নিজস্ব
প্রতিবেদক: এক দিনে আরও ২৬৪ জনের মৃত্যুতে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে
মৃতের মোট সংখ্যা ২৩ হাজার ছাড়িয়ে গেল। এর আগে গত ৫ অগাস্ট ২৬৪ জনের
মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশে এক দিনে কোভিডে মৃত্যুর এটাই
সর্বোচ্চ সংখ্যা।
রেকর্ড মৃত্যুর পরদিন ৬ অগাস্ট দেশে করোনাভাইরাসে
মৃত্যুর মোট সংখ্যা ২২ হাজারের দুঃখজনক মাইলফলক পেরিয়ে গিয়েছিল। তা ২৩
হাজারে পৌঁছাল মাত্র চার দিনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার
সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সাড়ে ৪৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে আরও ১১ হাজার
১৬৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে এ পর্যন্ত শনাক্ত
কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩২২ জন। আর গত এক দিনে
মারা যাওয়া ২৬৪ জনকে নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৩ হাজার ১৬১
জন হল।
আগের দিন রোববার সারা দেশে ১১ হাজার ৪৬৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়,
মৃত্যু হয় ২৪৫ জনের। সেই হিসেবে এক দিনের ব্যবধানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা
সামান্য কমলেও মৃত্যু বেড়েছে। গত এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৫ হাজার ৪৬৮
জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে যা দিনের মোট শনাক্ত রোগীর প্রায়
অর্ধেক।
আর এই সময়ে যে ২৬৪ জন মারা গেছেন, তাদের ৯২ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা গেছেন আরও ৬০ জন।
সরকারি হিসেবে এক দিনে সেরে উঠেছেন ১৪ হাজার ৯০৩ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৬২ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের
হার দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৫৪ শতাংশে। এই হার আগের দিন ২৪ দশমিক ২৮ শতাংশ ছিল।
বাংলাদেশে
করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। ডেল্টা
ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গত জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে ১৩ লাখ
পেরিয়ে যায় গত ৪ অগাস্ট। এর মধ্যে ২৮ জুলাই দেশে দিনে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০
জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮
মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মঙ্গলবার
তা ২৩ হাজার ছাড়িয়ে গেল। একই দিনে ৫ অগাস্টের সমান, রেকর্ড ২৬৪ জনের
মৃত্যুর খবর এল।
ভারতে উদ্ভূত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গেল জুলাই
মাসে মহামারীর সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ওই এক
মাসেই দেশে মোট ৩ লাখ ৩৬ হাজার ২২৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু
হয় ৬ হাজার ১৮২ জনের। একক মাস হিসেবে এত রোগী শনাক্ত বা মৃত্যু এর আগে
দেখতে হয়নি বাংলাদেশকে।
অগাস্টের শুরুর তুলনায় এখন শনাক্তের হার কিছুটা
কমে এলেও মৃত্যু রয়েছে আগের মতই। এ মাসের প্রথম দশ দিনেই প্রায় আড়াই হাজার
মানুষের মৃত্যুর খবর এসেছে।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪৩ লাখ ১ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২০ কোটি ৩২ লাখের বেশি রোগী।
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ৪৭ হাজার ৪২৪টি নমুনা
পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৮২ লাখ ১২ হাজার ৪১টি নমুনা।
নমুনা
পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ, এ
পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর এ পর্যন্ত মৃত্যুর হার
দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬৮ শতাংশে।
গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ৩
হাজার ৮৯৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের ফরিদপুরে ১৬৭ জন,
গাজীপুরে ১৮২ জন, কিশোরগঞ্জে ১১২ জন, মানিকগঞ্জে ২০৩ জন, মুন্সীগঞ্জে ১৫৫
জন, নারায়ণগঞ্জে ৩০৪ জন এবং টাঙ্গাইলে ১৪১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রাম
বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৮৭৯ জন, কক্সবাজারে ১৩২ জন, ফেনীতে ১৭৭ জন,
নোয়াখালীতে ২৮৩ জন, চাঁদপুরে ২২১ জন, কুমিল্লায় ৪৬২ জন এবং
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৭১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে
রাজশাহী জেলায় ১৩৮ জন, সিরাজগঞ্জে ১২৮ জন এবং বগুড়ায় ১০১ জনের মধ্যে
সংক্রমণ ধরা পড়েছে। খুলনা বিভাগের মধ্যে যাশোরে ১৩৯ জন, খুলনায় ১৪৬ জন,
কুষ্টিয়ায় ১৬৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। সিলে বিভাগের সিলেট জেলায় ৩১৭
জন, সুনামগঞ্জে ১০৫ জন আর হবিগঞ্জে ১০১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। অন্য
বিভাগগুলোর বিভিন্ন জেলার মধ্যে ময়মনসিংহে ১৮৮ জন, বরিশালে ৩০৫ জন নতুন
রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে।
ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৯২ জনের
মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৩৯ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া
৬০ জনের মধ্যে ১২ জন চট্টগ্রাম জেলার, ১৩ জন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার এবং ১৬
জন কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা ছিলেন। এছাড়া খুলনা বিভাগে ২৭ জন, রাজশাহী
বিভাগে ২৫ জন, বরিশাল বিভাগে ১১ জন, সিলেট বিভাগে ১৭ জন, রংপুর বিভাগে ১৪
জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১৮ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে।
মৃত ২৬৪ জনের
মধ্যে ১৪০ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৬৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের
মধ্যে, ২৫ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১৬ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের
মধ্যে, ৬ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১০ বছরের কম ছিল।
মৃতদের
মধ্যে ১৫৪ জন ছিল পুরুষ, ১১০ জন নারী। ১৯২ জন সরকারি হাসপাতালে, ৬২ জন
বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১০ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।