাজার এলাকায় প্রচ- বৃষ্টি হয়েছে; তাদের জন্য আমরা অপশন রেখেছি।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৮ ও ৯ অগাস্ট টিকা দেওয়া হবে দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায়। আর ১০ থেকে ১২ অগাস্ট পর্যন্ত ৫৫ বছরের বেশি বয়সী রোহিঙ্গাদের মধ্যে টিকা কর্মসূচি চলবে।
শামসুল হক বলেন, “হেলিকপ্টার দিয়ে আমরা আগামীকাল টিকা পাঠাবো। একেবারে প্রত্যন্তের প্রত্যন্ত এলাকা, থানচির ভিতরে। হেলিকপ্টারে টিকা নামবে, কর্মীরা কাজ করে চলে আসবে।”
কোভিড মহামারীতে আক্রান্ত ও মৃত্যু ঠেকাতে ১৪ কোটি নাগরিককে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে টিকা পেয়েছেন পৌঁনে দুই কোটির বেশি মানুষ।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে গণ টিকাদান শুরু হলেও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা টিকা সময়মতো না পাওয়ায় তার গতি ব্যাহত হয়।
ভারত থেকে টিকা না আসায় চীন থেকে টিকা কিনছে সরকার। পাশাপাশি টিকা সরবরাহের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকেও টিকা আসতে শুরু করেছে।
বর্তমানে দেশে মডার্না ও সিনোফার্মের পাশাপাশি দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
সরকারের কেনা, উপহার পাওয়া এবং কোভ্যাক্সের মাধ্যমে পাওয়া টিকা মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে এসেছে ২ কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯২০ ডোজ টিকা।
নতুন করে টিকা আসতে থাকায় বড় পরিসরে ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন করে বিরাট জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতেই পরীক্ষামূলক ধাপ হিসেবে এবার ৬ দিনের এ টিকা কর্মসূচি চলছে।
সরকারের টিকাদান টাস্কফোর্স বলছে, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দিতে ১৩ কোটি ১৮ লাখ ডোজ টিকা লাগবে। আর ৬০ শতাংশকে টিকা দিতে লাগবে প্রায় ২০ কোটি ডোজ টিকা। বাংলাদেশ এখন যে হারে টিকা দিচ্ছে, তাতে এ বছর ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে বলে টাস্কফোর্সের অনুমান।