ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ৩ শ’  বছরের ভৈরব মজুমদারের জমিদার বাড়ি
Published : Thursday, 26 August, 2021 at 12:00 AM, Update: 26.08.2021 1:17:07 AM
সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ৩ শ’  বছরের ভৈরব মজুমদারের জমিদার বাড়িচৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি: সংরক্ষনের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথদিঘি ইউনিয়নের বরদৈন মুন্সি বাড়ির ভৈরব মজুমদারের ৩’শত বছরের জমিদার বাড়ি। ১৭৪৮ সালে ওই এলাকার বরদৈন মুন্সি বাড়িতে তৎকালিন জমিদার ভৈরব মজুমদার সুদর্শন বাড়িটি নির্মান করেন। বর্তমানে বাড়িটির সংস্কার না হওয়ায় দিন দিন তা সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাড়িটির দরজা জানালাগুলো ভেঙ্গে গেলেও সু-প্রাচীন এই দোতলা বাড়িটি কালের রাজ স্বাক্ষী হিসেবে এখনো মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভৈরব মজুমদারের পূর্বপুরুষরা ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে ১৬০০ সালে এ দেশে আসেন। মোগল সা¤্রাজ্যের সেনাবাহিনীর উত্তরপ্রদেশের একটি ইউনিটের দায়িত্বে ছিলেন ভৈরব মজুমদারের পিতা রঘু নারায়ণ মজুমদার। পরে এই অঞ্চলের তিনি একটি বিশাল মৌজার মালিক হয়ে যান। তারই পুত্র ছিলেন ভৈরব মজুমদার। পাশের আরেকটি অঞ্চলের ভাটির বাঘ খ্যাত বর্তমান বৃহত্তর নোয়াখালীর জমিদার শমসের গাজী ১৭৩৯-৪০ সালে ত্রিপুরার মহারাজার খাজনা দেয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে ওই সময় মহারাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন ত্রিপুরাবাসী। তখন তাঁর সাথে একমত পোষন করেন এই অঞ্চলের জমিদার ভৈরব মজুমদার। এক সময় মহারাজাকে যুদ্ধে পরাজিত করে ত্রিপুরার শাসনকর্তা হয়ে যান শমসের গাজী। মহারাজার সাথে সেই যুদ্ধে ভৈরব মজুমদার তার নিজেস্ব সেনাবাহিনী নিয়ে শমসের গাজীকে সহায়তা করেন। বৃটিশ রাজ পলাশীর যুদ্ধে জয়ী হলে ত্রিপুরার পরাজিত কৃষ্ণ মানিক্য বৃটিশদের সহযোগিতায় শমসের গাজীকে আক্রমন করে পরাজিত করেন। বন্দি হন ভৈরব মজুমদার। সুদর্শন ভৈরব মজুমদারের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে রানী রাজাকে অনুরোধ করেন তাকে মুক্ত করে দিতে। রানীর কথা রাখতে গিয়ে কৌশলে রাজা ভৈরব মজুমদারের শরীরে বিষ প্রয়োগ করে মুক্ত করে দেন। ত্রিপুরার উদয়পুর থেকে ঘোড়া দাপড়িয়ে বরদৈন আসলে তার শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সাথে সাথে ঘোড়া থেকে পড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। একই স্থানে তাকে সমাহিত ও তার সম্মান রক্ষার্থে তার বংশধররা তৎকালিন ১৭৬০ সালে ২টি সুইচ্চ মট নির্মান করেন। যা আজও বিরাজমান রয়েছে। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভৈরব মজুমদারের বংশধররা এই অঞ্চলের প্রজাদের কল্যাণে অনেক অবদান রেখেছেন। দেশ বিভাগের আগ থেকেই এই বাড়ির বেশিরভাগ সদস্য ব্যবসা বাণিজ্য ও উচ্চশিক্ষার জন্য সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে  পরে। ১৯৪৭ সালের পরে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে পাকিস্তান শাসনামলে এই বাড়ির লোকজন কমতে থাকে। ভৈরব মজুমদারের চতুর্থ প্রজম্ম অনাথ বন্ধু মজুমদার কুমিল্লা শহরে গিয়ে ব্যবসা বানিজ্য শুরু করেন। বর্তমানে অনাথ বন্ধু মজুমদারের এক পুত্র শক্তি ভূষন মজুমদার বসবাস করেন নগরীর পুরাতন চৌধুরী পাড়ায়। তাঁর একমাত্র পুত্র ভাস্কর মজুমদার প্রতি বছর পূর্বপুরুষদের স্মৃতি ধন্য বরদৈন মুন্সি বাড়িতে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসেন। ইতিহাসের পুতি কাব্যে ভৈরব মজুমদারকে নিয়ে লেখা না হলেও লোকমূখে পালা গানে তিনি বেঁচে আছেন দীর্ঘদিন। যেগুলো সংরক্ষন করা এখন সময়ের দাবি।
ভৈরব মজুমদারের ষষ্ঠ বংশধর ভাস্কর মজুমদার বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের পর আমাদের বংশধরা ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেখাপড়ার জন্য দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে বাড়িটিতে লোকজন বসবাস করে না। বর্তমান প্রজন্ম জানে না ভৈরব মজুমদারের ইতিহাস সম্পর্কে। তিনি আরও বলেন, বাড়িটি এবং রাজার তৈরি করা তার স্ত্রীর স্মরণে নির্মিত মটগুলো সরকার সংরক্ষণ করে এমনকি ইতিহাসগুলো তুলে ধরে তাহলে আমাদের প্রজন্ম এ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মঞ্জুরুল হক বলেন, ভৈরব মজুমদারের বাড়িটি সম্পর্কে আমি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখব বাড়িটির বর্তমান অবস্থা এবং সরকারিভাবে বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় কিনা সে বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো’।