কুমিল্লার বাঙ্গরায় জুমার খুতবার পূর্বে আযান (সানি আযান) দেওয়া নিয়ে মুসল্লিদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আবু হানিফ খান (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আরো অন্তত ১১ জন আহত হয়েছে। গুরুতর দুইজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। আহত অন্যান্যদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন কুড়াখাল বাইতুন নূর কেন্দ্রিয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ শাহীন ভুইয়া নামের একজনকে আটক করেছে। সংঘর্ষের পর আরো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে ওই এলাকায়।
মসজিদের মুসল্লিসহ এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুড়াখাল বাইতুন নূর কেন্দ্রিয় জামে মসজিদটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইমামের সামনে সানি আযান দেওয়া হয়। গতকাল শুক্রবার দরজায় সানি আযান দিতে গেলে প্রতিবাদ করেন মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি হাবিব খান। তিনি মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল মালেকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া মাত্রই একদল লোক ধারালো ছুরি, রামদা, লোহার রড, টেটা বল্লম, লাঠিসোটা নিয়ে নিরীহ মুসল্লিদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। হামলায় মসজিদের ভেতরেই রক্তাক্ত জখম হয়ে ১২ জন মুসল্লি আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার করে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে আবাসিক চিকিৎসক ডা: সিরাজুল ইসলাম মানিক ও কবর্তব্যরত ডাক্তার নাজিয়া আফরিন চাদনী আহত আবু হানিফ খানকে (৪৩) মৃত ঘোষণা করেন। সে ওই গ্রামের আবদু খানের ছেলে। এ সময় গুরতর আহত ইমন খান (২৫) ও আবুল খায়েরকে (৪০) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। অন্যান্য আহতরা হলেন- কুড়াখাল শাহসুফি সৈয়দ দাইম উল্লাহ হাফেজিয়া মাদরাসার হাফেজ বাইজিদ (২৮), শিক্ষক মোখলেছুর রহমান (২৫), মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি হাবিব খান (৪২), মুসল্লি মান্নান খান (৫৮), রেজাউল করিম (২৫) ও ইবরাহিম (২৭)।
খবর পেয়ে বাঙ্গরা বাজার থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এ ঘটনায় জড়িত শাহীন ভুইয়াকে আটক করলে উত্তেজিত পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। সে ওই গ্রামের মৃত ছালাম ভুইয়ার ছেলে। বর্তমানে এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ওই মসজিদে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
নিহত হানিফ খানের মা, স্ত্রী ও ৪ শিশু সন্তান রয়েছে। পুত্রের মৃত্যুর খবর পেয়েই বার বার মূর্চা যাচ্ছেন বৃদ্ধ মা আয়শা খাতুন। স্ত্রী আফরোজা বেগমের আহাজারিতে এলাকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠেছে। প্রতিবেশী কেউ তাদের কান্না থামাতে পারছে না।
বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে বলেন, জুমার নামাজের সানি আজান মসজিদের ভিতরে ও বাহিরে দেয়া নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে। এ ঘটনায় জড়িত একজনকে আটক করা হয়েছে। উক্ত বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ জানান, ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। যাকে আটক করা হয়েছে- তার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মামলা হবে।