মাসুদ আলম।।
কুমিল্লার
আদর্শ সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকার বাসিন্দা নিমি আক্তার। স্থানীয়
আসলাম খান উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সে। এক ভাই দুই বোনের মধ্যে
মিনি সবার ছোট। বাবা কুমিল্লার কোটবাড়িতে মুদি দোকান ব্যবসায়ী। চলতি
২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো। পরীক্ষা দেওয়ার খুব ইচ্ছে
থাকলেও গত জুন মাসে করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মাঝেই পরিবার মিনিকে
বিয়ে দিয়ে দেয়। সে আসলাম খান উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী হলেও কুমিল্লার শহরতলী
সুবরাতি শাহজাদী মোমোরিয়াল বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার
জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন।
পড়ালেখা বন্ধ করে কেন বিয়ে দেওয়া হলো জানাতে
চাইলে ভাই রাকিব জানান, বোনকে দিয়ে তারা চাকুরি করাবেন না, তাই বিয়ে
দিয়েছেন। এছাড়া অন্য কোন সমস্যা নেই।
সুবরাতি শাহজাদী মোমোরিয়াল
বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন,
নিমি নিশ্চিন্তপুর আসলাম খান উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো। এই
স্কুলের পরীক্ষার্থীরা আমার বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন
করেন। করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় গত জুন মাসে নিমিকে বিয়ে দিয়ে দেয় তার
পরিবার। বিয়ের সংবাদ শুনে তার পরিবারের সাথে নানা ভাবে যোগাযোগ করে অনুরোধ
করা হয়, বিয়ে না দিয়ে এসএসসি পরীক্ষাটি দেয়ানোর জন্য। কিন্তু তার পরিবার
কথা শুনেননি। মেয়েকে চাকুরি করাবেন না বলে পরিবার তাকে বিয়ে দিয়ে দিবেন।
এবং সর্বশেষ সেটিই হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু নিমি নয় তার বিদ্যালয়ের
নবম ও দশম শ্রেণির আরও একাধিক ছাত্রীর করোনার দীর্ঘ বন্ধের মাঝে বিয়ে হয়ে
গেছে। বিয়ে হয়ে যাওয়া ছাত্রীরা আর স্কুলে ফিরছেন না। এদিকে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর ১০ দিন অতিবাহিত হলেও ৩০ শতাংশ ছাত্রী এখনও ক্লাসে
অনুপস্থিত। এছাড়া শতকরা গড়ে ৩৫ ভাগ ছাত্রছাত্রী অনুপস্থিত।
এদিকে
করোনাকালে দীর্ঘ ছুটির পর ফের আনুষ্ঠানিক পাঠদান শুরু হলেও কুমিল্লা জেলার
৬০৫টি সরকারি ও আধা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিমির মতো বিপুল সংখ্যক
শিক্ষার্থী আর বিদ্যালয়ে ফেরেনি। করোনার কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে
যাওয়ায় শহরাঞ্চলের অনেক পরিবার গ্রামে চলে গেছে। সামর্থ্য না থাকায় সেখানেও
কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে পারেনি। আবার অনেক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে
গেছে, ছাত্ররা প্রবাসে কিংবা কর্মজীবনে ঢুকে পড়েছেন।
একাধিক স্কুল
প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, বিদ্যালয় খোলার মাত্র কয়েকদিন
হলেও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আলামত তারা দেখতে পাচ্ছেন। অনেক
শিক্ষার্থীর অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে না আসা এবং শিক্ষকদের সঙ্গে কোনও
যোগাযোগ না রাখা এবং এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ না করা।
সদর দক্ষিণ
উপজেলার কমলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো: মমিনুল ইসলাম জানান,
করোনার দীর্ঘ বন্ধ কাটিয়ে পূণরায় চালুর পর তার বিদ্যালয়ে নবম,দশম শ্রেণির
প্রায় ৩৫ ভাগ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত এখনও। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছাত্রী। তার
ধারণা করোনার দীর্ঘ বন্ধের পর ক্লাসে অনুপস্থিত এই শিক্ষার্থীরা ঝড়ে
পড়েছেন। আবার অনেক পরীক্ষার্থীসহ অনেক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। তারপরও তারা
অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
কুমিল্লা শহরতলীর আরেক স্কুল আলেকজান
মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মান্নান জানান, তার বিদ্যালয়ের
নবম,দশম এবং এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসে
এখনও অনুপস্থিত। শিক্ষকদের বিভিন্ন জনের মুখ থেকে শুনছেন অনুপস্থিত
শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। তারা আরও স্কুলে ফিরছেন
না। তবে এই ধরণের কোন তালিকা করা হয়নি।
এবিষয়ে কুমিল্লা জেলা মাধ্যমিক
শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল মজিদ জানান, কুমিল্লা জেলায় ৬০৫টি সরকারি ও আধা
সরকারি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। করোনায় দীর্ঘ বন্ধের পর উপজেলা এবং
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা বিভিন্ন উচ্চবিদ্যালয় পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনে
দেখা গেছে বিদ্যালয়ে গড়ে ৭০-৭৫ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে। প্রতিদিনই
স্বস্ব বিদ্যালয় তাদের প্রত্যেক ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি রেকর্ড করে
অনলাইনের মাধ্যমে কেন্দ্রে প্রেরণ করছেন।