এডভোকেট গোলাম ফারুক ||
পুরুষ
নারীর ভূষণ আর নারী পুরুষের ভূষণ এর অর্থ সমঅধিকারের ভিত্তিতে সহকর্মিনী,
সহধর্মিণী শুধু নয় সুখ দু:খের সমঅধিকারিনী হিসেবে সমগুণ সম্পন্ন হওয়া
ব্যতীত যুগ্ম জীবন সুন্দর ও ঐশ^র্যমণ্ডিত হতে পারে না। শিক্ষা, ক্ষমতায়,
বুদ্ধিদীপ্তিতে, মননশীলতায় নারী কোন অংশে হীন নয় তা আজ বাস্তব সত্য।
বিগত
দুই শতাব্দীকাল ধরে অবরোধবাসিনী নিরক্ষর, স্বাক্ষর, স্বশিক্ষিত, স্বল্প
শিক্ষিত থেকে অতিশিক্ষিত নারীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত
মেধা, সুযোগ সুবিধার দিকে পারিবারিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও
মানবিক দৃষ্টি কোন থেকে দেখার জন্য শাসন, শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে
সোচ্চার হয় নারীরা। সূচনা হয় নারী জাগরণের, বর্ণভেদ, বাল্যবিবাহ, লৌকিক
ধর্মাচার, পর্দাপ্রথা, ফতোয়া, মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সহিংসতা ও শাসকের
রক্তচক্ষুর বিরুদ্ধে পড়তে হয়েছে নারীদের। এই লড়াইয়ের সাথে যুক্ত হয়েছে,
হিন্দু, মুসলীম, খৃষ্টান, আদিবাসী, কৃষক, শ্রমিক, সম্প্রদায়ভুক্ত সব
নারীদের অধিকার উন্নয়ন, সমতা প্রগতি ও ক্ষমতায়নের দাবি উত্থাপনের প্রশ্নে
সংগঠিত হয়ে সংগ্রাম করে নারীরা গড়ে তোলে এক সংবদ্ধ সামাজিক আন্দোলন। এই
সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে রচিত হয় বর্তমান নারী প্রগতির অগ্রযাত্রার এক অনন্য
ইতিহাস। নারী মুক্তির আন্দোলনে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের নারীরা লড়েছে সমান
তালে। শিক্ষা ও শিল্পের প্রতি অনুরাগে শুধু পুরুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলনা।
নারীদের ও সংস্কৃতি ও শিল্পের প্রতি শিক্ষালাভ সমভাবে চলছে পুরুষের সাথে
সাথে। সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সাধনায় পুরুষদের মত নারীরা ও উৎসুক ও
নিবেদিত। নারীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত নিজস্ব কলেজ ৬৮৪ হিজরিতে তেমনি সর্বজন
বিধিত একটি প্রতিষ্ঠান কায়রোতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন মামলুক সুলতান মালিক
তাহেরের কন্যা। খলিফা হারুন অর রশিদ এর স্ত্রী জোবায়দা অনেকগুলি পানির নহর ও
আবসিক আশ্রয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজাদ্দুদৌলার স্ত্রী স্থাপিত হাসপাতালটি
তার স্বামীর স্থাপিত হাসপাতালকে ও ছাড়িয়ে গেছে। মালিক আশরাফের কন্যা
দামেস্কে একটি বিখ্যাত কলেজ স্থাপন করেছেন। আর একটি কলেজ স্থাপন করেছেন
হেুমসের নাসির উদ্দিনের স্ত্রী জামরুদ খাতুন, কার্যক্ষেত্রে ও বহু মুসলিম
মহিলা প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। হযরত মুহাম্মদ (দ:) কন্যা ফাতিমা (রা:) র
স্থান কবিদের মধ্যে ছিল বেশ উর্ধে। তেমনি আওরঙ্গজেবের কন্যা মখনী নামে
অভিহিত জেবুন্নেছা দিওয়ান লিখে সমধিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। দুনিয়ার
অন্ধকার যুগে মুসলিম নারীরা জাতির মুক্তির দিশারী হিসেবে অসংখ্য নজির
স্থাপন করেছেন। মুসলিম স্পেনে তাদের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশী। খলিফা
মোস্তাকফির কন্যা ‘ওয়াল্লাদা’ আরবীতে কবিতা লিখে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
