রণবীর ঘোষ কিংকর।
মহাষষ্ঠী
মানে সপরিবারে উমার পিতৃগৃহে আগমনের দিন। আজ সোমবার শারদীয় দুর্গাদেবীর
ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ এবং ষষ্ঠী বিহীত পূজা সন্ধ্যায় দেবীর আমন্ত্রণ ও
অধিবাসের মধ্য দিয়ে কুমিল্লার ৭৯৫টি পূজা মন্ডপে শুরু হবে শারদীয়
দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। আগামীকাল মঙ্গলবার মহাসপ্তামী তিথিতে কুমিল্লার
প্রতিটি পূজা মণ্ডপে দেখা দিবে উৎসবের আমেজ।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের
সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিটি পূজা মণ্ডপে নিছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত
করেছে জেলা পুলিশ। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে আনসার, পুলিশের পাশাপাশি টহল থাকবে
র্যাব ও সাদা পোশাকে থাকবে গোয়েন্দা পুলিশ। গুরুত্বপূর্ণ পূজা মন্ডপগুলোতে
থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মোবাইল টিম।
এর আগে রবিবার (১০ অক্টোবর)
সন্ধ্যায় সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লার ৭৯৫টি পূজা মণ্ডপে দুর্গা দেবীর বোধন
অনুষ্ঠিত হয়। শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে এই বোধনের মাধ্যমে
দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনা পূজা করা হয়।
মণ্ডপে-মন্দিরে পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় এই বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত
হয়।
তিথি অনুসারে এবার দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে ঘোটকে (ঘোড়ায়) আগমন
করবেন। পাঁচদিনের অর্চনা শেষে দোলায় (নৌকা) মর্তলোক থেকে স্বামীগৃহ কৈলাশে
ফিরেন যাবেন।
পূরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু
করেন। বসন্তে তিনি পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়।
কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে লংকা যাত্রার আগে শ্রী
রামচন্দ্র দেবীর পূজার আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের অমাবস্যা তিথিতে, যা শারদীয়
দুর্গোৎসব নামে পরিচিত। দেবীর শরৎকালের পূজাকে এজন্যই হিন্দুমতে অকাল
বোধনও বলা হয়।
এদিকে, গত বছরের শারদীয় দুর্গোৎসবে করোনা ভাইরাসের
প্রাদুর্ভাবে কমেছিল জেলা পূজা মন্ডপের সংখ্যা। এ বছর করোনার সংক্রামণ যে
কোন সময়ের চেয়ে কম হওয়ায় বেড়েছে পূজা মন্ডপের সংখ্যা। যে কারণে প্রতিটি
পূজা মন্ডপে ভক্ত দর্শণার্থীদের সংখ্যাও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই
বিষয়গুলো বিবেচনা করেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারীতে থাকবে পূজা
মন্ডপগুলো।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আফজাল হোসেন জানান- এ
বছর কুমিল্লায় পূজা মন্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের সরকারি হিসেবে ৭৯০টি
পূজা মন্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শারদীয় উৎসব। মহানগর সহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ
পূজা মন্ডপগুলোতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিটি সার্কেল
অফিসকেও দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কয়েকটি পূজা মন্ডপ নিয়ে থাকবে বাড়তি
ভিজিলেন্স টিম। জেলায় সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য একযোগে কাজ করবে। সকলে সামাজিক
দূরত্ব বজায় রেখে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে শারদীয় উৎসব উদযাপনের অনুরোধ জানান
ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
কুমিল্লার ৭৯৫টি পূজা মন্ডপ হলো- মহানগরীতে ৬৬টি,
সদর উপজেলায় ২৫টি, সদর দক্ষিণ উপজেলায় ৩২টি, মুরাদনগর উপজেলায় সর্বোচ্চ
১৪৬, চৌদ্দগ্রামে ২২টি, বরুড়া উপজেলায় ৮৪টি, মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ১৩টি,
লাকসাম উপজেলায় ৩৬টি, লালমাই উপজেলায় ১৬টি, নাঙ্গলকোট উপজেলায় ৯টি, বুড়িচং
উপজেলায় ৪৩টি, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ১৮টি, চান্দিনা উপজেলায় ৭২টি,
দেবীদ্বার উপজেলায় ৯০টি, হোমনা উপজেলায় ৫৩টি, তিতাস উপজেলায় ১৬টি,
দাউদকান্দি উপজেলায় ৪৭টি পূজা মন্ডপ, মেঘনা উপজেলায় ৭টি পূজা মন্ডপ।