ফাইভ-জি সেবা চালু করতে তরঙ্গ (স্পেক্ট্রাম) বরাদ্দ পেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম প্রতিষ্ঠান টেলিটক। প্রতিষ্ঠানটি তরঙ্গ বরাদ্দ পেতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিতে আবেদন করলে সর্বশেষ কমিশন বৈঠকে (২৫৪তম) টেলিটকের অনুকূলে ৩ দশমিক ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডে (৩৩৪০-৩৪০০ মেগাহার্জ) ৬০ মেগাহার্জ তরঙ্গ শর্ত সাপেক্ষে বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও এয়ারটেল দেশে ফোর-জি সেবা চালু করে। তারও প্রায় ১০ মাস পরে টেলিটক সীমিত পরিসরে (রাজধানীকেন্দ্রিক) ফোর-জি সেবা চালু করে। এখন অপারেটরটি ফাইভ-জি সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জানা যায়, বর্তমান সরকার নির্বাচনী ইশতেহার-২০১৮’ র লক্ষ্য ও পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশব্যাপী ২০২১-২০২৩ সালের মধ্যে ফাইভ-জি সেবা চালু করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদিও এরই মধ্যে কমিশন ২০১৮ সালে সফলতার সঙ্গে ফাইভ-জির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালায়।
সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি বছরের ২ জুন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক সভায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা টেলিটককে ঢাকা শহরে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভ-জি চালু করতে ৪০ থেকে ৬০ মেগাহার্জ তরঙ্গ বরাদ্দ দিতে নির্দেশনা প্রদান করেন। পরবর্তী সময়ে বিটিআরসির স্পেক্ট্রাম বিভাগ আয়োজিত এক বৈঠকে টেলিটককে শর্ত সাপেক্ষে ৬০ মেগাহার্জ তরঙ্গ ফেরতযোগ্য মর্মে বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
১০০ চেয়ে বরাদ্দ ৬০ মেগাহার্জ
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টেলিটককে আনুষ্ঠানিকভাবে বিটিআরসিতে আবেদন করতে বলা হয়। টেলিটক গত ১৭ আগস্ট ৩ দশমিক ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডে ১০০ মেগাহার্জ তরঙ্গ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করে। যদিও আবেদনে ১০০ মেগাহার্জ তরঙ্গ বরাদ্দের প্রয়োজন, সময়, নেটওয়ার্ক পরিকল্পনা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ কোনও দলিলপত্র সংযুক্ত না করায় ৬০ মেগাহার্জ তরঙ্গ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়।
জানা যায়, এর আগে ৩ দশমিক ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডে বাংলাদেশ পুলিশের অনুকূলে ৩০ মেগাহার্জ (৩৩৭০-৩৪০০) তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা ফাইভ-জি সেবার জন্য নির্বাচিত তরঙ্গ ব্যান্ডের আওতাভুক্ত। এরইমধ্যে কমিশন বাংলাদেশ পুলিশের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া তরঙ্গ ৩৩১০-৩৩৪০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে স্থানান্তর করার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। কমিশন রিপোর্ট বলছে, ওই তরঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ এখনও কোনও বেতার যন্ত্রপাতি স্থাপন করেনি।
টেলিটকের ফাইভ-জি তরঙ্গ বরাদ্দর বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, টেলিটককে ৬০ মেগাহার্জ তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। টেলিটক নিজেদের উদ্যোগে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ৫টি এলাকায় (সাইট) প্রাথমিকভাবে ফাইভ-জি সেবা চালু করবে। পরবর্তীকালে একটি ছোট প্রকল্পের আওতায় ঢাকাকেন্দ্রিক ২০০টি সাইটে এই সেবা চালু করা হবে।
ডিসেম্বরের মধ্যে ফাইভ-জির নিলাম
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশে ফাইভ-জির জন্য তরঙ্গ রয়েছে ৪৬০ মেগাহার্জ। টেলিটককে দেওয়ার পরে আরও থাকবে ৪০০ মেগাহার্জ তরঙ্গ। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ফাইভজির নিলাম আয়োজন করা হবে। সরকারের যেহেতু প্রতিশ্রুতি রয়েছে ২০২১ সালে ফাইভ-জি, ফলে এই বছরের মধ্যে ফাইভ-জি চালুর কাজটি শেষ করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা টেক-নিউট্রালিটি দেব অর্থাৎ ফাইভ-জি তরঙ্গ নিয়ে এই নেটওয়ার্কের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি এই তরঙ্গ দিয়ে টুজি, থ্রিজি, ফোরজি সেবাও দেওয়া যাবে।