ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
বিষমেশানো সেভেআপ খাইয়ে যুবককে হত্যা
Published : Sunday, 24 October, 2021 at 12:00 AM
 এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিশোধ নিতে দেবীদ্বারের অটোরিক্সা চালক ইউনুছকে বিয়ের প্রলোভনে সাঝিয়ে নিয়ে সেভেন আপের সাথে ইঁদুর মারার বিষ মিশিয়ে পান করিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে ঘাতক সোলেমান জানিয়েছেন।
কুমিল্লা দেবীদ্বারের রিক্সাচালক ইউনুছ(৩৯) কø-লেছ হত্যা মামলা দায়েরের ৪দিন পর তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-১১, সিপিসি-২’র, অভিযানে হত্যামামলার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারীকে চিহ্নীতপূর্বক গ্রেফতার করেছে।
বিষয়টি শনিবার বিকেল সোয়া ৫টায় র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-১১, সিপিসি-২এর কুমিল্লা কোম্পানী অধিনায়ক উপ-পরিচালক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন’র সাথে সেল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ইতিমধ্যে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই তথ্য র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
অপর দিকে এ বিষয়ে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আরিফুর রহমান’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, র‌্যাব কর্তৃক আসামী গ্রেফতারের বিষয়টি তিনি জানেননা। তাদের নিকট র‌্যাবের পক্ষ থেকে গ্রেফতার হওয়া আসামী হস্তান্তরও করেননি।
ঘটনাটি ঘটে গত ১৭ অক্টোবর দিবাগত রাতের কোন এক সময়। দেবীদ্বার উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের তুলাগাঁও গ্রামের জাফরাবাদ- মনিপুর পাড়ার নির্জণ বিলের পাশের খালে রিক্সাচালক ইউনুছ(৩৯) মরদেহ পাওয়া যায় । নিহত ইউনুছ উপজেলার তুলাগাঁও গ্রামের হারেস মিয়ার পুত্র, পেশায় তিনি একজন ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা চালক ছিলেন। ওই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী অহিদা আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামী করে দেবীদ্বার থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন।
ক্লু-লেছ এ হত্যা মামলাটি র‌্যাব-১১, সিপিসি-২এর দৃষ্টিগোচর হলে তারা রহস্য উদঘাটনে গত বৃহস্পতিবার থেকে মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ভিকটিমের সাথে কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার তুলাগাঁও গ্রামের মৃত ছায়েদ আলী ব্যাপারীর ছেলে মোঃ সোলায়মান হোসেন (৫৫)’র সাথে  যোগাযোগ ছিল বলে জানতে পারেন। তবে নিহতের পরিবার জানান, তার সাথে কারো কোন বিরোধ বা হত্যাকান্ডে কারো সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়ে কোন ধারনা নেই।
সোলেমান হোসেন’র সাথে নিহত ইউনুছ’র সখ্যতা ছিল, তিনি পেশায় কৃষক এবং নেশাখোর ছিলেন। তিনি কৃষক হলেও সাপধরা তার অন্যতম পেশা ছিল।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানের জন্য সোলায়মান হোসেন’র বাড়িতে গেলে তার পরিবার জানায় যে, সোলায়মান হোসেন তার মেয়ের বাড়ি মেহেরপুরে গেছেন। পরবর্তীতে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও মোবাইল ফোনটি বন্ধ পান। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে উক্ত এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখা হয়। পরবর্তীতে গত শুক্রবার দিবাগত রাত অর্থাৎ শনিবার ভোরে দেবীদ্বার থানাধীন তুলাগাঁও এলাকায় সোলায়মান হোসেন’র অবস্থান সনাক্ত করে তাকে আটকের পর প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করাকালে তার কথাবার্তা সন্দেহ জনক মনে হয়।  ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে র‌্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লায় নিয়ে আসার পর সোলেমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
র‌্যাব কার্যালয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে সোলায়মান হোসেন জানান, ভিকটিম তার পরিবারের মহিলা সদস্যদের উত্যক্ত করত এবং নানা ধরনের কু-প্রস্তাব দিত। বিষয়টি তার পরিবার তাকে জানালে ভিকটিমের প্রতি তার প্রচন্ড রাগ ও আক্রোশ তৈরী হয়। পরবর্তীতে সে ভিকটিমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ভিকটিমের সাথে সখ্যতা তৈরী করে। সে সাপধরাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজে ভিকটিমকে সাথে নিয়ে যেত। এতে ভিকটিমের সাথে এক ধরনের সম্পর্ক তৈরী হয়। এক পর্যায়ে ভিকটিম সোলায়মান হোসেনকে জানায়, সে আরেকটি বিয়ে করতে চায় এবং তাকে পাত্রী দেখতে বলে।
সোলায়মান হোসেন ভিকটিমকে পাত্রী দেখার আশ্বাস দিয়ে যাই-যাচ্ছি বলে কালক্ষেপন করতে থাকে। গত রোববার সকালে সোলায়মান হোসেন ভিকটিমকে জানান, তারা সন্ধ্যায় পাত্রী দেখার জন্য যাবে এবং চান্দিনা সদরে একটি সেলুনে ভিকটিমের চুল-দাড়ি কাটিয়ে তার মনে বিশ্বাস তৈরী করেন। ভিক্টিম ইউনুছ গত রোববার বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় নতুন শার্ট, জুতা পরে সেজেগুজে পরিপাটি হয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিল।
সোলায়মান হোসেন স্থানীয় দোকান থেকে সেভেন আপ ও ইঁদুর মারার বিষ ক্রয় করে রাখেন। রোববার দিবাগত রাত আনুমানিক ৯টায় পাত্রী দেখতে যাওয়ার কথা বলে ভিকটিমকে নিয়ে কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার জাফরাবাদ (মনিপুর) গ্রামস্থ তুলাগাঁও টু জাফরাবাদ (মনিপুর) যাওয়ার রাস্তায় নির্জন স্থানে গিয়ে ভিকটিমকে সেভেন আপের সাথে ইঁদুর মারার বিষ মিশিয়ে খাওয়ায় এবং ভিকটিমকে অচেতন অবস্থায় রাস্থার পাশের খালের পানিতে ফেলে দেয়। ভিকটিমের মৃত্যুর বিষয়ে কেউ তাকে সন্দেহ করবেনা মনে করে সে তার নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিল।
কিন্তু র‌্যাব সদস্যরা তার বাড়িতে গিয়েছে সংবাদ পেয়ে সে কয়েকদিন আত্মগোপনে থাকে এবং শুক্রবার গভীর রাতে পরিবারের সাথে দেখা করার জন্য এলাকায় প্রবেশ করলে র‌্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা কর্তৃক তাকে গ্রেফতার করেন।