রণবীর ঘোষ কিংকর:
সদ্য
প্রয়াত সাংসদ অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এর শূন্য আসনের (কুমিল্লা-৭)
উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেট নিশ্চিত করতে দলীয় ফরম জমা দিয়েছেন সাত
প্রার্থী। দলীয় মনোনয়ন পেতে সব প্রার্থীই উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের সাথে
লবিং-তদবীর চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সাত প্রার্থীর মধ্যে মাঠ পর্যায়ে দুই
হেভিওয়েট প্রার্থীকে নিয়ে সার্বক্ষনিক উৎকন্ঠায় আছেন তাদের সমর্থিত
নেতা-কর্মীরা।
৮ সেপ্টেম্বর শেষ দিন পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সাত প্রার্থী স্ব-স্ব বৃত্তান্ত
লিখে মনোনয়ন ফরম জমা দেন।
তারা হলেন- কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ
সহ-সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য
ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, সদ্য প্রয়াত সাংসদ অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ তনয় উপজেলা
আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটু, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগ
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদ উল্লাহ, জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য ও কুমিল্লা
উত্তর জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজনীন আক্তার, চান্দিনা উপজেলা
কৃষকলীগ আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. শাহজালাল মিঞা শিপন এবং জেলা আওয়ামীলীগ
সদস্য ও উপজেলা যুবলীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন আজাদ ও আওয়ামীলীগ
নেতা মুজিবুর রহমান দিলরাজি।
তবে ওই সাত প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশ
প্রার্থীরই মাঠ পর্যায়ে পদচারণা তেমন না থাকায় বেশি আলোচনায় আছেন ডা. প্রাণ
গোপাল দত্ত ও মুনতাকিম আশরাফ টিটু। উপজেলার হাট-বাজার অফিস প্রাঙ্গণ,
দোকান-পাট এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের চা-দোকানের আড্ডাতেও ওই দুই প্রার্থীকে
নিয়ে নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মাঝে হাজারও জল্পনা-কল্পনা।
চান্দিনা
থেকে পাঁচবার নির্বাচিত সদ্য প্রয়াত সাংসদ অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এর
অনুসারীরা প্রাণপনে চাচ্ছেন পুত্র মুনতাকিম আশরাফ টিটু’র হাতেই থাকুক নৌকার
বৈঠা। আবার ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের অনুসারীরা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ
নির্বাচনে অনেকটা নিশ্চিত থাকার পর বঞ্চিত করা হয় প্রাণ গোপাল দত্তকে।
মৃত্যুর আগে শেষ সম্মান দেওয়া হয় অধ্যাপক আলী আশরাফ এমপিকে। এবার ডা. প্রাণ
গোপাল দত্তের হাতেই নৌকা তুলে দিবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
এদিকে, দলীয়
প্রার্থী চূড়ান্ত করতে রাজধানী ঢাকায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন
বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত না হতেই নানা গুঞ্জন ছড়াচ্ছে নেতা-কর্মীরা। উৎসুক
নেতা-কর্মীরা যে যার মতো উর্ধ্বতন নেতাদের কাছে ফোন করে সার্বক্ষনিক
যোগাযোগ রাখছেন। কে পাচ্ছেন নৌকার টিকেট? এমন প্রশ্নে ফোনে দ্রুতি ঘটনাচ্ছে
ওই দুই প্রার্থীর সমর্থিত নেতা-কর্মীরা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সিংহভাগ
নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে সাংগঠনিক ঐক্য গড়ে তুলে পিতার স্থলাভিষিক্ত হতে
মরিয়া হয়ে উঠেছেন তনয় মুনতাকিম আশরাফ টিটু। উপজেলা জুড়ে ব্যানার, ফেস্টুন
সাঁটিয়েছেন তার সমর্থিত নেতা-কর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও
সরব তারা। অপরদিকে, গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হোঁচট খেয়ে নিরব ডা.
