ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
গ্রেফতারের পর ইকবাল কক্সবাজার থেকে কুমিল্লায়
রহস্য উদ্ঘাটনে চলছে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ
Published : Saturday, 23 October, 2021 at 12:00 AM, Update: 23.10.2021 1:02:19 AM
রহস্য উদ্ঘাটনে চলছে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদমাসুদ আলম।।
কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন শরীফ রাখার ঘটনায় অভিযুক্ত ইকবাল হোসেনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে চলছে নানা তৎপরতা। এ ঘটনায় কে বা কারা জড়িত তার তথ্য বের করতে। কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করে কুমিল্লায় নিয়ে আসার পর কুমিল্লা পুলিশ লাইন্সে ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে রহস্য উদঘাটনে পুলিশের বিভিন্ন টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। কক্সবাজার থেকে শুক্রবার (২২ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে ইকবালকে বহন করা পুলিশের গাড়ি কুমিল্লা পুলিশ লাইন্সে পৌঁছায়। এরআগে ভোর সাড়ে ৬টার দিকে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে তাকে নিয়ে আসা হয় কুমিল্লায়। এরপর সাড়ে ১২টা পুলিশ লাইন্সে পুলিশের হেলমেট ও বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত করেন ইকবাল হোসেনকে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর হোসেন বলেন, আটকের পর কক্সবাজার থেকে কুমিল্লায় অভিযুক্ত ইকবালকে কুমিল্লায় আনা হয়। এরপর তাকে কুমিল্লা পুলিশ লাইন্সে রাখা হয়। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঘটনার বিস্তারিত জানানো হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে ইকবালকে কুমিল্লায় আনার খবরে সকাল থেকেই গণমাধ্যম কর্মীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও পুলিশ লাইন্সের গেটে অবস্থান নেয়। পরে সাংবাদিকদের অনুরোধে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে শুধু ছবি ও ভিডিও ধারনের জন্য সাংবাদিকদের সামনে আনা হয়। এ সময় তার মাথায় হেমলেট ও শরীরে বুলেট প্রুফ জেকেট ছিল।
রহস্য উদ্ঘাটনে চলছে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদএর আগে  কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহান সরকারের নেতৃত্বে তাকে আনতে কক্সবাজার যায়। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার দিকে জেলা পুলিশের এ টিম ইকবালকে কুমিল্লায় আনতে রওয়ানা দিয়ে ভোরে কক্সবাজার পৌঁছে। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে নিয়ে শুক্রবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে কুমিল্লার পথে যাত্রা শুরু করে পুলিশের ওই টিম। নানুয়ার দিঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সেই ইকবালকে ঘটনার পর থেকে হন্যে হয়ে খুজছিল পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত ঘুরাঘুরি করার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। এ সময় তার চোখে চশমা ছিল।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, ইকবালকে আনা হয়েছে। তাকে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি বলেন আমরা সিসিটিভিতে যে ইকবালকে শনাক্ত করে ছিলাম এটা সেই ইকবাল।
গত ১৩ অক্টোবর ভোর রাতে নগরীর নানুয়ার দীঘির পাড় এলাকার একটি পূজামণ্ডপে কোরআন রেখেছিল অভিযুক্ত ইকবাল। যা প্রকাশ হওয়া সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় কুমিল্লা নগরীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। পড়ে সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়ে ইকবালই পাশের দারোগাবাড়ি মসজারের মসজিদ থেকে পবিত্র কোরআন নিয়ে গভীররাতে নানুয়ার দীঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে রাখেন।
এদিকে ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের নানুয়ার দীঘির পাড় পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা নিয়ে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কুমিল্লায় বিভিন্ন থানায় ৯ মামলায় এজাহানামীয় ও অজ্ঞাত অন্তত ১০০০ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় পাঁচটি, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় দুটি এবং দাউদকান্দি ও দেবীদ্বার থানায় একটি করে মামলা হয়েছে। ৯১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলায় ১০০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৬ জনকে গ্রেফতারর করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ পাওয়ার ঘটনার জের ধরে তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেÑ কে বা কারা জড়িত এ ঘটনার সাথে। এর মধ্যে কুমিল্লার পুলিশ নানুয়া দীঘির পাড়ের কয়েকটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও বিশ্লেষণ করে ইকবাল নামে ওই যুবককে শনাক্তের কথা জানায়।
পুলিশ বলছে, এক সময় রঙ মিস্ত্রির কাজ করা ইকবালকে এলাকাবাসী একজন ‘ভবঘুরে ও মাদকাসক্ত’ হিসেবে জানে। আর ইকবালের মা আমেনা বিবির ভাষ্য, তার ছেলে দশ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন।