শাহীন আলম, দেবিদ্বার ||
বিদ্যালয়ের
দেয়ালে দেয়ালে বাংলা-ইংরেজি বর্ণ, গণিতের বিভিন্ন চিহ্ন, আকার-আকৃতি,
নামতার ধারণা, বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কারের ছবি, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি,
সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের ছবি, পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন ছড়া, জাতীয় ফলমুল, দেশ
প্রকৃতি, ছোটদের মিনা কার্টুনসহ নানা মণীষীর ছবি লিখে সাজানো হয়েছে।
পাঠ্যবইয়ের সব পড়া আছে ওইসব দেয়ালে। দেয়ালে লেখা গল্প আর খেলার ছলে
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পাঠদানেও প্রস্তুত শিক্ষকরা। এমনিভাবেই
রঙ-তুলির আঁচড়ে স্কুলগুলোকে শিশুবান্ধব করার সব রকম চেষ্টা শেষ চেষ্টা
চলছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের দেয়ালে দেয়ালে যেন পাঠ্যবই। ইউএনও রাকিব
হাসানের এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ আর প্রচেষ্টায় বদলে গেছে দেবিদ্বার উপজেলা
প্রায় ১৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ। বৃহস্পতিবার সকালে
উপজেলার বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
বিদ্যালয়ের
শ্রেণিকক্ষে রয়েছে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা রঙিন বর্ণ, নামতার ধারণা,
বাংলা-ইংরেজি মাস, সপ্তাহের নাম, গণিতের সংখ্যা ও বিভিন্ন চিহ্ন, বিজ্ঞানের
বিভিন্ন আবিষ্কারের ছবি, বঙ্গবন্ধুর ছবি, সাত বীরশ্রেষ্ঠের ছবি, বিভিন্ন
ফুল-ফল ও পশু-পাখির ছবি, বিভিন্ন ছড়া এবং মূল ভবনে আছে মনীষীদের বাণী ও
সচেতনতামূলক বিভিন্ন লেখা। পড়ালেখায় আকৃষ্ট করতে শিক্ষা বিভাগের পরামর্শে
ব্যতিক্রমী এসব উদ্যোগ।
ওয়াহেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৈল্পিক
কারুকাজ দেখেতে এসেছে ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী মীম, তাকিয়া ও ২য় শ্রেণীর ছাত্রী
মাহিনুর। তারা এ প্রতিবেদককে জানায়, অনেকদিন পর স্কুল খুলবে। স্কুলে দেয়ালে
আর্ট করা হচ্ছে শুনে দেখতে এসেছি। ক্লাসরুমগুলো দেখে খুব ভালো লাগছে।
শিক্ষক
সমিতির সভাপতি মো. কামরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, প্রায় দেড় বছর পর স্কুল
খুলছে। এ উপজেলায় ১৮৫টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫০টি’র দেয়াল অংকন সম্পন্ন
হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি শ্রেণী কক্ষের দেয়ালে
লেখা বর্ণ, ছবি ও চিহ্নগুলো শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে সহযোগী হবে। সাজানো
বিদ্যালয় ভবন দেখে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়তই নতুন নতুন বিষয় জানতে পারবে।
এতে শিক্ষার্থীরা ছোট বেলা থেকেই শিল্পমনা মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে, জানবে
দেশ-প্রকৃতি সর্ম্পকেও। সরেজমিনে দেবিদ্বার ৩৬ নং সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, রঙ তুলির ছোঁয়ায় বিদ্যালয়ের দেয়ালগুলো এখন যে
কারো দৃষ্টি কাড়বে। স্কুলের আঙিনায় স্থাপন করা হয়েছে শহীদ মিনার। অনেক
বিদ্যালয়ের দেয়াল যেন রংধনুর সাতরঙে রাঙানো। মাঝে মাঝে বিশ্বকবি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আঁকা ছবি। শিক্ষার্থীরা
স্কুলে প্রবেশের আগে এসব ছবির মণীষীদের সাথে পরিচিত হচ্ছে। এতে শেখা ও
জানার আগ্রহ বাড়ার পাশাপাশি শিশুরা লেখাপড়ায় মনোযোগী হবে।
দেবিদ্বার
উপজেলা পরিষদ স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, চারুশিল্পীরা দেয়ালে দেয়ালে এঁকেছেন
ছোটদের মিনা কার্টুন, ফুল-ফল ও পশু-পাখির ছবি। এছাড়া প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে
আঁকা হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র ও গুণীজনের প্রতিকৃতি। লেখা আছে নানা ধরণের
নীতিবাক্য। কোথাও পাশেই দাঁড়িয়ে গভীর মনযোগ সহকারে ছবি আঁকা দেখছে শিশু
শিক্ষার্থীরা। এখন পর্যন্ত উপজেলার ১৫০টি স্কুলে এমন আঁকিবুঁকির কাজ
সম্পন্ন হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গাজী মো. আনোয়ার হোসেন
বলেন, শিশুদের শৈশব থেকে শৈল্পিক ও আক্ষরিক অর্থেই সাতরঙা করতে উদ্যোগ
নেওয়া হয়েছে। দেবিদ্বারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে মানসম্মত ও
শিশুবান্ধব দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে কাজ চলছে।
ইউএনও রাকিব হাসান বলেন,
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শিশুবান্ধব করার কাজ চলছে। শিশুরা যেন আনন্দঘন
পরিবেশে লেখাপড়া করতে পারে সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে উপজেলার
সবগুলো স্কুলের ভিতরে বাইরে সংস্কার করে রঙ-তুলির কাজ চলছে। বিবর্ণ, মলিন
স্কুলগুলো হয়ে উঠছে ঝকঝকে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের
সুরক্ষার জন্য ইনফারেট থার্মোমিটার, অক্সিমিটার, মাস্ক, হাত ধোয়ার
ব্যবস্থা করাসহ ইতোমধ্যে সবগুলো স্কুল-পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ
হয়েছে।