কর্ডোভার প্রিন্স আহমেদের কন্যা আয়েশার বাগ্মিতা সর্বজন বিদিত ছিল। বিদূষী
‘লাবানা’ আল হাকামের একান্ত সহকারী ছিলেন। সেবিল নিবাসী ইয়াকুব আল আনসারের
কন্যা ‘মরিয়ম’ সাহিত্য ও অলঙ্কার শাস্ত্রে অধ্যাপনা করতেন। জয়নব উম্মে আল
মুয়িদ একজন সুশিক্ষিত কর্মজীবী ছিলেন। অকিউদ্দিন ওয়াসিতির কন্যা ‘সিওল’
ফেকাহ শাস্ত্রের অধ্যাপিকা ছিলেন। স্পেনের মুসলিম সভ্যতার ইতি বৃত্তে দেখা
যায় সন্তানের শিক্ষার আগে মায়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হত, হতো বলেই
মুসলিম স্পেন শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে তৎকালীন বিশে^ চরম শিখরে পৌঁছে
ছিলেন। মুসলীম নারীদের ঐ অতীত গৌরব গাঁথা আজ ও বিশ^ নারী সমাজের আলোক
বার্তিকা।
এই আলোক দিপ্ত নারীদের সাথে আজ সারা বিশে^ যে নারীর নাম সমধিক
সম্মানের সাথে উচ্চারিত হচ্ছে তিনি আর কেউ নন ইনিই হচ্ছেন আমাদের জাতির
পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসুরি ও কন্যা জননেত্রী শেখ
হাসিনা।
সহস্র বৎসরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্ম ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭
খ্রি:। মাতার নাম ফজিলাতুন্নেছা শেখ হাসিনা লেখাপড়া শুরু করেছিলেন নিজ বাড়ী
টুংগীপাড়াতে আর লেখাপড়া শেষ করেছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে। পিতা ও
পরিবারের সিদ্ধান্তে তিনি বিয়ে করেছেন পদার্থ বিজ্ঞানি এম.এ. ওয়াজেদ
মিয়াকে, পিতার রাজনীতির কারণে বিবাহপূর্ব জীবনে পুলিশী ও সামরিক শাসনের
আতঙ্কে দিন কাটিয়েছেন ভয়ে। ১৯৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে দেশ
স্বাধীন হলে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায়
অধিষ্ঠিত হন। মনে হলো এবার বুঝি জীবনটা শান্তিতে কাটবে।
না মাত্র তিন
বৎসর অতিক্রান্ত না হতেই শেখ হাসিনার মাথায় বিনা মেঘে বজ্রপাত, পৃথিবীর
সবচেয়ে নরকীয় ঘটনার মাধ্যমে হত্যা করা হয় তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর,
মাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা, ছোট ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল ও তাদের স্ত্রীদের
সহ শিশু ভাই রাসেলসহ তাদের গোটা পরিবারকে। শেখ হাসিনা ও বোন শেখ রেহানা
তৎসময়ে বিদেশ অবস্থানের কারণে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।
১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট
জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের নৃসংশ হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি তাঁর স্বামী
পরমানু বিজ্ঞানী এম.এ. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে জার্মানীতে অবস্থান করছিলেন। তার
নিজের ও বোনের এবং সন্তানের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি ভারত এর
দিল্লীতে অবস্থান নেন। ভারত সরকারের নিকট রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলে
তিনি ভারতেই অবস্থান করতে থাকেন।
অতপর ১৯৮১ সনের ১৬ ফেব্রুয়ারি শেখ
হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সর্বসম্মত ভাবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সভাপতি
নির্বাচিত করে। ১৯৮১ সনের ১৭ মে তৎকালীন সরকারের রক্ত চক্ষু অগ্রাজ্য করে
