
করোনাভাইরাসের
 সংক্রমণ কমায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে শুরু করলেও নতুন করে দুশ্চিন্তার
 কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু। গত কয়েক দিনে রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গুর 
প্রকোপ বেড়েছে। গত আগস্ট মাসে এ মৌসুমের সর্বোচ্চ সাত হাজার ৬৯৮ জন ডেঙ্গু
 নিয়ে হাসপাতালে এসেছিল। আর এ রোগে মৃত্যু হয়েছিল ৩৪ জনের। চলতি মাসের 
প্রথম ১০ দিনে তিন হাজার ২০০ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
 গত রবিবার রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে ভর্তি ছিল এক হাজার 
৭৯ জন রোগী। এসব রোগীর বেশির ভাগই শিশু-কিশোর। জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে 
বলা হয়েছে, গত রবিবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া 
৩১৯ রোগীর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৫.৮ শতাংশ রোগীর বয়স এক থেকে ১০ বছরের মধ্যে। 
২২.৭ শতাংশের বয়স ২১-৩০ বছর, ১৯.১ শতাংশের বয়স ১১-২০ বছর, ১৬ শতাংশের বয়স 
৩১-৪০ বছর, ৬.৩ শতাংশের বয়স ৪১-৫০ বছর, ৫.৯ শতাংশের বয়স ৫১-৬০ বছর এবং ষাট 
বছরের ওপরে রয়েছে ৪.৩ শতাংশ রোগী। প্রকাশিত খবরে আরো বলা হয়েছে, চলতি মাসে 
ডেঙ্গুর প্রকোপ গত মাসের চেয়েও দ্রুতগতিতে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। এ বছরে এখন 
পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ সাত হাজার ৬৯৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয় গত 
মাসে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দুটি মহামারি যদি একত্রে চলমান থাকে, তাহলে 
মানুষের জীবনের জন্য একটি প্রবল হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। আবার করোনাভাইরাসের 
সঙ্গে ডেঙ্গু রোগের উপসর্গ মিলে যাওয়ায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকে 
কভিড আক্রান্ত হয়েছেন বলেও ধরে নিচ্ছেন। ফলে জটিলতা আরো বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা 
বলছেন, এই বছর এপ্রিল ও মে মাস থেকেই বেশ বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত,
 তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা এই তিনটা এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য সহায়ক বিধায় 
এবার ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি হতে পারে এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের ছিল। তাঁরা 
ধারণা করছেন, সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবটা বেশি থাকবে। 
এদিকে বড় আশঙ্কার কথাটি জানিয়েছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, 
বিসিএসআইআর। তাদের একটি গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের রোগীদের মধ্যে তারা 
ডেঙ্গুর নতুন সেরোটাইপ বা ধরন ডেনভি-৩-এ ঢাকার বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি 
আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেনভি-১ ও ২-এর বিরুদ্ধে মানুষের রোগ 
প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু নতুন এই ধরনটি আগের চেয়ে অনেক বেশি 
ভয়ংকর।
ডেঙ্গু রোগীর বিস্তার খুব দ্রুত ঘটছে। বিশেষজ্ঞরা সবাইকে সতর্ক 
থাকতে বলছেন। শুধু করোনা নিয়ে থাকলে হবে না, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আরো 
জোরালোভাবে কাজ করতে হবে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে 
হবে। একই সঙ্গে সুরক্ষার বিষয়ে মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে। জ্বর হলেই 
করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু পরীক্ষা করাটা জরুরি।