মাসুদ আলম।।
বৈশ্বিক
মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে সৃষ্ট দরিদ্রতা ও পারিবারিক আর্থিক
অস্বচ্ছতার কারণে বই রেখে অনেক শিক্ষার্থী পুরোদমে কর্মজীবী শিশুতে পরিণত
হয়েছে। ঝড়ে পড়া এই শিশুদের পূণরায় স্কুলে ফেরাতে কাজ শুরু করেছে প্রাথমিক ও
গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো। করোনায় কুমিল্লায় ঝড়ে
পড়া ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ দিয়ে জেলার
প্রত্যেক উপজেলায় ৭০টি ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১২০টি উপানুষ্ঠানিক
প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলছে সরকার।
কুমিল্লা জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা
ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার ১৭ উপজেলার মধ্যে এই বিদ্যালয়ের তালিকা
থেকে বাদ পড়েছেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলা। এই তিন
উপজেলায় ঝড়ে পড়া শিশুদের শিক্ষায় সরকারের আলাদা প্রকল্প চলমান থাকায়
উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হবে না। বাকী সদর, বুড়িচং,
ব্রহ্মণপাড়া, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, লাকসাম, বরুড়া, দাউদকান্দি, হোমনা,
মেঘনা, তিতাস, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, ও চান্দিনা উপজেলায় ৭০টি করে এবং
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ১১‘শ উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক
বিদ্যালয় খোলার প্রক্রিয়া চলছে।
উন্নয়নমূলক সংস্থা ব্র্যাক এবং
কুমিল্লার প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, করোনায় সৃষ্ট
দরিদ্রতা ও পারিবারিক আর্থিক অস্বচ্ছতায় জেলায় প্রায় ৪০ হাজার শিশু বই রেখে
কর্মজীবী শিশুতে পরিণত হয়েছেন। পড়ালেখা ছেড়ে তারা কাজ শুরু করেছে হোটেল,
চা দোকান, গ্যারেজ এবং কলকারখানাসহ নানা ধরণের শিশু শ্রমে। করোনা মোকাবেলায়
গত দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধে পরিবারের দরিদ্রতা ও আর্থিক
অস্বচ্ছতার প্রভাব পড়ে বই রেখে কাজে যোগ দেওয়া এই শিশুদের উপর।
ঝড়ে পড়া
এই ৪০ হাজার শিশুদের মধ্যে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রায় ৬ হাজার।
এই শিশুদের মধ্যে অধিংকাশই পূণরায় স্কুলে না ফেরার শঙ্কা রয়েছে ।
এদিকে
ঝড়ে পড়া শিশুদের ফেরাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক
শিক্ষা ব্যুরোর উদ্যোগে প্রত্যেক উপজেলায় ৭০টি উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক
বিদ্যালয় স্থাপনে ‘আউট অব চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম’ এর মাধ্যমে সহায়ক
ভূমিকা রাখছে ব্র্যাক।
কুমিল্লা ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচীর আঞ্চলিক
ব্যবস্থাপক আশুতোষ চক্রবর্তী জানান, করোনা সংকটে শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়া
শিশুদের তালিকা করতে গিয়ে দেখা গেছে গত বছর শিক্ষার্থীরা যেপরিমান
এ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে যারা জমা দেয়নি তারা আর
বিদ্যালয়ে ফিরবে না। এরই প্রেক্ষিতে ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী ঝড়ে পড়া
শিক্ষার্থীদের জরিপ শুরু করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো। যেসব এলাকায় বিদ্যালয় বহির্ভুত শিক্ষার্থী
রয়েছে তার একটি ম্যাপিং করে শিক্ষার্থী যাচাই-বাছাই করে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী
চিহ্নিত করা হয়।
তিনি আরও জানান, জরিপে দেখা গেছে দীর্ঘ সময় বিদ্যালয়
বন্ধ থাকার কারণে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বেশি ঝরে পড়ার আশংকা রয়েছে।
জরিপে জেলায় ৪০ হাজার শিশুর একটি তালিকা করা হলেও, সেটি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে যাচাইয়ের কাজ চলছে। খুব শিঘ্রই একটি
পরিপূর্ণ ঝড়ে পড়ার তালিকা নিশ্চিত করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, ঝড়ে পড়া
শিশুদের স্কুলে ফেরাতে প্রত্যেক উপজেলায় চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তা ও
ইউপি চেয়ারম্যানদের উপস্থিতিতে অবহিতকরণ সভা করা হচ্ছে।
কুমিল্লা জেলা
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হক বলেন,
কুমিল্লায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরাতে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক
বিদ্যালয় খোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আর এ জন্য কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম,
সদর দক্ষিণ ও লালমাই ছাড়া বাকী ১৪ উপজেলায় ৭০টি করে ‘উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক
বিদ্যালয়’ স্থাপন ও ৭০জন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
উপজেলার পাশাপাশি
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে আরও ১২০টি স্কুল ও ১২০জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া
হবে। আর এ নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে ওই উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনের ৮ থেকে ১৪
বছর বয়সী আনুমানিক ৪০হাজার শিশু দ্বিতীয় বারের মত প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ
পাবে।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই
উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে শিক্ষক এবং প্রত্যেক উপজেলায় ৫জন
সুপারভাইজার নিয়োগ দেওয়া হবে। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১২০টি
স্কুলে শিক্ষক ও সুপারভাইজার নিয়োগ কমিটির সভাপতি’র দায়িত্বে থাকবো আমি
নিজেই। আর ১৪ উপজেলায় ৭০টি করে স্কুলে শিক্ষক ও সুপারভাইজার নিয়োগ কমিটির
সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন স্বস্ব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা। ঝড়ে
পড়া শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষর উদ্যোগ নেওয়া সরকারের এই প্রকল্প চলবে
আগামী ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।