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে পদার্পণ করেন। শুরু হলো পিতার ন্যায় শেখ হাসিনার
আন্দোলন ও সংগ্রামের জীবন।
১৯৮১ সন থেকে ১৯৯১ সন পর্যন্ত তিনি নিরলস
ভাবে আন্দোলন করেছেন দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য। ১৯৮৪
সনে তিনি আন্দোলনের কারণে দু’বার এরশাদ কর্তৃক গৃহবন্দি হন। ১৯৮৫ সনে তিনি
আবারও তিন মাসের জন্য গৃহবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করেন। ১৯৮৬ সনের
নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি জয়ি হলে এরশাদ সরকার গঠন করেন। এই জাতীয়
সংসদে শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন।
আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমে অবশেষে সামরিক শাসক এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব হয় ১৯৯০ সনে।
আন্দোলন
সংগ্রামে অর্জিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনের নির্বাচনে ১৯৯১ সনে বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জয়ি হলে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। বিএনপি
ক্ষমতায় বসে জিয়া ও এরশাদের ন্যায় আবারো স্বৈরাচারের রূপ নেয়। এর
চূড়ান্তরূপ দেখা যায় ১৯৯৪ সনে মাগুরার উপনির্বাচনের সময় কালে, এই
উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ের সমূহ সম্ভাবনাকে ধূলিস্যাৎ করে
বিএনপি জোরপূর্বক নির্বাচনের ফলাফল তাদের পক্ষে নিয়ে গেলে। শেখ হাসিনা সংসদ
বর্জন করে আন্দোলনে নেমে গেলে সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ১৯৯৫ সনে
বিএনপির তথাকথিত নির্বাচন দেশবাসী কর্তৃক প্রত্যাক্ষিত হলে বিএনপি পুনরায়
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। তত্ত্ববধায়ক সরকার
প্রধান হলো বিচারপতি হাবিবুর রহমান।
১৯৯৬ সনের নির্বাচনে আওয়মী লীগ
বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ
হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। শেখ হাসিনা সরকার সাফ্যল্যের সাথে এর
পূর্ণ মেয়াদকাল সমাপ্ত করেন।
২০০১ সালে বিচারপতি হাবিবুর রহমানকে
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান এর পক্ষপাতিত্বে এবং আমেরিকান সরকারের
ষড়যন্ত্রের কারণে বিএনপি আবারো ক্ষমতার অধিষ্ঠিত হয়। খালেদা জিয়া
প্রধানমন্ত্রী হন। খালেদা জিয়ার আমলে এই সময়টাতে বিএনপি বিরোধীদল আওয়ামীলীগ
এর উপর অত্যাচার নির্যাতনের এক ন্যাক্কারজনক ইতিহাস সৃষ্টি করে। এই
সময়কালে বিএনপি আওয়ামীলীগ নেতা আহছানউল্লাহ মাষ্টার কে নির্মম ভাবে হত্যা
করে। ২০০৪ সালে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এ.এম.এস কিবরিয়াকে গ্রেনেড মেরে হত্যা
করা হয়। ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতার অপব্যবহার করে
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশে শেখ হাসিনাকে
হত্যার জন্য গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের জন সমাবেশে আর্জেস গ্রেনেড চার্জ করা
হয়। ভাগ্যক্রমে দলের নেতাদের আত্নদানে শেখ হাসিনা বেঁচে গেলে ও আওয়ামীলীগ
নেত্রী আইভী রহমানসহ ১৪ জন নেতা কর্মী প্রাণ হারান।
