দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্লক করা হয়েছে অনলাইন গেম পাবজি ও ফ্রি ফায়ার। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনও পুরোপুরি দুটি গেমকে ব্লক করা সম্ভব হয়নি। তাই গেম দুটোর খেলা থেমে নেই। কারণ হিসেবে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাবকে বিশেষজ্ঞরা বড় করে দেখছেন।
অপরদিকে দেশের ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের চিত্র দেখলেও বোঝা যায়, গেম দুটির খেলা হচ্ছে দেদার। গেম দুটি পুরোপুরি ব্লক হলে ব্যান্ডউইথ ব্যবহারে বড় পরিবর্তন আসতো বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। মাত্র ২৬ জিবিপিএস কম ব্যবহার হওয়ায় তা ঠিক গেমের জন্যই কিনা নিশ্চিত নন তারা। আরও এক সপ্তাহ গেলে বিষয়টির পুরো চিত্র পাওয়া যাবে।
গেম সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, প্রযুক্তি উন্মুক্ত থাকায় গেম দুটো পুরোপুরি ব্লক করা সম্ভব হবে না। সামগ্রিকভাবে দেশে গেম দুটি খেলার হার কমলেও একেবারে চলে যাবে না। তাদের আশঙ্কা, এই সময়ে অন্য গেমগুলোর জনপ্রিয়তা আরও বাড়তে পারে। দেশে এই দুটোর পাশাপাশি আরও কয়েকটি গেম জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সেই গেমগুলো নিয়ে তৈরি হতে পারে আরেক উন্মাদনা। ফলে বিষয়টি ব্লক করলেই সুফল পাওয়া যাবে না। গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক কোনও উপায় বের করতে হবে।
বিকল্প পথে বা ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) দিয়ে গেম দুটি খেলার সুযোগ রয়েছে। সরকার তাহলে ভিপিএন বন্ধ করবে কিনা এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, ভিপিএন দিয়ে কেবল লোকজন পাবজি বা অন্য গেমস খেলে তা তো না। অনেক মেধাবী তরুণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ভিপিএন’র সঙ্গে যুক্ত আছে। কাজেই ইচ্ছে করলেই আমরা ওইভাবে বন্ধ করতে পারছি না।
এ বিষয়ে দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, আমাদের জানা মতে মোটামুটি সব আইআইজিতে গেম দুটি ব্লক করেছে। ডট (ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকম) চেষ্টা করেছে। ফলে মোটামুটি একটা পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছানো গেছে তবে এ বিষয়ে আইএসপিগুলোর কিছু করার নেই।
গেম দুটি পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে কিনা, ব্যান্ডউইথের ব্যবহারে কোনও প্রভাব পড়লো কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের জানা মতে পাবজি পুরোপুরি ব্লক করা সম্ভব হয়েছে। ফ্রি ফায়ার এখনও কিছু কিছু জায়গায় খেলা যাচ্ছে।
আমিনুল হাকিম জানান, যেহেতু গেমস দুটি পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, বিকল্প উপায়েও খেলা যায় ফলে এখনই পুরো চিত্র বলা যাবে না। গত কয়েকদিনে দেশে মাত্র ২৬ জিবিপিএস (গিগাবিটস পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথের ব্যবহার কমেছে (দেশে ব্যান্ডউইথের ব্যবহার হচ্ছে ২৬৪৯ জিবিপিএস)। এটা গেমের কারণে না কী কারণে তা আরও সপ্তাহখানেক গেলে বলা যাবে।
জানা গেছে, দেশে ফ্রি ফায়ারের দুটি ক্যাশ সার্ভার রয়েছে। ক্যাশ সার্ভারের কারণে গেমটি পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। সূত্র জানায়, ডট পাবজি গেমটি পুরোপুরি ব্লক করতে পেরেছে। ফ্রি ফায়ার এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, দেশে ওয়েবভিত্তিক সাইট বন্ধ করার সক্ষমতা অর্জন করা গেলেও অ্যাপসভিত্তিক কোনও গেম ব্লক করার সক্ষমতা অর্জন করা যায়নি। অনেকে এখনও গুগল প্লে থেকে অ্যাপ ডাউন লোড করে গেম খেলতে পারছেন। যারা সরাসরি খেলতে পারছে না তারা প্রক্সি সার্ভার দিয়ে গেম দুটি খেলছে।
জানতে চাইলে আইআইজি প্রতিষ্ঠান লেভেল থ্রি ক্যারিয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জুনায়েদ বলেন, আমাদের নেটওয়ার্ক ফুল ব্লক। আমার জানা মতে দেশের বড় বড় কয়েকটি কমপ্লায়েন্স আইআইজি তাদের নেটওয়ার্কে গেমস দুটি ব্লক করেছে। সব আইআইজি (আইআইজির সংখ্যা ২৯টি) ব্লক করেছে কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই। তিনি জানান, বিটিআরসির নির্দেশনা পাওয়ার পরে তার টিম দিন রাত কাজ করে গেম দুটি ব্লক করতে সক্ষম হয়েছে।