-
তানভীর দিপু: রোদ
বৃষ্টি যাই হোক তাদের থাকতে হয় পানিবন্দী। একবার বৃষ্টি হলে অন্তত তিন দিন
ঘরবাড়ি থেকে পানি সরে যাবার নাম গন্ধও থাকে না। পরিচ্ছন্ন রৌদ্রকরোজ্জল
আকাশের নিচেও পানিবন্দী হয়ে অপরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করতে হচ্ছে কুমিল্লা
শহরের দৌলতপুর ছায়াবিতান এলাকার অন্তত দেড় শ’টি পরিবার। সদর উপজেলার দক্ষিণ
দূর্গাপুর ইউনিয়নের ছায়াবিতান এলাকায় গিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে এই চিত্র
দেখা গেছে। গত রবিবার রাতের বৃষ্টিতে জমে যাওয়া পানি ৬০ ঘন্টায়ও সরেনি ওই
এলাকার সড়ক ও অলিগলি থেকে। মসজিদের বারান্দা-স্কুলের মাঠ সব জায়গাতেই মে
থাকে পানি। স্থানীয় ছায়াবিতান কমিউনিটি ক্লিনিক, ছায়াবিতান আবাসিক এলাকা ও
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ডিগ্রী শাখার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বহুতল
ভবনের বাসিন্দা থেকে শুরু করে ঝুপড়িতে বসবাসকারীরা পর্যন্ত এই ভোগান্তির
শিকার হচ্ছেন। বন্ধ রাখতে হচ্ছে দোকান পাট, দিনের বেলাতেও চলে না কোন
যানবাহন। এলাকাটির পূর্ব পাশে রেল লাইন এবং পশ্চিমে ভিক্টোরিয়া কলেজের
ক্যাম্পাসসহ নির্মানাধীন আবাসিক এলাকায় একটানা নানান নির্মান কাজ চলতে
থাকায় আশেপাশের ড্রেন ও নালাগুলো বেশ কয়েকবছর ধরেই প্রায় বন্ধ বলে জানিয়েছে
স্থানীয়রা। সিটির পানি এই এলাকার উপর দিয়ে গেলেও ইউনিয়ন হওয়ায় যেন করো
নজরেই আসে না এখানকার মানুষের দুঃখকষ্ট।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা
যায়, কুমিল্লা শহরের ছায়াবিতান, দৌলতপুর ও ধর্মপুর এলাকার ড্রেন দিয়ে এসব
এলাকাসহ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন, ডিগ্রী কলেজ, বিসিক শিল্পনগরী,
ঠাকুরপাড়া এলাকার পয়নিষ্কাশন ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হয়। বিগত কয়েক বছর
যাবত এই এলাকার ড্রেন ও নালাগুলো ময়লা আবর্জনা ভরাট হয়ে আছে। যে কারণে সিটি
কর্পোরেশন এলাকার পানি যখন এই নিম্নাঞ্চলের দিকে ধাবিত হয়, পানি সরে
যাবার কোন ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে পানি আটকে থাকে। বর্তমানে এই
এলাকার সব ক’টি পানি নিষ্কাশনের ড্রেনই প্রায় ভরাট হয়ে সরু হয়ে আছে বলে
জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এবিষয়টি সুরাহার জন্য বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসক ও
কুমিল্লা সিটি মেয়র বরাবর লিখিতভাবে জানানো হলেও কোন ফল পায়নি ছায়াবিতান
এলাকাবাসী। ছায়াবিতান হাউজিং সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম জানান,
ঠাকুরপাড়া, বিসিক শিল্পনগরীসহ সিটির বিভিন্ন এলাকার বৃষ্টির পানি এই
এলাকার উপর দিয়ে যায়। কিন্তু এখান থেকে পানি সরবার কোন সুব্যবস্থা না থাকায়
স্থানীয়রা দীর্ঘদিন যাবত জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে
বিভিন্ন সময় জানিয়েও এখনো কোন ফল পাইনি।
স্থানীয় বাসিন্দা জেসমিন
আক্তার জানান, এভাবে পানি জমে থাকলে বাসা থেকে বের হয়ে চলাচল করা খুব
কষ্টকর। কোন প্রয়োজনে দোকানপাটেও যাওয়া সম্ভব হয় না।
স্থানীয় ব্যবসায়ি
সাইফুর রহমান বলেন, একবার বৃষ্টি হলে তিন চারদিন রাস্তাঘাট বাড়িঘর পানির
নিচে তলিয়ে থাকে। বাচ্চারা ঘর থেকে বের হয়েই রাস্তায় জমে থাকা ময়লা পানিতে
পরে। ডোবার পানি ড্রেনের পানি সব এক হয়ে ঘরের সামনে। বৃষ্টির সময় তো ঘরেও
ঢুকে থাকে।
ছাযাবিতান এলাকায় খাবার সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্টানের ষ্টাফ
ফয়সাল জানান, গত কয়দিন এই এলাকায় সাইকেলে করে খাবার ডেলিভারি দিতে আসি।
পুরো এলাকাই পানিতে ডুবে আছে। পানিতে পা ভিজলেই পা চুলকায়। এই এলাকার যারা
থাকেন তাদের কি অসহনীয় কষ্ট বলে বুঝানো যাবে না।
মোতাহের হোসেন নামে
আরেকজন জানান, মঙ্গলবার দুপুরেও মসজিদের বারান্দায় পানি আটকে ছিলো। পরে
কয়েকজন মিলে পানি সেঁচে বের করি। না হয় ময়লা পানি ডিঙিয়েই মুসল্লিদের
মসজিদে আসতে হচ্ছিলো।
দক্ষিণ দূর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল হক
বলেন, দু’এক বছর আগে জাইকার একটি প্রকল্প থেকে এই জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ
নেয়া হয়, কিন্তু পরে আর এটার খোঁজ খবর পাইনি। একটি মাস্টার প্ল্যান করে এই
এলাকার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করলে এই ভোগান্তির শেষ হবে না।