২০০৫ সনে চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আওয়ামীলীগ জয় লাভ করলে বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে তার নির্ধারিত পরাজয়ের মেসেজ পেয়ে যায়।
দেশে চলতে থাকা লাগাতার আন্দোলন বিএনপি নির্বাচন নিয়ে তাল বাহানা শুরু করে।
এরই
মধ্যে প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন দেশে ইমারজেন্সী ঘোষণা দেন। জেনারেল
এম.ইউ.আহমেদ দেশের ক্ষমতায় আরোহন করেন এবং ড. ফখরুদ্দিনকে চিফ এডভাইজার
নিয়োগ দেন। পক্ষান্তরে সেনাবাহিনীই ক্ষমতার অধিষ্ঠিত হল।
এই ত্বধাবধায়ক
সরকারের অধীনে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া উভয়কে কারার অন্তরালে রাখা হল। শেখ
হাসিনা ২০০৮ সালের ১১ জুন মহামান্য হাই কোর্টের আদেশে মুক্ত হলেন, শেখ
হাসিনা মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য আমেরিকা গেলেন। ২০০৮ সালের ৬ নভেম্বর তিনি
দেশে ফিরে আসেন।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত
হলে শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে আবারো ২য় বারের মত
দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন।
২০১৪ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা আবারো ৩য় বারের মত প্রধানমন্ত্রী হন।
২০১৯ সনে জননেত্রী শেখ হাসিনা ৪র্থ বারের মত প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ শাসন করে যাচ্ছেন।
জননেত্রী
শেখ হাসিনা জাতির পিতার কন্যা তিনি রাজনৈতিক রক্ত ধারার উত্তরাধিকার,
রাজনীতির হাতেখড়ি হয়ে যায় ছাত্র জীবনে। পিতার রাজনৈতিক জীবন পর্যবেক্ষণ
করেছেন গভীর ভাবে। জীবনে বিয়োগাত্বক ঘটনার মধ্য দিয়ে হারিয়েছেন, পিতা,
মাতা, ভাইসহ নিকটজনদেরকে। চিনেছেন দলীয় রাজনীতিতে শত্রু মিত্র, দেশীয় ও
আন্তর্জাতিক রাজনীতির শত্রু, মিত্র। পর্যবেক্ষণ করেছেন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার
ভূ-রাজনীতির অবস্থা ও কুটনৈতিক বিশ^কে। এর সাথে তার চিন্তায় যোগ হয়েছে
পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন। সব কিছু মিলিয়ে বিছিন্ন বহুমাত্রিক বিশ্লেষণে তিনি
হয়ে উঠেছেন অনন্য সাধারণ। প্রত্যয় দীপ্ত তারুণ্যে উজ্জীবিত হয়ে তিনি পরিণত
হয়েছেন বিশ^ নেতৃত্বের পর্যায়ে। আমরা যদি সময় এর রথচক্রে তাকে পর্যবেক্ষণ
করি তা হলে কেমন দাঁড়ায়-
১৯৭৫-১৯৮১
এই সময়কালে শেখ হাসিনা শোককে
সামলিয়ে নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। তিনি এই পুরো সময়টা কাটিয়েছেন ভারতে।
সেই সময়ে তিনি সান্নিধ্য পেয়েছেন ভারতের সুযোগ্য বিচক্ষণ প্রধানমন্ত্রী
মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর। পিতা মাতার মত স্নেহ মমতা পেয়েছে এবং উপ মহাদেশের
রাজনীতির গতি ধারা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি
প্রণব মুখার্জী ও তার সহধর্মিণী শুভ্রা মুখার্জীর কাছ থেকে। আমাদের
স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ভারতের যে সকল সম্মানিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ভূমিকা
রেখেছিলেন তাদের সাথেও তার মতবিনিময় হত। পশ্চিমবঙ্গের এক সময়ের সুযোগ্য
মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সাথেও শেখ হাসিনার যোগযোগ হত। এই সময়কালে আওয়ামী
লীগের জ্যৈষ্ঠ নেতৃবৃন্দ ও শেখ হাসিনার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন
প্রতিনিয়ত অবশেষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে তিনি
সভাপতি নির্বাচিত হলে ১৯৮১ সনের ১৭ মে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।
১৯৮১-১৯৯০
এই সময়টাতে তিনি বিচক্ষণতার সাথে দল পরিচালনা করেন। জেল জুলুম মাথায় নিয়ে তিনি নিজেকে আন্দোলন ও সংগ্রামে নিয়োজিত করেন।
১৯৯০-১৯৯৬
এই সময়টাতে তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে নিজেকে জাতির নিকট তুলে ধরেন।
১৯৯৬-২০০০
শেখ
হাসিনা নিজ মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগকে
১৯৭৫ এ ক্ষমতা হারানোর দীর্ঘ ২১ বছর পর আবারো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে
রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করেন। বাংলাদেশে ১ম বারের মত প্রধানমন্ত্রী
হয়ে তিনি যে যে কর্মকাণ্ড সাফল্য মন্ডিত করেছিলেন-
১। শেখ হাসিনা ভারতের সাথে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি সম্পাদন করেন।
২। শেখ হাসিনা “বঙ্গবন্ধু হত্যা দায়মুক্তি” আইন বাতিল করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার কাজ শুরু করেন।
৩।
শেখ হাসিনা টেলিকম শিল্পকে ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেন। এর পূর্বে শুধু
সরকারি মালিকানায় টেলিকম শিল্প ছিল। ব্যক্তি মালিকানা আসায় এতে করে জনগণ
অতি অল্পমূল্যে টেলিকম সুবিধা ভোগ করতে সক্ষম হয়।
৪। ১৯৯৯ সালে ঘওচ ঘবি ওহফঁংঃৎরধষ চড়ষরপু চালু করে ব্যক্তি মালিকানায় শিল্প কারখানা স্থাপনের অবাধ প্রবাহ সৃষ্টি করেন।
২০০৯-২০১৪
দ্বিতীয়
বারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা
চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে এলে ২৯ ডিসেম্বর দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি নির্বাচনে জয়ি হয়ে সরকার গঠন করে
প্রধানমন্ত্রী হন। এই সময় কালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অর্জন-
১। ২০০৯
সালে বি.ডি.আর বিদ্রোহ তিনি সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করতে পেরেছিলেন। সে
বিদ্রোহে সেনাবাহিনী থেকে আসা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাসহ ৭৫ জনকে হত্যা করা
হয়েছিল।
২। আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন (ওঈঈ) কোর্ট স্থাপন করে ১৯৭১ সনে
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যে সকল ব্যক্তি মানবিকতা বিরোধী অপরাধ সংগঠিত
করেছিলেন তাদের নেতৃবৃন্দকে এই বিশেষ আদালত বিচার করে দোষী সাব্যস্ত করে
সাজা বাস্তবায়নে সমর্থ হয়েছিলেন। এই আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন আদালতে পাক
আর্মি কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যায় সে সকল বাঙ্গালী অংশ গ্রহণ করেছিল তারা হলেন
রাজাকার, আল- বদর, আল-শামস ও তাদের সহযোগীরা।
৩। এই সময়কালে তিনি জাতিসংঘ ঘোষিত মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জন করে আন্তর্জাতিক ভাবে সম্মানিত হয়েছিলেন।
৪।
এই সময়কালে গ্রামীণ ব্যাংক এর অর্থ কেলেঙ্কারি উদঘাটন করে এর গ্রামীণ
ব্যাংক প্রধান এর পদ হতে ড. মো : ইউনুস কে অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ড.
