যে কারণে শিক্ষক নিয়োগে দেরি
Published : Friday, 24 September, 2021 at 12:00 AM
দীর্ঘ অপেক্ষার পর গত ১৫ জুলাই ৫১ হাজার শিক্ষক নিয়োগের ফল প্রকাশ করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। কিন্তু প্রথমবারের মতো চালুকৃত বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের ভেরিফিকেশন সিস্টেমের কারণে দীর্ঘসূত্রতায় পড়তে যাচ্ছে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া।
জানা গেছে, সরকারি হাইস্কুলে নিয়োগের লক্ষ্যে ২১৫৫ প্রার্থীকে গত ২৯ ডিসেম্বর নিয়োগের সুপারিশ করে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। দীর্ঘ সময় ধরে ভেরিফিকেশন শেষে বর্তমানে এসব প্রার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। অন্যদিকে বেসরকারি হাইস্কুলের শূন্যপদে নিয়োগের জন্য জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ ৩৮ হাজার ২৮৬ প্রার্থীর নাম সুপারিশ করেছে।
বিধান অনুযায়ী, এনটিআরসিএ থেকে সুপারিশপ্রাপ্ত এসব প্রার্থীদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু এই প্রথমবারের মতো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সুপারিশপ্রাপ্তদের ব্যক্তিগত জীবনের তথ্য সংগ্রহে পুলিশ ভেরিফিকেশনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত ফর্মে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এতে শিক্ষক সংকট আরও বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেখানে মাত্র দুই হাজার প্রার্থীর পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সাড়ে ৮ মাস সময় গেছে। এ অবস্থায় ৩৮ হাজার প্রার্থীর একই ধরনের কাজ সারতে দীর্ঘ সময় লাগবে। সেটা ১-২ বছরও লেগে যেতে পারে। এতে করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আরও শিক্ষক-খরায় ভুগবে। গত মার্চ পর্যন্ত সরকারি হিসাব অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬০ হাজারের বেশি পদ শূন্য আছে।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ডা. সৈয়দ ইমামুল হক বলেন, বেসরকারি হাইস্কুলের শিক্ষকদের সুপারিশের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। এখন প্রার্থীরা সময় মতো তাদের কাজ শেষ করলে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।
গত ৩০ মার্চ বেসরকারি হাইস্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫৪ হাজার ৩০৪ শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ৩১ হাজার ১০১টি পদ আছে, যার মধ্যে এমপিওভুক্ত পদ ২৬ হাজার ৮৩৮টি। মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে মোট ২০ হাজার ৯৯৬টি শূন্যপদ। এর মধ্যে ১৯ হাজার ১৫৪টি এমপিওভুক্ত। ২ হাজার ২০৭টি এমপিও পদে রিট মামলার বাদীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
এই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করা প্রার্থীদের মধ্য থেকে ৩৮ হাজার ২৮৬ জনকে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক সুপারিশপত্র ২৯ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় এনটিআরসিএ।
এর আগে একই প্রক্রিয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় আরও দুইবার শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়। কোনোবারই প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়নি। কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো এই উদ্যোগ নেয়। সে অনুযায়ী এনটিআরসিএ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ফর্মের ৫ কপি পূরণ করে পাঠাতে নির্দেশনা দেয়।
এনটিআরসিএর সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ভেরিফিকেশনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ সুপারের অফিসে হয়ে ফাইলগুলো মাঠপর্যায়ে যাবে। এরপর ফের ঢাকায় ফেরত এলে আমরা কাজ করব। এক্ষেত্রে কিছু সময়তো লাগবেই।
তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি শিক্ষক ফোরামের একজন নেতা বলেন, ফল ঘোষণার প্রায় তিন মাসেও এখনো পুলিশ ভেরিফিকেশন শুরু না হওয়ায় আমরা সাধারণ প্রার্থীরা হতাশ। হবু শিক্ষকেরা মানবিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে প্রতিনিয়ত বিপর্যস্ত হচ্ছে। অনেকেই ধার দেনা, ঋণ করে আবেদন করেছিল সেই টাকা পরিশোধ করতে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লাখের কাছাকাছি শূন্যপদ বিদ্যমান রয়েছে। শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে উঠা ও ধারাবাহিক পাঠদান চালু করতে হলে এই ৩৮ হাজার শিক্ষকের যোগদান জরুরি হয়ে পড়েছে। অনেক প্রধান শিক্ষক হবু শিক্ষকদের ক্লাস নিতে বলছে। কিন্তু চূড়ান্ত সুপারিশ না পাওয়ায় প্রার্থীরাও তা করতে পারছে না। গণিত, ইংরেজি ও আইসিটির মতো বিষয়ে কয়েক হাজার পদ শূন্য। যার ফলে কঠিন এসব বিষয়ে শিক্ষার্থীরা দক্ষ শিক্ষকদের পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষার সার্বিক কল্যাণ বিবেচনায় জরুরি পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ করতে হবে।