Published : Monday, 11 October, 2021 at 12:00 AM, Update: 11.10.2021 1:38:23 AM
তানভীর দিপু ।।
কুমিল্লা
জেলায় আশংকাজনক হারে কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। প্রতি বছর কুমিল্লায় ১ শতাংশ
করে জমি পরিবর্তিত হচ্ছে অনাবাদিতে। চলতি বছরের আগষ্ট মাসে ২ হেক্টর আবাদি
জমি কমেছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ
মিজানুর রহমান। তিনি জানান, গত এক বছরে কুমিল্লায় মোট আবাদি জমি কমেছে ৮শ
২৪ হেক্টর। সবচেয়ে বেশি আবাদি জমি কমেছে সদর উপজেলা, বুড়িচং ও চান্দিনা
উপজেলায়। আশংকার বিষয় হলো- ইটভাটার মাটির যোগান দিতে জমির উপরিভাগের অংশ
কেটে নেয়ায় অনাবাদি হচ্ছে অনেক জমি। এছাড়া আবাসিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান
নির্মানেও ব্যবহার হচ্ছে বিপুল পরিমান কৃষি জমি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ
অধিদপ্তর সূত্র মতে, কুমিল্লা জেলার মোট আয়তন ৩ লাখ ৭ হাজার ৬০ হেক্টর।
বর্তমানে জেলায় মোট আবাদি জমির পরিমান ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমিতে
চলছে নানান ধরনের কৃষি আবাদ। কৃষির সূতিকারগার কুমিল্লায় ৮ লাখ ৮১ হাজার ৬ শ
পরিবার নানান ধরনের কৃষি কাজের সাথে জড়িত। তাদের জীবিকা ও উপার্জনের
প্রধান উৎস কৃষি। নানান ধরনের ধান, সবজি, সরিষা, ভুট্টা ও সবজির চারা
উৎপাদনে সারা দেশে কুমিল্লার অবস্থান শীর্ষ পর্যায়ে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের
ফুল-ফল ও মসলা জাতীয় ফলন উৎপাদনেও কুমিল্লার কৃষকরা দিন এগিয়ে যাচ্ছে। একই
জমিতে একাধিক বার ফসল উৎপাদনের কারণে এই জেলা সব সময়ই কৃষি সমৃদ্ধ। তবে
দিন দিন কমছে এই আবাদি জমির পরিমান। নতুন আবাসিক এলাকা তৈরী, কারখানা
স্থাপন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং উন্নয়ণ কর্মকান্ডে বিলীন হচ্ছে এই আবাদি
জমি। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে আবাদি জমির উপরি ভাগ কেটে
ইটভাটায় ইট তৈরীর কাচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া একটি ইটভাটার
ধুয়ায় চারপাশের কৃষি জমিতে ফলন উৎপাদনে পড়ছে ক্ষতিকর প্রভাব। ইটভাটার
পার্শ্ববর্তী কৃষকরা নিরুৎসাহিত হচ্ছে কৃষিতে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন,
জমির উপরি ভাগের যে জমি ফলন উপযোগী হয় তা বছরের পর বছর পরিচর্যার কারণে
তৈরী হয়। একবার ওই মাটি সরে গেলে তা পুণরায় কৃষি উপযোগী করা দুসাধ্য হয়ে
পড়ে। মাটি কেটে নেয়া এসব জমিতে ফসল উৎপাদন না হলেও জমির মালিকরা ওই স্থানে
অন্য কোন উপায়ে অর্থসংস্থান করা চেষ্টা করেন। ফলে জমিটি অনাবাদী হিসেবে পরে
থাকে বা ব্যবহার করা হয়। এছাড়া নগরায়ণের প্রভাবে কৃষি জমি থেকে বসতবাড়ি,
কলকারখানা স্থাপন, দোকান পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মানসহ বিভিন্ন কাজে
আবাদী জমি ব্যবহার করা হচ্ছে। আবদি জমি কমিয়ে আনায় কমে যাচ্ছে ফলন উৎপাদনের
ভিন্নতা। একাধিক এলাকায় একই রকম ফসল উৎপাদিত হচ্ছে।
বুড়িচং উপজেলা
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে বুড়িচং উপজেলায় কৃষি জমি থেকে বসত
বাড়িতে পরিবর্তিত জমির পরিমান ১৮.৩৯ হেক্টর, শিল্প কারখানায় পরিবর্তিত জমির
পরিমান ১৩.৬০ হেক্টর, কৃষিভিত্তিক শিল্পে পরিবর্তিত জমি ২০.১৫ হেক্টর,
গ্রামীণ রাস্তা, সড়ক, মহাড়কে ১৭.১০ হেক্টর, ইটভাটায় পরিবর্তিত ০.৫০ গেক্টর,
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তিত ০.৭৪ হেক্টর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের
উপ-পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, এখনো হাইব্রিড ফলনের উপর নির্ভরশীলতা
থাকায় আবাদী জমির কমে যাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাবটা দৃশ্যমান নয়। তবে এটা মোটেও
উচিত নয়। নগরায় হবেই, তবে জনসংখ্যা অনুপাতে আবাদী জমির পরিমান ঠিক রাখতে
হবে। এজন্য ভূমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষককে সতর্ক থাকতে হবে।