Published : Sunday, 22 August, 2021 at 12:00 AM, Update: 22.08.2021 1:33:43 AM
মজিবুর রহমান বাবলু / তানভীর দিপু||
করোনায়
দীর্ঘদিন মাদ্রাসা বন্ধ। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় বাড়িতে
বসিয়ে না রেখে দশম শ্রেণীর ছাত্রী মাহমুদাকে(১৬) বিয়ে দেবার পরিকল্পনায়
ছিলো তার পরিবার। একই দশায় ছিলো একই এলাকা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার
ছুপুয়া গ্রামে আরো দুই কিশোরী লিমা(১৪) ও শারমিন(১৮) এর। বিয়ে থেকে বাঁচতে
লকডাউন শিথিল হতেই মাদ্রাসা ও স্কুলে এসাইনমেন্ট জমা দেবার কথা বলে গত ১৭
আগষ্ট বাড়ি থেকে এক সাথে পালায় তিনজন। কুমিল্লা ইপিজেডের কারখানায় কাজ করে
জীবিকা নির্বাহ করবে বলেও পরিকল্পনা আঁটে তারা। গলার স্বর্ণের চেইন ও
কানের দুল বন্ধক রেখে কুমিল্লার সিটি কর্পোরেশনের আশ্রাফপুর এলাকায় মদিনা
মঞ্জিলের দ্বিতীয় তলায় বাড়ি ভাড়াও নেয় তারা। এদিকে বাড়ি থেকে বের হবার পর
ফিরে না আসায় চৌদ্দগ্রাম থানায় নিখোঁজের ডায়রি করে অভিভাবকেরা। একই এলাকার
প্রায় একই বয়সী তিন কিশোরী নিখোঁজÑ এমন ডায়রির প্রেক্ষিতে তিন দিন ধরে
তাদের খোঁজ করে পুলিশ। সবশেষ শুক্রবার রাতে মাহমুদা, লিমা ও শারমিনকে
আশ্রাফপুরের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
চৌদ্দগ্রাম
উপজেলার ছুপুয়া ছফরিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী লিমা এবং
১০ম শ্রেণীর ছাত্রী মাহমুদা। আর শারমিন একই এলাকার ধর্মপুর নাজিম আলী
স্কুল এন্ড কলেজের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী। তারা সবাই চৌদ্দগ্রাম উপজেলার
কালিকাপুর ইউনিয়নের কিং ছফুয়া গ্রামের একই এলাকার বাসিন্দা।
মাহমুদার
বড় বোন মরিয়ম জানান, দীর্ঘদিন মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় মাহমুদা বাড়িতেই ছিলো।
কিন্তু এভাবে বাড়ি বসে থাকায় পরিবারের লোকজন প্রায় তাকে বিয়ের কথা বলে।
কিন্তু এতে সে প্রায় ক্ষুব্ধ হয়ে থাকতো। শুনেছি একই দশা ছিলো লিমা ও
শারমিনের। বিয়ে থেকে বাঁচতেই তারা এমন সিদ্ধান্ত নেয়।
ছুপুয়া ছফরিয়া
ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মোঃ শহিদুল্লাহ জানান, গত কয়েকদিনে ৭ম এবং
১০ শ্রেণীর জন্য কোন এসাইনমেন্ট জমা বা করার কথাই ছিলো না। তারা বাড়ি থেকে
পালিয়েছে এমন খবরও আমার জানা নেই।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, গত ১৭ আগস্ট সোমবার স্থানীয় মাদরাসা ও
স্কুল ছাত্রী একই গ্রামের ৩ কিশোরী পিতা-মাতার কাছে প্রতিষ্ঠানের
এ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে তিনজন একত্রিত হয়ে
কুমিল্লার কোন গার্মেন্টসে চাকুরী করবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এজন্য
তারা সদর দক্ষিণ উপজেলার মধ্যম আশ্রাফপুর মদিনা মঞ্জিলের দ্বিতীয় তলায়
ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠে। ওই দিন রাত পর্যন্ত তারা নিজেদের বাড়িতে না
ফেরায় সম্ভাব্য আত্মীয় স্বজনের বাসায় খোঁজ নেয়া হয়। কোন সন্ধান না পেয়ে
পরদিন তাদের অভিভাবকরা ‘নিখোঁজ’ বিষয়ে থানায় পৃথক সাধারণ ডায়েরী করে।
পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুক্রবার বিকেলে চৌদ্দগ্রাম থানার
উপ-পরিদর্শক আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ওই বাসা থেকে ৩ জনকে
উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। উদ্ধার হওয়া তিন কিশোরীকে তাদের অভিভাবকের নিকট
হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আবদুল মজিদ জানান, এমন
ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের এমন হতাশা ভোগার খবর
আমরা অনেক পাই। কিন্তু এসব পরিস্থিতি থেকে শিশু-কিশোরীদের নিরাপদ রাখতে
হলে- তাদেরকে শিক্ষকদের সাথে আরো বেশি যোগাযোগ বাড়াতে হবে। অভিভাববকদের
উচিত তাদের প্রতি আরো সহনশীল আচরণ করা। গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের ক্ষেত্রে এসব
ধরনের খবর আমরা পাই। এজন্য শিক্ষার্থীদের এখন এস্যাইনমেন্ট এবং
স্কুল-মাদ্রাসা সম্পর্কিত কাজে আরো বেশি সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া তাদেরকে
ইনডোর গেমসের প্রতি আগ্রহী করা হচ্ছে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে
অভিভাবক এবং শিক্ষকদের সমন্বিতভাবে খেয়াল রাখতে হবে।