৫ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা
Published : Tuesday, 24 August, 2021 at 12:00 AM
দেশের উজানে বাড়ছে বৃষ্টি। দেশের অন্যান্য স্থানেও বৃষ্টি হচ্ছে। সবমিলিয়ে দেশের প্রধান প্রধান নদনদীগুলোর পানি বেড়েই চলেছে। অনেক নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ওপরে। আরও কিছু নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠার শঙ্কাও রয়েছে। ঢাকার আশেপাশের নদীগুলোর পানিও বাড়বে। তবে তা বিপৎসীমা অতিক্রম করবে না। আগামী সাতদিন এই বন্যা পরিস্থিতি একই রকম থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন বন্যা ও আবহাওয়া সংশ্লিষ্টরা।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা জানান, আগামী সাতদিন এই বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৫ জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। দুই নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানিও বাড়তে পারে। তবে বিপৎসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা নেই।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, একইসঙ্গে বাড়ছে পদ্মা নদীর পানিও। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানিও বাড়ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরিয়তপুর জেলার নি¤œাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হতে পারে। পাশাপাশি পদ্মা নদীর ভাগ্যকূল পয়েন্ট এবং শীতলক্ষ্যা নদীর নারায়ণগঞ্জ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে ওই সময় ওই অঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র এবং আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানির খুব দ্রুত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে অধিদফতর দুটি।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আরও জানায়, পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৪৯ থেকে বেড়ে ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরেশ্বর পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৮ থেকে বেড়ে ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে এখন। এদিকে যমুনা নদীর মথুরা পয়েন্টের পানি ১২ থেকে ১ সেন্টিমিটার বেড়ে ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর আরিচা পয়েন্টের পানি নতুন করে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে, এখন তা ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আত্রাই নদীর বাঘাবাড়ি পয়েন্টের পানি ৯ থেকে বেড়ে এখন ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে গড়াই নদীর কামারখালি পয়েন্টের পানি ১৯ থেকে কমে ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এখন প্রবাহিত হচ্ছে। ধলেশ্বরী নদীর এলাসিন পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের স্টেশনগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে লালাখাল স্টেশনে ৯৭ মিলিমিটার। এছাড়া লরেরগড় স্টেশনে ৬০, জাফলং এ ৪৮, কানাইঘাটে ৬৬, পাটেশ্বরীতে ৬২ এবং গাইবান্ধা স্টেশনে ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া দেশের উজানে ভারতের স্টেশনগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে চেরাপুঞ্জিতে ২৭২ মিলিমিটার। এছাড়া পাসিঘাটে ৩৯, গ্যাংটকে ৫৩, ধুব্রিতে ২৪, জলপাইগুড়িতে ৪৪ এবং দিব্রগড়ের ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের আগামী দশ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানি সমতল বাড়তে পারে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর অববাহিকায় বিপৎসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা নেই। এদিকে আগামী দশদিনের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বাড়তে পারে। সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর স্টেশন এবং মানিকগঞ্জ জেলার আরিচা স্টেশনের পানি আগামী সাতদিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। যার ফলে চলমান এ সকল জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আগামী সাতদিন অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৭ আগস্ট নাগাদ জামালপুর জেলার বাহাদুরাবাদ স্টেশন , বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি স্টেশনের পানি বিপৎসীমার পাশাপাশি পৌছাতে পারে। সিরাজগঞ্জ জেলার সিরাজগঞ্জ স্টেশন এবং টাঙ্গাইল জেলার এলাসিন ঘাট স্টেশনে পানি সমতল আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।
এদিকে গঙ্গা নদীর পানি সমতল আগামী ৫ দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পয়েন্ট ও শরীয়তপুরের সুরেশ্বর পয়েন্টে পানি সমতল আগামী সাতদিন স্থিতিশীল থাকতে পারে , যার ফলে চলমান বন্যা পরিস্থিতি আগামী সাতদিন অব্যাহত থাকতে পারে। মুন্সিগঞ্জের ভাগ্যকূল এবং মাওয়া পয়েন্টে পানি সমতল ২৫ আগস্ট নাগাদ বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।
আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, মৌসুমি বায়ুর কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। একইসঙ্গে উজানেও অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। এসব কারণে দেশে বন্যার পানিও বাড়ছে। অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টির কারণে আরও এলাকা প্লাবিত হতে পারে।