লিওনেল মেসি, নেইমার, এমবাপেরা যে লিগে খেলেন, সেই ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানে রোববার রাতে ঘটে গেছে এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা। মাঠের মধ্যেই ফুটবলারদের সঙ্গে তুমুল মারামারি লেগে যায় সমর্থকদের। বেশ কয়েকজন ফুটবলার আহতও হলেন। শেষ পর্যন্ত সেই ম্যাচটি স্থগিত করে দিতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ।
ফরাসী লিগে অবশ্য এখনও অভিষেক হয়নি মেসির। এমনকি চলতি মৌসুমে এখনও খেলতে নামেননি নেইমারও। তার আগেই এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেলো। খেলাটি হচ্ছিল নিসে বনাম অলিম্পিক মার্সেইয়ের মধ্যে। নিসের মাঠ আলিয়াঞ্জ রিভেইরা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল ম্যাচটি। দ্বিতীয়ার্ধেই ঘটে এই অপ্রীতিকর ঘটনা।
ম্যাচের প্রথমার্ধ ছিল গোলশূন্য। দ্বিতীয়ার্ধের খেলাও শুরু হয় নির্বিঘ্নেই। ৪৯ মিনিটের মাথায় ডলবার্গের গোলে ১-০ ব্যাবধানে এগিয়ে যায় স্বাগতিক দল নিসে। তবে ম্যাচের ৭৪ মিনিটের মাথায় মার্সেইয়ের একটি কর্ণারের সময় শুরু হয় গণ্ডগোল।
স্বাগতিক দলের সমর্থকরা আচমকাই মাঠের মধ্যে পানির বোতল ছুঁড়তে শুরু করেন। কর্ণার কিক নিতে যাওয়া দিমিত্রি পায়েতের পিঠে সজোরে এসে লাগে একটি কোমল পানীয়ের বোতল। ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে যান ফুটবলাররা।
যদিও পায়েত রুখে দাঁড়ান। তিনি প্রথমে বোতলটি কুড়িয়ে নিয়ে উল্টো ছুঁড়ে মারেন দর্শকদের দিকে। তার সঙ্গে যোগ দেন মার্শেইয়ের অন্য ফুটবলাররাও। ঘটনার আকস্মিকতা থামাকে জোর চেষ্টা চালান নিসের ফুটবলাররা। কিন্তু ফুটবলাররা পানির বোতল কুড়িয়ে উল্টো ছুঁড়তে শুরু করার পর উগ্র হয়ে ওঠে দর্শকরা।
নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীদের প্রতিরোধ ভেঙে বাধ ভাঙা জোয়ারের মত দর্শকরা নেমে আসে মাঠের মধ্যে এবং শুরু করে তাণ্ডব চালানো। এ সময় মার্শেইয়ের বেশ কয়েকজন ফুটবলার আহত হয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মার্শেই ফুটবলারদের আহত হওয়ার ছবি এবং ভিডিও। পরিস্থিতি শান্ত হলেও মার্সেইয়ের ফুটবলাররা পুনরায় মাঠে নামতে অস্বীকৃতি জানান। যার ফলে ম্যাচ বাতিল করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
প্রায় ঘণ্টাখানেক পর নিসে প্রেসিডেন্ট জিন পিয়েরে রিভেরে মাঠে নেমে আসেন এবং সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে উচ্চস্বরে দর্শকদের শান্ত হতে বলেন। তিনি অনুরোধন জানান ম্যাচ শুরুর করার মত পরিবেশ তৈরি করতে। দর্শকরা শান্ত হলে নিসে খেলোয়াড়রা মাঠে নেমে আসলেও মার্সেই খেলোয়াড়রা অস্বীকৃতি জানান মাঠে নামতে।
ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার পর মার্সেই প্রেসিডেন্ট পাবলো লঙরিয়া বলেন, ‘লিগ কর্তৃপক্ষ ম্যাচ পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে আমাদের খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। আমরা খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার স্বার্থেই মাঠে না নামার সিদ্ধান্ত নিই। রেফারিও আমাদের সঙ্গে একমত হন। তিনিও জানান, ফুটবলারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়। এটা দুর্ভাগ্যজনক। তাই আমরা মাঠে না নেমে মার্সেই ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিই।’
তিনি আরো বলেন, ‘এবারই প্রথম নয়, এ নিয়ে দ্বিতীয়বার আমরা এমন আক্রান্ত হয়েছি। এর আগে মন্তেপিয়ের মাঠে গিয়ে এমন অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হয়েছি। সেখানে অপ্রীতিকর ঘটনা সত্ত্বেও আমরা ম্যাচ চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু এখন দেখছি, আমাদের খেলোয়াড়দের কোনো নিরাপত্তা নেই। আজ যেটা ঘটে গেছে, সেটা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য একটি ঘটনা। আমরা এটা ফ্রেঞ্চ ফুটবল কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরবো এবং একই সঙ্গে মার্সে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
নিসে প্রেসিডেন্ট জিন পিয়েরে রিভেরে অবশ্য ঘটনা এমন পর্যায়ে যাওয়ার জন্য পরোক্ষভাবে মার্শেই ফুটবলার পায়েত এবং আলভারো গঞ্জালেজকেই দায়ী করেছেন। তার কথা হচ্ছে, দর্শকরা বোতল ছুঁড়ে মারার পর পায়েত আর গঞ্জালেজ কেন সেটা পাল্টা ছুঁড়ে মারলেন? না হলে তো এমন ঘটনা ঘটতো না।’
ফ্রেঞ্চ পত্রিকা এল ইকুইপে রিপোর্ট করেছে, মারামারির ঘটনায় মাতেও গুয়েনডোজি এবং লুয়ান পেরেস আহত হয়েছেন।