স্টাফ রিপোর্টার: কুমিল্লায় বিষাক্ত তরল বর্জ্যে অর্ধশত গ্রামের ক্ষতি হচ্ছে অভিযোগ করে এর প্রতিকার চেয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী মো: শাহাব উদ্দিন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে কুমিল্লা জেলা সমবায় ও কৃষক সংহতি পরিষদ। গত এক সাপ্তাহ ধরে ঢাকায় মন্ত্রণালয়গুলোতে গিয়ে ও কুমিল্লায় এ স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা। এ সময় কুমিল্লা জেলা সমবায় ও কৃষক সংহতি পরিষদের উপদেষ্টা সিরাজুল হক ও আহ্বায়ক এডভোকেট আকতার হোসেনসহ ২০ সদস্যের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রীদের কাছে স্মারকলিপি পেশ করার পাশাপাশি কুমিল্লা ইপিজেড এবং এর বাইরের দুইটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের রাসায়নিক (বিষাক্ত) তরল বর্জ্য আশেপাশের অর্ধশতাধিক গ্রামের ফসলের জমি, খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয়ের পানিতে মিশে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। কুমিল্লা জেলা সমবায় ও কৃষক সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক এডভোকেট আকতার হোসেন বলেন, কুমিল্লা ইপিজেড এবং এর বাইরের দুইটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের রাসায়নিক (বিষাক্ত) তরল বর্জ্য আশেপাশের অর্ধশতাধিক গ্রামের যে মারাত্মক ক্ষতি করছে এ বিষয়ে মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি এবং সার্বিক সমস্যা মৌখিকভাবে উপস্থাপন করেছি। এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে মাননীয় মন্ত্রীদ্বয় আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি জানান, ড. শামীমের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তরের ৬ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দল দুই দিন ধরে গ্রামগুলো পরিদর্শন করে গেছেন।
স্মারকলিপিতে কৃষক ও সমবায়ীরা দাবি করেন, তরল বর্জ্যের কারণে জলজ উদ্ভিদ-মাছ মরে যাচ্ছে, কালো পানি থেকে ছড়াচ্ছে উৎকট গন্ধ। আগে কৃষি জমির পানিতে কাজ করলে শরীরে চুলকানি হতো, এখন পচন ধরে। দেড়শ’ বছরের পুরনো কুমিল্লা শহরের পয়ঃ ও পানি নিষ্কাশনের জন্য আজও স্যুয়ারেজ পদ্ধতি চালু হয়নি।
সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ বছরেও জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগের নিরসন হয়নি। বর্তমানে এ শহরে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ বাসিন্দা রয়েছে। এখানকার পয়ঃ ও পানি ৩টি খাল দিয়ে দক্ষিণের ডাকাতিয়া নদীতে প্রবাহিত হয়ে থাকে। এতে বলা হয়, দখল-দূষণে সরু হয়ে যাওয়া এসব খালের পানির সঙ্গে ইপিজেডের বিষাক্ত রাসায়নিক তরল বর্জ্য দিশাবন্দ, ঢুলিপাড়া, কাজীপাড়া, উত্তর হীরাপুর, শ্রীবল্লভপুর, মোস্তফাপুর, গোপিনাথপুর, দক্ষিণ রামপুর, গোপালনগর, বামিশা, সাতবাড়িয়া, যশপুর, জয়পুর, কদমতলী, শাকতলা, নোয়াগাঁও, সুলতানপুর, দুর্গাপুর, লক্ষ্মীপুর, হোসেনপুর, নোয়াপাড়া, লোলবাড়িয়া, শ্রীনিবাস, উত্তর বিজয়পুর, ছনগাঁওসহ শহরের দক্ষিণাংশের অর্ধশতাধিক গ্রামের কৃষিজমি, খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয়ের পানিতে মিশছে। এ ছাড়া দক্ষিণ দুর্গাপুর এলাকার সফিউল আলম স্টিল মিল ও বাতাবাড়িয়া এলাকার সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎ প্রকল্পের বর্জ্য এসব এলাকার পানিতে মিশে একাকার হয়ে কৃষি জমির ফসল, গাছপালা, বাড়িঘর ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এ ছাড়াও বিষাক্ত বর্জ্যে জলজ উদ্ভিদ-মাছ মরে যাচ্ছে, কালো পানি থেকে ছড়াচ্ছে উৎকট গন্ধ। কৃষি শ্রমিকরা জমির পানিতে কাজ করলে শরীরে চুলকানি হতো, এখন পচন ধরে। এর প্রতিকার করা না গেলে শহরের দক্ষিণের অন্তত ৪০ কিলোমিটার এলাকার মানুষজনকে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে।
এর আগে কুমিল্লা জেলা সমবায় কৃষক সংহতি পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সমবায় সমিতির সদস্য এবং কৃষকদের নিয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে ক্ষতিকর বর্জ্যের প্রতিকার চেয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
দক্ষিণ কুমিল্লা বাঁচাও সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে গঠিত কুমিল্লা জেলা সমবায় ও কৃষক সংহতি পরিষদ গঠন করা হয়। কমিটিতে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো: মনিরুল হক চৌধুরী, উপদেষ্টা মো: সিরাজুল হক, উপদেষ্টা কাজী নাজমুস সা’দাত। অ্যাডভোকেট মুহম্মদ আখতার হোসাইনকে আহবায়ক ও শওকত শাহীনকে সদস্য সচিব করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়। কমিটিতে আছেন যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে ডা. ইয়াছিন, জামাল হোসেন, আমিনুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, সদস্য হিসেবে আছেন হারুনুর রশিদ, মোতাহের হোসেন, শামছুল হক, আইয়ূব আলী, ফজলুল হক, মহসিন, মোতাহের চৌধুরী, তাজুল ইসলাম মানিক, আবদুস সাত্তার।