রণবীর ঘোষ কিংকর।
দেবীর নবপত্রিকায় প্রবেশ ও চক্ষু দানের মধ্য দিয়ে শুরু হলো বাঙ্গালী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। ষষ্ঠী তিথিতে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে বেলতলায় দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনায় সোমবার কুমিল্লার প্রতিটি পূজা মন্ডপে শুরু হয় ভক্তদের উচ্ছ্বাস। ষষ্ঠী তিথিতে বিহিত পূজার পর দেবীর আমন্ত্রন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধে খড়গ-কৃপাণ, চক্র-গদা, তীর-ধনুক আর ত্রিশুল হাতে হাজারো মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হলেন। এর মধ্য দিয়ে শুরু হলো পাঁচদিন ব্যাপী দেবী পূজার সূচনা।
শাস্ত্র অনুসারে এ বছর দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে এসেছেন ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে। পাঁচদিনের অর্চনা শেষে মর্তলোক থেকে স্বামীগৃহ কৈলাশে ফিরেন যাবেন দোলায় (নৌকা) চড়ে।
আজ মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সকালে মহা সপ্তমী তিথিতে দেবী অর্চনার পর দেবীর পায়ে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করবেন সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তৃরা। পঞ্চিকার তিথি অনুযায়ী বেলা ২টা ১৬মিনিটের মধ্যে দুর্গা দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও মহাসপ্তমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
ভক্ত ও দর্শণার্থীদের পদচারণায়  সরগরম হয়ে উঠবে কুমিল্লার ৭৯৫টি পূজা মন্ডপ। গত বছরের করোনা ভয়াবহতায় কুমিল্লার প্রায় সকল পূজা মন্ডপ উৎসবহীন। এ বছর মুক্ত মনে মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে প্রতীমা দর্শণ করবেন দর্শণার্থীরা এমনটাই মনে করছেন কুমিল্লা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ।
দেবী পক্ষের পঞ্চমী তিথি রবিবার (৯ অক্টোবর) রাত থেকে দেবীর বোধন ও সোমবার (১০ অক্টোবর) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গতি নাশিনী দেবী দুর্গা স্ব-পরিবারে স্বর্গালোক থেকে মর্ত্যলোকে এসেছেন এমন বিশ্বাস নিয়ে মাতৃবন্ধনা শুরু করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়।
সনাতন শাস্ত্রানুসারে মা দুর্গা হচ্ছেন আধ্য শক্তি দেবী ভগবতি। তার বহুরূপ। পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা বলে তিনি পার্বতী। আবার দুর্গম নামক অসুরকে বধ করে ছিলেন বলে তার অন্য নাম দুর্গা। আবার তিনিই চন্ডী, মহিষাসুরমর্দিনী।
পূজা শেষে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভক্তি শ্রদ্ধার সাথে ভক্তবৃন্দ মা রূপের দেবী দুর্গার নিকট নিজের, পরিবারের ও দেশ-জাতির মঙ্গল প্রার্থনা করে চন্ডী শ্লোক “রূপং দেহি, জয়ং দেহি, যশো দেহি, দ্বিষো জহি (অর্থাৎ হে দেবী তুমি আমাকে রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও এবং শত্রুর কবল থেকে মুক্ত কর)” পাঠ করে দেবীর চরণে ফুল-বেলপাতায় পূষ্পাঞ্জলী অর্পন করবেন।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি চান্দিনা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সী জানান, শাস্ত্র মতে দুর্গা পূজা শুরু হয় বসন্তকালে যার কারণে মায়ের ওই পূজাকে বাসন্তি পূজা। আর রাম চন্দ্র তার স্ত্রী হরণের পর রাবনকে বধ করার উদ্দেশ্যে শক্তিধারণের জন্য শরৎ কালের এই তিথিতে পূজা করে দুর্গাদেবীকে আরাধনা করার পর থেকে শারদীয় দুর্গা পূজা আরম্ভ হয়। ওই ধারাবাহিকতায়ই আমরা দেশ-জাতি, ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সকলের মঙ্গল কামনা করে শারদীয় দুর্গা পূজা করে থাকি। চলতি করোনা ভাইরাস থেকে মা দুর্গা যাতে সকলকে সুস্থ রাখেন এবং করোনা ভাইরাস যেন পৃথিবী থেকে বিদায় নেন এই প্রার্থণা করার জন্য সকল ভক্তদের অনুরোধ করছি।
এদিকে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিটি পূজা মন্ডপে নিছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে জেলা পুলিশ।
প্রতিটি পূজা মন্ডপে আনসার, পুলিশের পাশাপাশি টহল থাকবে র‌্যাব ও সাদা পোশাকে থাকবে গোয়েন্দা পুলিশ। গুরুত্বপূর্ণ পূজা মন্ডপগুলোতে থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ১৮৪টি মোবাইল টিম।