Published : Monday, 13 September, 2021 at 12:00 AM, Update: 13.09.2021 1:57:01 AM
তানভীর দিপু ||
কুমিল্লা
নগরীর নেউরা এলাায় কামাল হোসেনের গ্যারেজে ইজিবাইক মিস্ত্রীর কাজ করে তারই
ছোট ভাই ১২ বছর বয়সী কাউসার। দেড় বছর আগে করোনায় স্কুল বন্ধ হওয়ায় পড়াশুনা
ছেড়ে কাজে লেগে গেছে। কুমিল্লার গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
করোনায় স্কুল বন্ধের আগে চতুর্থ ছাত্র কাউসার এখন আর যেতে চায় না স্কুলে।
আয় রোজগারের কাজে আগ্রহী কাউসারের এখন পড়াশুনার প্রতি বিরক্তি। স্কুল খোলার
প্রথম দিনে গতকাল রবিবার বিকালে নগরীর নেউরা এলাকার ইজিবাইকের গ্যারেজে
কথা হয় কাউসারের সাথে। সে জানায়, কাজ করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এখন আর
স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে না। এখন কাজই করবো।
একই অবস্থা নেউরা এম আই
উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র দ্বীন ইসলাম রাব্বির। করোনায় স্কুল
বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবাারিক অস্বচ্ছলতার কারনেই তাকে থেকে দেয়া হয়েছে
ওয়ার্কশপের কাজে। স্কুলে যেতে ইচ্ছে করলেও কাজের কারণে যেতে পারছে না
স্কুলে। তার স্কুল নেউরা এম আই উচ্চ বিদ্যালয়ের গেইটের সামনেই একটি
ওয়ার্কশপে কাজ করে সে। রাব্বি জানায়, বাবা ইজিবাইক চালক- মা গৃহিণী। করোনায়
স্কুল বন্ধ হবার পর বাড়ি থেকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ওয়ার্কশপের কাজ শিখতে। তারপর
থেকেই সে লোহার তৈরী বিভিন্ন জিনিসপত্র মেরামতের কাজ করে থাকে।
রাব্বি
আরো জানায়, অনেকদিন পর স্কুল খুললেও সে যেতে না পারায় তার মন খারাপ। তার
সাথে অনেক বন্ধুই গিয়েছে স্কুলে। আবার অনেকেই যায়নি। যারা যায়নি তাদের
মধ্যে বেশির ভাগই ইপিজেডসহ বিভিন্ন দোকানে বা গ্যারেজে কাজে লেগে গেছে।
স্কুল
যেতে অনিচ্ছুক নেউরার ইজিবাইক মিস্ত্রী কাউসারের ভাই কামাল হোসেন জানান,
করোনায় কত দিন স্কুল বন্ধ ছিলো। এছাড়া বাসায় কোন কাজকর্মও ছিলো না। একারনে
কাউসারকে কাজে নিয়ে আসছি। এখন আবার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলবো , তারা যদি
চায় তাহলে আবার স্কুলে যাবে সে।
করোনা মধ্যে দেড় বছর পর স্কুল খুললেও
শহরতলী এবং গ্রামের এসব ঝরে পরা এবং অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা
তাদের আবার স্কুলে পাঠানো নিয়েও আছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে। একদিকে বাড়তি আয়-
অন্যদিকে সন্তানের স্কুল নিয়েই এই দ্বিধা। কুমিল্লা শিক্ষা বিভাগের মতে,
করোনার কারনে দীর্ঘ বিরতিতে পুরো জেলায় ৫-১০ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পরতে পারে। তবে ঝরে পরা বা অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের
তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। দেড় বছর পর স্কুল খুললেও বেশির ভাগ অস্বচ্ছল ও
দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা আসেনি স্কুলে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঝরে
পরা এসব শিশুদের বেশির ভাগই লেগে গেছে পরিবারের বাড়তি আয়ের কাজে। কুমিল্লা
শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছে, ধীরে বাড়বে শিক্ষার্থী উপস্থিতির সংখ্যা।
আর যারা স্কুলে আসছে না তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
জেলা শিক্ষা
অফিসার আবদুল মজিদ জানান, যারা কাজ করতে চান- তারা চাইলে সরকারি কারিগরি
প্রতিষ্ঠানেও ভর্তি হয়ে কাজ দক্ষতা অর্জন করতে পারে। আর যারা স্কুল থেকে
ঝরে পরেছে এবং স্কুলে আসতে অনিচ্ছুক তাদের জরিপ এবং তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
প্রতিটি স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যেন তাদের
ছাত্রছাত্রীদের খোঁজ খবর নেয় এবং চেষ্টা করা হয় তাদেরকে স্কুলে ফেরানোর।
বেসরকারি
সংস্থার ব্র্যাক এর একটি প্রাথমিক জরিপে উঠে এসেছে করোনাকালীন দারিদ্র্যতা
ও অস্বচ্ছলতার কারনে কুমিল্লা জেলায় আনুমানিক ৪০ হাজার শিক্ষার্থী স্কুল
থেকে ঝরে পরতে পারে। এর মধ্যে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ৬ হাজার।
মহামারি করোনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া বিদ্যালয় কিংবা ঝরে পড়ার শিক্ষার্থীদের
সংখ্যা নির্ধারণে উন্নয়নমূলক সংস্থা ব্র্যাকের সহায়তায় সরকারি ভাবে কাজ
করছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো ।