
উচ্চ
আদালত থেকে এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত এসেছে। এই রায়ের মাধ্যমে নাগরিক সমাজের
দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়েছে। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ দেশে শিক্ষার্থীদের
পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ জন্য সরকারকে
একটি ‘শিক্ষা বিশেষজ্ঞ কমিটি’ গঠন করতে বলা হয়েছে। সরকার কমিটি গঠন করে
দিলে এতে সংযোজন-বিয়োজন করে আদালত তা চূড়ান্ত করবেন। এই কমিটি সুপারিশ করবে
কোন পর্যায়ে কোন স্তরের পাঠ্যসূচিতে ভাষণটি অন্তর্ভুক্ত হবে। ২০১৭ সালে
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদের করা রিট
আবেদনে ৭ই মার্চকে কেন ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, তা
জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক
অবিস্মরণীয় দিন ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার
মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে রচিত হয়েছিল রাজনীতির এক ঐতিহাসিক মহাকাব্য।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এই কথাগুলো উচ্চারণ করে কার্যত
স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ৭ই মার্চের এমন ঘোষণা শুধু বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই
দেওয়া সম্ভব ছিল। মাত্র ১৯ মিনিটের এই একটি ভাষণ জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে
উজ্জীবিত করেছিল। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেসকো এই ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল
হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
২০১৭ সালে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যে রুল
জারি করেছিলেন হাইকোর্ট, তাতে জানতে চাওয়া হয়েছিল, একাত্তরের ৭ই মার্চ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্থানে, যে মঞ্চে ভাষণ
দিয়েছিলেন, যে স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ, মুক্তিযোদ্ধাদের
অস্ত্র সমর্পণ এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সংবর্ধনা
দেওয়া হয়েছিল, সেই স্থানে মঞ্চ পুননির্মাণ কেন করা হবে না। ৭ই মার্চের সেই
ঐতিহাসিক ভাষণের সময় বঙ্গবন্ধুর ‘স্পিচ মোডের’ (তর্জনী উঁচিয়ে ভাষণের
সময়কার ভঙ্গি) ভাস্কর্য নির্মাণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, রুলে তা-ও
জানতে চাওয়া হয়। সেই রুলের শুনানিতে রিট আবেদনকারীর সম্পূরক আবেদনে গত ২৫
ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট ৭ই মার্চকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ ঘোষণা করে গেজেট
প্রকাশের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ এরই মধ্যে কার্যকর করেছে সরকার। এ ছাড়া
মুজিববর্ষের মধ্যেই দেশের সব জেলা-উপজেলা কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল
স্থাপনের নির্দেশ দেন আদালত। এই নির্দেশও বাস্তবায়ন হচ্ছে।
‘রাজনীতির
কবির অমর কবিতা’ ৭ই মার্চের ভাষণ। অনন্য, অতুলনীয় ও ঐতিহাসিক ভাষণটি ছিল
একটি জাতিরাষ্ট্র নির্মাণের মৌন শক্তি ও রাজনৈতিক দর্শন। সেই ভাষণটি
পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তটি অবশ্যই ঐতিহাসিক। আদালতের এই
সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই।