দেবিদ্বারে ১৫শতাংশ শিক্ষার্থীই শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত
Published : Tuesday, 28 September, 2021 at 12:00 AM
শাহীন আলম, দেবিদ্বার ||
দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় জোর করে অনেক মেয়েকে বাল্য বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারগুলোতে এর সংখ্যা বেশি। ‘সমাজ বাস্তবতা’ আর ভালো ‘পাত্র’ পাওয়ায় বাল্যবিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। উপজেলায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ঠিক কত হবে তার ধারণা না মিললেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত। এদের মধ্যে অনেকেই করোনাকালে জোর পূর্বক বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছেন, কেউ কেউ পড়া লেখা ছেড়ে দিয়েছেন। পিতা-মাতা বা অভিভাবকের অসচেতনতাই এর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, দেবিদ্বার উপজেলায় মোট ৯৯টি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২২হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থী প্রায় ১৩হাজার। এদের মাঝে ২০২১ ও ২০২২ সালের ১৫ শতাংশ এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীর বিয়ে হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ এর কারণে গত দেড়বছর স্কুল বন্ধ থাকায় শ্রেণি কক্ষের অনেক শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে দেবিদ্বার মফিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৮জন, ধামতি হাবিবুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৫জন, জোবেদা খাতুন মহিলা কলেজে ২০০জন, মরিচাকান্দা জিয়া আদর্শ বিদ্যালয় ২৬জন, বিহারমণ্ডল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১২জন, দেবিদ্বার ইসলামীয়া ফাযিল মাদরসায় ৯০জন, বারেরা দাখিল মাদরসায় ১২জন, রাজামেহার উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৬জন।
বাল্যবিয়ের শিকার কয়েকজন শিক্ষার্থী এ প্রতিবেদককে জানায়, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় বাবা মা চিন্তিত হয়ে পড়েন। লেখাপড়া করার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু করোনার কারণে তা আর হলো না ! সীমা নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, বিয়ের আগে ছেলে পক্ষ বলেছিলো লেখাপড়ার সুযোগ দিবে এই বলে আমাকে বিয়ে দেয়া হয়। এখন সংসার সামলিয়ে পড়া লেখা চালানো সম্ভব নয়।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একাধিক অভিভাবক জানান, ভালো পাত্র পাওয়ায় করোনায় লকডাউনের মধ্যে খুব গোপনে মেয়ের বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। মেহমানদের আপ্যায়ন ও বিয়ের আনুসাঙ্গিক বিয়ের খরচও কম লেগেছে। দেবিদ্বার ইসলামীয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাও. মো.আলাউদ্দিন বলেন, আলিম-ফাযিল শ্রেণিতে ৭০জন ও নবম ও দশম শ্রেণিতে ২০জনের বিয়ে খবর পাওয়া গেছে। এ মাদরসায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী শ্রেণি কক্ষে অনুপস্থিত রয়েছে।
মফিজ উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান জানান, নবম শ্রেণিতে ২৭৮ জন ভর্তি রেজিস্ট্রেশন করেছে। এর মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছে ২৫০ জন। বাকি ২৮ জন শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে তাদের অনেকেরই বিয়ে হয়ে গেছে। বর্তমানে স্কুলে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
ধামতী হাবিবুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, নবম ও দশম শ্রেণিতে প্রায় অর্ধশত ছাত্রী অনুপস্থিত রয়েছে। এদের অভিভাবকের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, তাদের অধিকাংশরই বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ে হওয়ায় কেউ কেউ লেখা পড়া ছেড়ে দিয়েছেন, কেউ স্বামীর বাড়িতে আছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একে.এম আলী জিন্নাহ্ বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অভিভাবকেরা অনিশ্চিয়তায় ছিলেন। দরিদ্র অভিভাবকেরা ভালো পাত্র পাওয়ায় এর মধ্যে অনেক ছাত্রী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছেন। কিছু কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। যারা ঝরে পড়েছে তাদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশনা দেয়া হবে।
দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাকিব হাসান বলেন, করোনাকালে অনেক শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত। এর মধ্যে গোপনে অনেক বাল্যবিয়ের ঘটনাও ঘটেছে। আমরা যেগুলোর খবর পেয়েছি সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছি। এছাড়াও কিছু শিক্ষার্থী পড়া লেখা বন্ধ করে দিয়েছে, কেউ অন্য পেশায় চলে গেছে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে তাদের অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় সভা, কাউসিলিং করা হচ্ছে। আশা করি, খুব তারাতারি পুনরায় শ্রেণিকক্ষগুলো আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।