ফুটবল-ক্রিকেটের বদলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বেছে নিচ্ছে অনলাইনভিত্তিক মোবাইল গেমস। ‘ফ্রি ফায়ার, পাবজিসহ নানা গেম তরুণদের মধ্যে ভয়ঙ্কর আসক্তি তৈরি করছে। এসব গেম অনেক েেত্র সহিংসও করে তুলছে তাদের। এছাড়াও লাইকি, টিকটক, বিগো লাইভ, পাবজি ইত্যাদি এ্যাপসের অশ্লীল ভিডিওতে নাচ, গান ও অভিনয়ের অংশ নিয়ে বিপথে যাচ্ছে অনেক তরুণ-তরুণী। পাচারও হচ্ছে বিদেশে। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। জনকণ্ঠ এ নিয়ে প্রকাশ করেছে ধারাবাহিক প্রতিবেদন। এমন প্রোপটে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ সব তিকর গেম অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে টিকটক, বিগো লাইভ, পাবজি এবং লাইকি ধরনের অনলাইন গেম এবং এ্যাপস বন্ধের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে এগারো কোটির বেশি। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই তরুণ। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেট ছাড়া সমাজ চলে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে ইন্টারনেটের ব্যবহার অবাধ এবং সহজপ্রাপ্য করতে হবে। বর্তমান সরকার এই চেষ্টাই করে যাচ্ছে। এর মধ্যেও তরুণ সমাজের একটি অংশ ইন্টারনেটের অপব্যবহারে মেতে উঠেছে। ব্যবসার জন্য আন্তর্জাতিক চক্রের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে এরা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের পথে।
ফ্রি ফায়ার ব্যাটল বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ডাউনলোড একটি অনলাইন গেম। পাবজি নামে অনলাইনভিত্তিক সহিংস গেমটিও বিশ্বজুড়ে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করছে। এসব গেমে প্রতিপকে হত্যার জন্য অস্ত্র এবং সরঞ্জাম কিনতে হয়। এক হিসেবে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে শীর্ষে থাকা পাবজি আয় করেছে ৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার, দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে ফ্রি ফায়ার আয় করেছে ২৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের এই গেমের উপকরণ সরাসরি কিনতে হয় ক্রেডিট কার্ডে ডলার কিংবা পেপালের মতো কারেন্সি দিয়ে। দেশে এসব গেমের উপকরণ সহজে বিক্রির জন্য তৈরি হয়েছে একটি মধ্যস্বত্বভোগী চক্র। ফেসবুকে গ্রুপ ও পেজ খুলে বিকাশ এবং নগদের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে তরুণরা এসব উপকরণ কিনতে পারে সহজেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভারতে এক তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় বাংলাদেশী যুবকের জড়িত থাকার প্রমাণ পায় পুলিশ। ভুক্তভোগী তরুণী ও অভিযুক্ত সবাই রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার ‘টিকটক হৃদয় বাবু’ গ্যাং-এর সদস্য। ভারতীয় পুলিশ তাদের গ্রেফতার এবং ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে। পুলিশ বলছে, এরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে তরুণীদের টিকটকসহ নানা গেমসে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়ার কথা বলে সম্পর্ক তৈরি করে। পরে তাদেরকে প্রতারণার মাধ্যমে পাচার করত বিদেশে। তরুণদের ভয়ঙ্কর আসক্তি থেকে ফেরানোর এখনই সময়। পৃথিবীর বহু দেশ এসব এ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশেও এসব এ্যাপ নিষিদ্ধ করতে উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সরকার এসব গেমস নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেবে বলেই আশা করছে সবাই। প্রযুক্তির ভাল-মন্দ রয়েছে। সে েেত্র এর নেতিবাচক দিকসমূহ পরিহার করে ইতিবাচক দিকগুলো গ্রহণের উপযোগী একটি নীতিমালা প্রণয়ন আবশ্যক।