এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ
কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ গ্রামের নির্জন বাড়িতে খুন হওয়া বৃদ্ধ মাজেদা বেগমের হত্যা রহস্যের জট খুলেছে পিবিআইর তদন্তে।
ক্লু-লেস
এই মামলাটি গত ২০ সেপ্টেম্বর তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণের ৭ দিনের মধ্যে পুলিশ
ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লা’ খুনীদের সনাক্ত সহ প্রধান
আসামী রনিকে (২২) গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে
উদ্ধার করা হয়েছে লুট হওয়া স্বর্ণালংকারও। পিবিআই বলছে, মূলত জমি বিক্রির
টাকা লুট করার জন্যই তিনজন মিলে মাজেদা বেগমকে হত্যা করে। গ্রেফতারকৃত রনি এ
বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
২৮ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার)
দুপুরে কুমিল্লা পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আলোচিত এই
হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান। এ সময়
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক মো.তৌহিদুর রহমান
ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মাহফুজ, মোঃ মতিউর রহমান, হিলাল
উদ্দিন, বিপুল চন্দ্র দেবনাথসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ।
গত ৭ সেপ্টেম্বর
সোমবার দিবাগত রাতে উকুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ গ্রামের নির্জন
বাড়িতে খুন হন মাজেদা বেগম। পরদিনে তার পা বাঁধা কাঁদাযুক্ত মরদেহ উদ্ধার
করেছে পুলিশ।
পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, আলোচিত এই মামলাটি
ছিলো একেবারেই ক্লু-লেস। আমাদের পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার
স্যারের দিকনির্দেশনায় আমরা হত্যার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করি। মামলার
তদন্ত শুরুর মাত্র সাত দিনের মধ্যে সোমবার বিকেলে আধুনিক প্রযুক্তির
মাধ্যমে হত্যায় জড়িত জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ছাতিয়ানি গ্রামের মিজানের
ছেলে মোঃ রনিকে (২২) গ্রেপ্তার করি। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে পুরো
হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে বর্ননা দেয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে
লুট হওয়া স্বর্ণের কানের দুল উদ্ধার করি।
জিজ্ঞাসাবাদে রনি পিবিআইকে
জানিয়েছে, তারা তিনজন মিলে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য
ছিলো ওই মহিলার জমি বিক্রির টাকা লুট করা। কিন্তু ঘরে কোন টাকা ছিলো না। আর
তারা অনেকগুলো গহনা লুট করলেও কানের দুল ছাড়া সব ছিলো ইমিটেশন। কানের দুল
সাড়ে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করে তারা। এর মধ্যে রনি ভাগ পায় ২হাজার ৬’শ
টাকা। বাকিটাকা অপর দু’জন ভাগ করে নেয়। হত্যার সময় মাজেদা নিজেকে বাঁচাতে
আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তিনি ঘাতক রনির আঙ্গুলে কামড় দিয়েছেন। রনির আঙ্গুলে
সেই দাগও পাওয়া গেছে।
পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান আরও বলেন, মামলার
অপর দুই আসামিকে গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত
রনিকে মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য
কুমিল্লার দেবীদ্বারে পঞ্চাশোর্ধ মাজেদা বেগম নামে এক গৃহবধূর পা বাঁধা ও
কাঁদাযুক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত ৭ সেপ্টেম্বর সোমবার দিবাগত রাতের
কোন এক সময় দেবীদ্বার উপজেলার ৬নং ফতেহাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব ফতেহাবাদ
গ্রামের জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ডেপুটি কন্ট্রোলার মামুনুর-রশিদ সরকারের
বাড়ির শিক্ষক মনিরুল ইসলাম সরকার’র ঘরে ওই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটে।
মামলার
তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ তৌহিদুর রহমান বলেন,
খুন হওয়া মাজেদার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তাঁর স্বামী মারা গেছেন বেশ
কয়েক বছর আগে। ছেলেরা কুমিল্লা ও গাজীপুরে থাকেন। মেয়েরা থাকেন
শ্বশুরবাড়িতে। বাড়িটিতে তিনি একাই থাকতেন। এই সুযোগটিতে কাজে লাগিয়ে তাকে
হত্যা করা হয়েছে। মামলার তদন্ত শেষে দ্রুত আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট)
দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।