ডজন
খানেক নিত্যপণ্যে ক্রেতাদের ভোগাচ্ছে টানা এক মাসের বেশি দিন ধরে। এর
মধ্যে অন্যতম ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি সপ্তাহেই বেড়েছে। এই সপ্তাহে কেজিতে
বেড়েছে ১০ টাকা। আর এক মাসের মধ্যে এই মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকার
মতো। ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি ব্রয়লার মুরগি এখন কিনতে হচ্ছে ১৫০ টাকার বেশি
দিয়ে।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবারের (১৬
সেপ্টেম্বর) তুলনায় শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে
প্রতি কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এদিকে শুধু
ব্রয়লার মুরগি নয়, পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০
টাকা পর্যন্ত।
শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে
দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫০-১৫৫ টাকা, যা
গত সপ্তাহে ছিল ১৪০-১৪৫ টাকা।
ব্যবসায়ীরা এ দিন পাকিস্তানি কক বিক্রি
করছেন কেজি ২৮০-৩০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৭০-২৮০ টাকা। এর দুই সপ্তাহ
আগে ছিল ২২০-২৩০ টাকা।
মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী
মহাররম আলী বলেন, বাজারে মুরগির চাহিদা বাড়লেও সে অনুযায়ী সরবরাহ নেই। বরং
খামারে মুরগির উৎপাদন কমেছে। এ কারণেই দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, কয়েকদিনের
ব্যবধানে পাইকারিতে সোনালী মুরগির দাম কেজিতে ১০০ টাকার মতো বেড়েছে। ফলে যে
মুরগি মাস খানেক আগে আমরা ২২০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি এখন সেই মুরগি ৩০০
টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সীমিত
আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছেন। রাজধানীর মানিকনগর এলাকায় বুয়ার কাজ করা সুফিয়া
বেগম বলেন, মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে গত এক মাস ধরে মুরগি খাওয়া ছেড়ে
দিয়েছেন তারা।
বাজারের তথ্য বলছে, মুরগির মতো গত এক মাস ধরে বাড়ছে ডিমের
দামও। যে প্রতি হালিতে ডিমের দাম বেড়েছে ৫ টাকারও বেশি। এ সপ্তাহে ডিমের
দাম বেড়েছে প্রতি ডজন ১০ টাকার মতো। ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিম বিক্রি
হচ্ছে ১১০-১২০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১০৫-১১০ টাকার মধ্যে। আর মুদি
দোকানে গত সপ্তাহে এক পিস ডিম বিক্রি হয় ৯ টাকা, এখন তা বেড়ে ১০ টাকা
হয়েছে। ব্যবসায়ীরা প্রতিপিস ডিম ১১ টাকাও বিক্রি করছেন।
এছাড়া গত এক
মাসে দেশি হলুদের দাম বেড়েছে ৬০ টাকার মতো। এক মাসে বড়দানার মসুর ডালের দাম
কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকার মতো। গত এক মাসে চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকার
মতো। খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রতি লিটারে ১৬ টাকা। পাম অয়েলের
(সুপার) দাম বেড়েছে প্রতি লিটারে ১৫ টাকার মতো। গত এক মাসে প্যাকেট ময়দার
দাম বেড়েছে কেজিতে ৮ টাকা। একইভাবে প্যাকেট আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৬ টাকার
মতো।
সরকারের হিসাবে গত এক বছরে পামওয়েল সুপার এর দাম বেড়েছে ৬৫ দশমিক
৮১ শতাংশ। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। দেশি হলুদের
দাম বেড়েছে ৫৫ দশমিক ১৭ শতাংশ।
এদিকে এখনও ভোক্তাদের মোটা চাল কিনতে
প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। একইভাবে চিকন চালের কেজি বিক্রি
হচ্ছে ৬৮ টাকা পর্যন্ত। এদিকে বাজারের তথ্য বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে
রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজির দামও বেড়েছে। রাজধানীর ব্যবসায়ীরা গত সপ্তাহের
মতো শীতের আগাম সবজি শিমের কেজি বিক্রি করছেন ১৪০ টাকা পর্যন্ত। গাজর ও
টমেটোর কেজি বিক্রি করছেন ১২০ টাকা। অবশ্য নতুন করে দাম বেড়েছে ঝিঙে,
চিচিঙ্গা, বরবটি, ঢেঁড়স, পটল, করলার। ঝিঙের কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি
হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০-৬০ টাকা। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০
টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০-৭০ টাকা। চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা
কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০-৫০ টাকা।
এছাড়া পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে
৫০-৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০-৫০ টাকা। ঢেঁড়সের কেজি পাওয়া যাচ্ছে
৬০-৭০ টাকার মধ্যে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০-৫০ টাকার মধ্যে। বরবটির কেজি
পাওয়া যাচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০-৭০ টাকা।
কাঁচা পেঁপের
কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা, কাঁচকলার হালি ২-৩০ টাকা, লাল শাকের আঁটি
২০-৩০ টাকা, মুলা শাকের আঁটি ১৫-২০ টাকা, কলমি শাকের আঁটি ৫-১০ টাকা করে
বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে
মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৩৮০ টাকা।
মৃগেল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে গড়ে ২৮০ টাকা। তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে
গড়ে ১৮০ টাকা কেজি দরে। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৬০০ টাকা।
পাঙ্গাশ বিক্রি হচ্ছে গড়ে ১৬০ টাকা।
বাজারে বড় (এক কেজির ওপরে) ইলিশের
কেজি বিক্রি হচ্ছে গড়ে ১৩০০ টাকা। মাঝারি আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৮০০
টাকা কেজি। ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৬০০ টাকা কেজি দরে।