প্রাণ গোপাল দত্ত সমর্থিত নেতা-কর্মীরা। তবে এ উপ-নির্বাচনে ডা. প্রাণ
গোপাল দত্তের মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যশা অনেক বেশি তার সমর্থিত নেতা-কর্মীদের।
ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত সমর্থিত জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও সাবেক উপজেলা
আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী গোলাম দস্তগীর পাপন জানান, বীর
মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ গোপাল দত্ত শুধু চান্দিনারই নয় দেশে সম্পদ। ২০০১ সাল
থেকে এ পর্যন্ত চান্দিনা উপজেলার যে সকল ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ণ করা হয়নি
সেইসব ত্যাগী নেতাদের আশ্রয়স্থল তিনি। আমাদের বিশ্বাস অধ্যাপক ডা. প্রাণ
গোপাল দত্তকেই নেত্রী মূল্যায়ণ করে নৌকার মাঝি হিসেবে মাঠে পাঠাবেন।
মুনতাকিম
আশরাফ টিটু সমর্থিত উপজেলা আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক এনায়েত
উল্লাহ ভূইয়া জানান, অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ দীর্ঘ ৫৮ বছর রাজনীতি করে তিলে
তিলে চান্দিনাকে গড়ে তুলেছেন। ওনার উত্তরসূরী হয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের হাল
ধরেছেন মুনতাকিম আশরাফ টিটু। তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি হয়ে সংগঠিত
করেছে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠন। নেত্রী
তৃণমূল বিবেচনা করে এবং তারুণ্য নির্ভর আগামী ভবিষ্যত চিন্তা করে টিটুকেই
মনোনয়ন দিবেন।
এদিকে, অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত’র সাথে যোগাযোগ করলে
জানান, ‘দলের মনোনয়ন নিয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। আর মনোনয়ন দেওয়া না
দেওয়া সম্পূর্ণ জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে’।
প্রয়াত অধ্যাপক মো. আলী
আশরাফ এমপি পুত্র ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটু জানান,
‘জননেত্রী শেখ হাসিনা অতীতেও তৃণমূলের সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
নির্বাচনী বোর্ড সব সময় তৃণমূলকেই গুরুত্ব দিয়ে নৌকার টিকেট তুলে দেন। এবার
চান্দিনা উপজেলা আওয়ামীলীগ, ১৩টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ইউনিট আওয়ামীলীগ,
অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন একক প্রার্থী হিসেবে আমার নাম প্রস্তাবনা করে দলের
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেরণ করেছেন। আমি বিশ্বাস করি তৃণমূলের সিদ্ধান্তই
প্রাধান্য পাবে। এজন্য মনোনয়নের বিষয়ে আমি আশাবাদি।’
দলের মনোনয়ন
প্রত্যাশী কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদ
উল্লাহ বলেন- ‘আমি ছাত্র জীবনে শিবিরের বিরুদ্ধে এবং স্বৈরাচার এরশাদ
বিরোধী আন্দোলনে জীবন বাজি রেখে অংশ গ্রহণ করি। একাধিকবার হামলার শিকার হই।
আমি শতভাগ আশাবাদি। অপর প্রার্থীদের গুণাগুণ বিবেচনায় নিশ্চয়ই নেত্রী
আমাকে মূল্যায়ণ করবেন।’
মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়াীলীগ সদস্য নাজনীন
আক্তার জানান, নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন জননেত্রী
শেখ হাসিনা। আমি জনগণের ভালবাসা নিয়ে আওয়ামীলীগের কাছে মনোনয়ন চেয়েছি। আমার
বিশ্বাস নেত্রী আমাকে যথাযথ মূল্যায়ণ করবেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশী এড.
শাহজালাল মিঞা শিপন জানান, ২০০১ সালে আমার বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাদা
মিঞা খোকা ছিলেন চান্দিনার নির্যাতিত আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের
আশ্রয়স্থল। তখন থেকে উপজেলা আওয়ামীলীগ, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের যত
নেতা-কর্মী মামলায় জড়িত ছিলেন তাদের মামলাগুলো আমি বিনা পয়সায় পরিচালনা
করেছি। আমার বড় ভাই মৃত্যুবরণ করেছেন আমার ভাইকে যথাযথ মূল্যায়ণ করা হয়নি,
আমার বিশ্বাস আমাকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুলাই
চান্দিনা থেকে পাঁচবার নির্বাচিত সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আলী
আশরাফ এর মৃত্যুতে কুমিল্লা-৭ সংসদীয় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন
কমিশন। গত ২ সেপ্টেম্বর এ আসনের উপ-নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করে
নির্বাচন কমিশন। আর তফসিল ঘোষনার একদিন পর ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ সেপ্টেম্বর
পর্যন্ত দলীয় মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমা নেয় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। ১৩
সেপ্টেম্বর নির্বাচনী মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিন এবং আগামী ৭ অক্টোবর এ
আসনে ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা রয়েছে।