মাসুদ আলম।।২৫
মিনিটেই কুমিল্লার ২৪ কিলোমিটার নতুন ডাবল রেল লাইন ঢাকা-চট্টগ্রামসহ
চারটি রেলপথে ট্রেন চলাচলে যাত্রীদের ঘন্টার ভোগান্তির কমিয়ে দিলো। জেলার
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের লাকসাম-টু-কুমিল্লা সিঙ্গেল রেল লাইনটি ব্রড ও
ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে উন্নীত করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। ঢাকা-চট্টগ্রাম ৩২১
কিলোমিটার রেলপথের ৭২ কিলোমিটার ব্রড ও ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন প্রকল্পের ২৪
কিলোমিটার লাইনে এখন যাত্রী ও মালবাহীসহ প্রায় ৪৪টি ট্রেন কম সময়ে চলাচল
করছে। এতে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় যেমনি কমেছে, তেমনি যাত্রীদের ট্রেন
যাত্রায় দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটেছে।
গত শনিবার রেলপথ মন্ত্রী মো. নুরুল
ইসলাম সুজন কুমিল্লা রেল স্টেশনে এক অনুষ্ঠান জেলার লাকসাম-আখাউড়া রেলপথের
৭২ কিলোমিটার প্রকল্পের সম্পন্ন হওয়া ব্রড ও ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন প্রকল্পের
২৪ কিলোমিটার নতুন লাইনের উদ্বোধন করে ট্রেন চলাচলের জন্য উন্মক্ত করে
দেন।
লাকসাম-কুমিল্লা এ ২৪ কিলোমিটার ডাবল রেল লাইনই পূর্বাঞ্চল
রেলওয়ের ব্রড ও ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন হিসেবে সর্বপ্রথম ট্রেন চলাচল শুরু
করলো। এতে করে ট্রেন দুর্ঘটনা, শিডিউল বিপর্যয় কমে আসবে। পাশাপাশি
ডুয়েলগেজে ট্রেন চলাচল করলে দ্বিগুন পরিমানে মালামাল ও যাত্রী পরিবহন করলে
রেলে রাজস্ব আয় বাড়বে।
রেলের একটি সূত্র জানায়, আরও প্রায় আগামী ৭ থেকে
১০ বছর পর পূর্বাঞ্চল রেলে ব্রডগেজ ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। তবে
আগামী বছর আখাউড়া-কুমিল্লা পর্যন্ত বাকী ৪৮ কিলোমিটার ব্রড ও ডুয়েল গেজ
লাইন স্থাপন সমাপ্ত হলে এ পথের পুরোটাই ডাবল লাইন হবে। ফলে এ পথে অতিরিক্ত
আরও অন্তত ১২টি আন্তঃনগর ট্রেন পরিচালনা সম্ভব হবে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম
রেলপথে প্রায় ১ ঘন্টা থেকে দেড় ঘন্টা সময় কমে আসবে। এছাড়াও রেলপথে বর্তমানে
ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-সিলেট, ঢাকা-নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহে
যাতায়াতে ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট সময় কমে এসেছে।
কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার
জগতপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মাসুম করিম বান্দরবান মহিলা সরকারি কলেজের
প্রভাষক। সোমবার সকালে চট্টগ্রাম অভিমূখী মহানগর প্রভাতী ট্রেনে করে তিনি
কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন। এসময় তিনি জানান, কুমিল্লা থেকে লাকসাম
পূর্বে সিঙ্গেল লাইন ছিলো। এখন ডাবল লাইন হওয়ায় ট্রেনের ক্রসিং কমেছে।
পাশাপাশি সিডিউল বিপর্যয় না থাকায় কম সময়েই ট্রেনে যাতায়াত করছি। এতে ট্রেন
ভ্রমন আরও আরাম দায়ক হয়ে উঠছে। এর আগে লাকসাম থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ডাবল
লাইন থাকলেও লাকসাম আখাউড়া না থাকায় আমরা ভোগাস্তি পোহাতাম। এখন
কুমিল্লা-আখাউড়া ডাবল লাইন হয়ে গেলে ভোগান্তি আরও কমবে।
গত ১৬ বছর
কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেনে যাতায়াতকারী একটি ওষুধ কোম্পানীর
কর্মকর্তা শেখ আবদুর রশিদ জানান, এই ২৪ কিলোমিটার সিঙ্গেল থেকে ডাবল লাইন
হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে এখন গন্তব্যে পৌঁছতে পারছি।
লাকসাম থেকে
ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী কর্ণফূলী ট্রেনের যাত্রী বাউল শিল্পী জীবন সরকার বিগত
১০ বছর ধরে এ অঞ্চলেও ট্রেনে যাতায়াত করেন। কিন্তু কখনও ট্রেনের শিডিউল
বিপর্যয় এবং ক্রসিংয়ের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারতো না।
বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়ে দূর্ভোগ পোহাত। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে সেই
দুর্ভোগ কমে যাওয়ায় সে এখন ট্রেন যাত্রায় স্বস্তি ভোগ করছেন বলে জানান।
লাকসাম
রেল কেভিন স্টেশন মাস্টার রফিকুল হায়দার চৌধুরী জানান, লাকসাম থেকে
কুমিল্লার ২৪ কিলোমিটার রেলপথ ডাবল লাইন হওয়ায় ২৫ মিনেটে ট্রেন যাতায়াত
সম্ভব। পূর্বের সিঙ্গেল লাইনে শিডিউল বিপর্যয় এবং ক্রসিংয়ের কারণে এই ২৪
কিলোমিটার পথ পৌ^ছতে এক ঘন্টারও বেশি সময় লেগে যেতো। এতে যাত্রীরা
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পেীঁছতে পারতেন না। তিনি আরও বলেন, ডাবল
লাইন হওয়ায় এই রেলপথে প্রতিদিন যাত্রী ও মালবাহী ২২ জোড়া অর্থাৎ ৪৪টি ট্রেন
চলাচল করবে। এতে করে যাত্রীদের সময় ও দেশের অর্থ সাশ্রয়ী হবে।
রেলওয়ের
সহকারী লোকো মাস্টার খলিলুর রহমান চৌধুরী বলেন, আগে রেল লাইন খারাপের
কারণে আমরা ধীরগতিতে ট্রেন পরিচালনা করতে হতো। পাশাপাশি ট্রেন দুর্ঘটনার
একটি ভয়ও থাকতো। বর্তমানে এই আতঙ্ক নেই। স্বাচ্ছন্দে ও নির্বিঘ্নে ট্রেন
পরিচালনায় নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছা যায়।
কুমিল্লা রেলওয়ের
ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন, কুমিল্লা-লাকসাম রেলপথে
ডাবল লাইন চালু হওয়ার পর যাত্রী সাধারণের জন্য স্বাচ্ছন্দে ও নিরাপদ ট্রেন
যাত্রা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ রেলপথে যাতায়াতে পূর্বের চেয়ে প্রায় ৩০ মিনিট
সময় কমে এসেছে। এছাড়াও ট্রেন যাত্রায় কমেছে ভোগান্তিও। কুমিল্লা-লাকসাম
রেলপথে বর্তমানে যাতায়াতে বর্তমানে ২০-২৫ মিনিট সময় লাগছে। পূর্বে এর
রেলপথে সময় লাগতো প্রায় ৪৫-৫০ মিনিট। সিঙ্গেল লাইন থেকে ডাবল লাইনে
রূপান্তিত হওয়ায় এ রেলপথে ট্রেনের সংখ্যা বেড়েছে। কমবে দুর্ঘটনাও।