ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
তোলা হলো ৪ ট্রাক, সময় লাগবে উদ্ধার অভিযানে
Published : Thursday, 28 October, 2021 at 12:00 AM
বিডিনিউজ: অন্ধকার নেমে আসার পরও পদ্মার বুকে ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে কাজ চলেছে অনেকক্ষণ, উদ্ধার হয়েছে আরও একটি ট্রাক; তবে উল্টে যাওয়া ফেরিকে টেনে তোলার মূল অভিযানের কাজটি সহজ হচ্ছে না।
রাত সোয়া আটটায় বুধবারের মতো অভিযান স্থগিতের আগ পর্যন্ত ডুবে যাওয়া মোট চারটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ এর সদস্য (পরিকল্পনা ও পরিচালনা) দেলোয়ার হোসেন।
তখন পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাটে সকালে ঘটে যাওয়া এ ফেরি দুর্ঘটনায় হতাহতের কোনো তথ্য মেলেনি বলে তিনি জানান।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবার উদ্ধার অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উদ্ধার জাহাজ হামজার সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছি ফেরিটি। তবে এ জাহাজের সক্ষমতা কম হওয়ায় এ কাজে অগ্রগতিও কম।
উদ্ধার কাজে হামজার সঙ্গে যোগ দিতে পাটুরিয়ার পথে রয়েছে আরেক উদ্ধার জাহাজ প্রত্যয়।
বুধবার দিনভর উদ্ধার কাজে ছিল ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর কর্মীরা। দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা প্রাথমিক উদ্ধার কাজ চালিয়েছেন।  
বিআইডব্লিউটিএর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল আলম সন্ধ্যায় জানিয়েছিলেন, হামজা দিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনটি ট্রাক উদ্ধার হয়েছে। দুর্ঘটনায় কেউ নিখোঁজ নেই কিংবা কোনো হতাহতের তথ্যও মেলেনি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এর আগে বিকালে ঘটনাস্থলে এসে রো রো ফেরি শাহ আমানত উদ্ধার কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, “দুর্ঘটনার পরপরই আরিচা ঘাট থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজাকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। বিকাল ৪টা পর্যন্ত হামজা দুটি ট্রাক টেনে তুলতে সক্ষম হয়। কিন্তু মূল সমস্যাটা হচ্ছে ফেরিটিকে উদ্ধার করা।”
উদ্ধার অভিযান দীর্ঘতর হতে পারে বলে আভাস দেন তিনি।
উদ্ধার কাজে যুক্ত থাকা অন্য কর্মকর্তারাও বলছেন, পাটুরিয়া ঘাটের কাছেই কাত হয়ে উল্টে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধারে সময় লাগবে। কেননা উদ্ধার জাহাজ হামজার সক্ষমতার চেয়ে ফেরিটির ওজন অনেক বেশি।  
বিআইডব্লিউটিএর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “ফেরিটির ভেতরে পানি ঢুকে এটির ওজন হাজার টনের বেশি দাঁড়িয়েছে বলে ধারণা করা যায়। কিন্তু হামজার সক্ষমতা মাত্র ৬০ টন। হামজাকে দিয়ে কিভাবে ফেরিটিকে উদ্ধার করা যাবে সে বিষয়ে কর্মকর্তারা আলোচনা করছেন।”
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে যানবাহন নিয়ে বুধবার সকাল ৯টার কিছুক্ষণ পর মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয় রো রো ফেরি শাহ আমানত। পদ্মা পার হয়ে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে পৌঁছানোর পরপরই সেটি কাত হয়ে নদীতে উল্টে যায়।
পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা বলেছেন, ওই ফেরিতে ১৭টি পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়াও একটি প্রাইভেটকার ও আটটি মোটরসাইকেল ছিল। ঘাটে ভেড়ার পর তিনটি ট্রাক নামতে পারলেও বাকিগুলো ফেরির সঙ্গেই ডুবে যায়। পরে কয়েকটি ট্রাক ও ভ্যানকে নদীতে ভাসতে দেখা গেছে।
ঘটনার পর, ঘাটের ট্রলার চালক ও বিআইডব্লিউটিসির ভাসমান কারখানার লোকজন ডুবন্ত ট্রাকচালক ও লোকজনকে উদ্ধার করেন। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। কেউ নিখোঁজ আছেন এমন তথ্যও পাওয়া যায়নি।
ফেরিতে থাকা ট্রাকগুলোর বেশির ভাগই যশোরের বেনাপোল স্থল বন্দরের আমদানি করা পণ্যে বোঝাই ছিল। ফেরিটি ছাড়ার কিছুক্ষণ পরই সেটিতে পানি উঠতে শুরু করে বলে জানিয়েছেন ট্রাক চালকরা। কোনরকমে সেটিকে তীরে ভেড়ানোর পর তিনটি ট্রাক নামতে পারে। বাকি যানবাহনসহ ফেরিটি কাত হয়ে উল্টে যায়।
ট্রাকচালক ও মালিকরা বলছেন, ঘাটে ফেরি ভেড়ানো অনেক সময় সাধ্য বিষয়। ফেরি চালক যদি ঘাটে ভেড়ানোর জন্য সময় নষ্ট না করে যানটিকে কোনো চরে তুলে দিতেন তাহলে হয়ত আপাতত রক্ষা হত। এভাবে পণ্যসহ যানবাহনগুলো নদীতে পড়ে যেত না বলে তাদের ধারণা।
ফেরি থেকে ভেসে যাওয়া আফজাল সার্ভিসেস নামে একটি সংস্থার কাভার্ড ভ্যানের চালক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, সোমবার বেনাপোল স্থল বন্দর থেকে কাভার্ডভ্যান বোঝাই রাসায়নিক নিয়ে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। বুধবার সকালে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে আমানত শাহ ফেরিতে কাভার্ডভ্যান নিয়ে উঠেন তিনি। ফেরিটি পাটুরিয়া ঘাটে এসে ভেড়ার সময়ই কাত হতে শুরু করে।
তিনটি ট্রাক ফেরি থেকে নেমে যেতে পারে। চতুর্থ ট্রাক ছিল সেলিমের। ডুবতে থাকা ফেরি থেকে সেলিম ট্রাক নিয়ে দুটো ঘাটের চাকা পন্টুনে তোলেন। ফেরিটি নিচু হতে থাকলে সেলিমের ট্রাক আটকে যায়। এরপর জীবন বাঁচাতেই ট্রাক ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
এ ভ্যান চালক বলেন, ফেরি ছাড়ার কিছুক্ষণ পরই পাটাতনে পানি দেখতে পান তিনি। তখন ভেবেছিলেন হয়তো তার ট্রাকের রেডিয়েটার ফেটে পানি বেরিয়ে গেছে। হেলপারকে বলেন দেখে আসতে।
হেলপার এসে জানায় রেডিয়েটর ফাটেনি, ফেরির বাম পাশ থেকে ডান পাশ পানি গড়িয়ে যাচ্ছে। তখনও ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি সেলিম। ফেরি ঘাটে ভেড়ার আগে ট্রাকের লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে দেখেন পেছনে অনেক পানি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সেলিম বলেন, ফেরির চালক সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ফেরিটি পাটুরিয়া ঘাটে ভেড়ান। দ্রুত তিনটি ট্রাক নেমে যায়। চতুর্থ ট্রাকটি ছিল তার। তিনিও ইঞ্জিনে সর্বশক্তি দিয়ে পন্টুনে ওঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফেরিটি অনেকখানি ডুবে যাওয়ায় পন্টুনের সঙ্গে সেলিমের ট্রাকের ডিজেল ট্যাংক আটকে যায়। সেখানেই টাংক ফেটে সব তেল পড়ে যায়।
একপর্যায় ডুবতে থাকা ফেরির সঙ্গে তার ভ্যানের একটা অংশের ডুবে যায়। তখন হেল্পারকে নিয়ে ট্রাক ছাড়েন তিনি।
আরেক ট্রাকচালক আমির হোসেন বলেন, ট্রাক চালিয়ে নির্ঘুম রাত কেটেছে। তাই ফেরিতে উঠিয়ে ঘুম দিয়েছিলেন। হঠাৎ পানির স্পর্শে ঘুম ভেঙে যায়। তিনি বুঝতে পারছিলেন না কোথায় আছেন, কী হচ্ছে। এরপর কোনোরকমে ট্রাকের দরজা খুলতে পারেন। তখন কয়েকজন ট্রলার চালক দড়ি ফেলে তাকে টেনে তোলেন।
ট্রাক ড্রাইভাররা বলছেন, ফেরিতে থাকা অবস্থায় অনেক ড্রাইভার ও হেলপার সাধারণত ঘুমিয়ে থাকেন তাদের কেউ আটকা পড়েছেন কিনা তা তারা নিশ্চিত নন।
তবে প্রথম দিনের মতো উদ্ধার অভিযান শেষ করার পর বিআইডব্লিউটিএ এর সদস্য দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন হতাহত কিংবা নিখোঁজ নেই কেউ।