মো: ইউনুস কর্তৃক সে সময়ে প্রধানমন্ত্রী সমালোচিত হলে ও কোর্ট অদেশে তার
পদচ্যুতি হওয়ায় তিনি আর আইনী সহযোগিতা পাননি, পরে ক্ষুব্দ হয়ে ড. ইউনুস
আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করেন। শেখ হাসিনা তা
সাহসিকতার সাথে মেকাবেলা করতে সক্ষম হন।
৫। শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের
ভাতা, অসহায়, পঙ্গু ও জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবাসহ ১৪০
টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যামে কল্যাণকর কার্যক্রম গ্রহণ করেন।
৬। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে বই ও ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে উপবৃত্তি প্রদান ব্যবস্থা চালু করেন।
৭। এই সময় কালে আওয়ামীলীগ সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর করে।
২০১৪-২০১৯
শেখ
হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠ বিজয় অর্জন করে তৃতীয়
বারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন। এই নির্বাচনে তিনি ২৬৩ টি সংসদীয়
আসনে জয় লাভ করেছিলেন।
এই সময়কালে সফলতা-
১। দারিদ্র দূরীকরণে গৃহিত হয় একটি বাড়ি একটি খামার।
২। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সৃষ্টি, কম খরচ ও দ্রুততার সাথে সেবা প্রদানে ডিজিটাল বাংলাদেশ।
৩। সমতাভিত্তিক উন্নত অর্থনীতির জন্য নারীর ক্ষমতায়ন।
৪। শেখ হাসিনা উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ।
৫। বিনিয়োগ বিকাশে ১০০ টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে উদ্যেক্তা তৈরি-
৬। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুরক্ষা জন্য সেনাবাহিনীর জন্য সাবমেরিন ক্রয়-
৭।
২০১৭ সালে মায়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপর গণহত্যা শুরু হলে
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মানবিক কারণে শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা
জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ স্থান দেয় যার সংখ্যা ১২ লক্ষাধিক। পৃথিবীর সার্বাধিক
জনসংখ্যা ঘনত্বের দেশ বাংলাদেশ। তারপর ও মানবতাবাদী এই নেতা এর অধিক সংখ্যক
অভিবাসীর ভার বহন করে চলছে।
৮। এই সময়কালে আর একটি বড় রকমের সাফল্য মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ সেটেলাইট স্থাপন।
২০১৯-
শেখ
হাসিনার চতুর্থ বারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন। ২০২০ সালে সমগ্র
পৃথিবী এক ভয়ঙ্কর মহামারীতে আক্রান্ত হয়। এই মহামারীকালে ও শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার গতি অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
এই সময়কালের সফলতা-
১।
সারাপৃখিবী যখন করোনা মহামারীতে আক্রান্ত। বিশে^র পরাক্রমশালিদেশ আমেরিকা ও
পাশর্^বর্তী দেশ ভারত যখন করোনার নিকট পরাস্থ। এই সময়ে শেখ হাসিনা ২০২০
সালে বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তের হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ২০২১
সালে করোনার টিকা আবিষ্কার ও প্রয়োগ শুরু হলে শেখ হাসিনা কঠোর
তত্ত্বাবধানে করোনা টিকা সংগ্রহ ও প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে টিকা
প্রাপ্তিতে কিছুটা সমস্যা হলে ও শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের নিকট প্রাপ্তির পরিমাণ বিভিন্ন ব্রান্ডের টিকা
সংগ্রহ আছে ও সংগ্রহের পথে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাংলাদেশের ৮০% জনগণকে
টিকা প্রদান করা হবে বলে সরকার নিশ্চিত করেছে। টিকা দান কার্যক্রম বিশ^
নেতৃবৃন্দের নিকট প্রশংসিত হয়েছে।
২। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এই কার্যক্রম সন্তোষজনক গতিতে এগিয়ে চলছে।
৩। সবচেয়ে আশ্চর্য্যরে বিষয় হলো বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহিত মেঘা প্রকল্প সমূহের কার্যক্রম এক দিনের জন্য ও বন্ধ হয় নাই।
৪। করোনাকালীন সময়ে ২০২০ সালে বাংলাদেশেই জুডিশিয়াল কার্যক্রম চালু হয়েছে। যা বর্তমান সময়ে ও আংশিক চালু আছে।
সর্বশেষ
আশারকথা হলো বিশ^ব্যাংকের প্রবল বিরোধীতা স্বত্বে পদ্মা সেতুর কাজ
সমাপ্তির পথে, ঢাকা মেট্রোরেল এর কাজ ও দ্রুততম ভাবে এগিয়ে চলছে,
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেলের কাজ ও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সব কিছু ঠিকঠাক
থাকলে এই প্রকল্প সমূহ আগামী ২০২২ সালে সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হবে।
দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঠিক সময় চালু হবে।
ভূমিহীন
জনগোষ্ঠিকে ভূমিসহ গৃহ নির্মাণ করে প্রদান করা এই প্রকল্পের কাজ ও সঠিক
গতিতে এগিয়ে চলছে। করোনা কালে বিভিন্ন স্তর ও জীবিকার জনগণকে আর্থিক অনুদান
কার্যক্রম প্রশংসিত হয়েছে।
প্রবাসীদের কল্যাণে ও সরকার বিশেষ স্কীম গ্রহণ করেছে।
করোনা
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে এই ভেবে সরকার ধীরে ধীরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সাথে সাথে ঝরে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনার ও ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ইতিমধ্যে শেখ হাসিনা
আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেশের রাজনৈতিক দল সমূহকে প্রস্তুতি নিতে আহবান
জানিয়েছেন। নিজ দল আওয়ামীলগিকে প্রস্তুত হতে বলেছেন। এই লক্ষে আওয়ামীলীগ
আগামী নির্বাচনের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরিতে হাত দিয়েছে।
পৃথিবীর একমাত্র
দেশ বাংলাদেশ শতবর্ষব্যাপি ডেল্টা প্ল্যান গ্রহণ করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে
উন্নত বিশে^ বাংলাদেশ প্রবেশ করবে। ইতিমধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের সিঁড়িতে পা
রেখেছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে তার ও স্বীকৃতি পাবে। ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন
লক্ষমাত্রা অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন কার্যক্রম।
দলীয় নির্বাচনী
ইশতেহারে ও আগামী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদি
পরিকল্পনা বাংলাদেশ একটি মাইল ফলক তৈরি করেছে এ অবস্থান মানুষের প্রত্যশার
মাত্র বাড়িয়ে দিয়েছে।
এসব উদ্যোগ ও ভাবনার কারিগর স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সকল আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম হল-
১। আই.পি.এম. ইন্টারন্যাশানাল এচিভমেন্ট এওয়ার্ড।
২। গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ এওয়ার্ড।
৩। পিস ট্রি এওয়ার্ড।
৪। সাউথ সাউথ এওয়ার্ড।
৫। চ্যাম্পিয়ান অব দ্যা আর্ট এওয়ার্ড।
৬। এজেন্ট অব চেঞ্জ এওয়ার্ড।
বঙ্গবন্ধুর
লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে তার জ্যেষ্ঠ কন্যার মাধ্যমে। এটি আমাদের পরম
পাওয়া। বাংলাদেশের স্বপ্নকে সার্থক করা, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে লালন করা ও
জননেত্রীর ভিশনকে বাস্তবায়ন করা হবে নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
এই প্রজন্মের কাছে আমাদের প্রত্যাশা আমরা যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে
অংশ গ্রহণ করেছি। তোমরা যেন ২০৪১ এ একটি উন্নত বাংলাদেশ তথা সোনার বাংলা
উপহার দিতে পার তবে সেটি ই হবে তোমাদের দেওয়া প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ উপহার।
শুভ জন্মদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এডভোকেট গোলাম ফারুক
লেখক ও গবেষক