মাসুদ আলম ||
কুমিল্লায়
পূজামণ্ডপে বিশৃঙ্খলায় জড়িত সন্দেহে বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের ৫২ জনসহ এই
পর্যন্ত ৭২ জনকে গ্রেফতার হয়েছে। এদিকে নানুয়ার দিঘির পাড় পূজামণ্ডপে
পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় গ্রেফতার অভিযুক্ত ইকবাল পুলিশি রিমান্ডে
দিচ্ছেন নতুন নতুন তথ্য। এতে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনে ও ইন্ধনদাতাদের
শনাক্তে সহজ হবে জানিয়েছেন মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা।
তবে
রিমান্ডে থাকা পরিত্র কোরআন অবমাননা মামলার চার আসামী যে সব তথ্য দিচ্ছেন
তাও গভীরভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এছাড়াও এই ঘটনায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তিদের নামও উঠে আসছে বলে জানান সিআইডি। এদিকে কুমিল্লার ঘটনায় জেলায়
ধর্ম অবমাননা, আইসিটি আইন লঙ্ঘন ও সহিংতার অভিযোগে এ পর্যন্ত ১১টি হয়েছে।
এর মধ্যে তদন্তভার পেয়ে কোরআন অবমাননা ও আইসিটি আইনের দুইটি মামলায়
গ্রেফতারকৃত ইকবালসহ পাঁচজনের দেওয়া তথ্য ব্যাপকভাবে অনুসন্ধানে নেমেছে
সিআইডি। এদিকে আইসিটি মামলায় ফেসবুকে লাইভের করার বিষয়টি স্বীকার করে ফয়েজও
দিয়েছেন নতুন অনেক তথ্য। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত
থাকায় আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সিআইডি’র একাধিক সূত্রে জানা
যায়, ঘটনার পর পরই ৯৯৯ -এ পুলিশকে কল দেওয়া রেজাউল হোসেন ইকরাম ইতোমধ্যে
বিএনপির রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করলেও ঘটনার সাথে কোন ইন্ধন
ছিলো কিনা সেই বিষয়ে মুখ খুলেনি। তবে তার ফেসবুক প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে
দেখে গেছে স্থানীয়ভাবে সে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক
সাক্কুসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় দেওয়া পোস্ট পাওয়া
গেছে।
এদিকে মাজারের দুই খাদেম ফয়সাল ও হুমায়ুনের রাজনৈতিক কোন পরিচয়
এখনও মেলেনি। তবে প্রধান অভিযুক্ত ইকবালকে ভবঘুরে বললেও সে তা নয়। পুলিশি
জিজ্ঞাসাবাদে স্বাভাবিকভাবে আচরণ করে যাচ্ছেন।
এদিকে কুমিল্লায়
পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল হোসেনের মামলার
নথি অনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে হস্তান্তর
করা হয়েছে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান বলেন,
পবিত্র কোরআন অবমাননার মামলাটি গত ২৪ অক্টোবর রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের
নির্দেশে তদন্তের জন্য সিআইডিকে দেওয়া হয়। সে আলোকে মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায়
মামলার সব ডুকুমেন্ট অনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আমরা এরই মধ্যে দুইটি মামলা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত শুরু করেছি। যাতে ঘটনার
গভীরে যাওয়া যায় এবং ইকবালের ইন্ধনদাতা ও জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের
আওতায় আনতে কাজ করছে সিআইডি।
এদিকে রিমান্ডে ইকবাল যেসব তথ্য দিচ্ছেন তা
যাচাই-বাচাই করে দেখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে সেসব তথ্য
বলা যাচ্ছে না। মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত হচ্ছে পূজামণ্ডপ থেকে পুলিশের
উদ্ধার করা পবিত্র কোরআন। তবে ওই কোরআন শরিফে অনেকেরই ফিঙ্গারপ্রিন্ট থাকায়
আমরা (সিআইডি) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এতে সুনির্দিষ্ট কারও ফিঙ্গারপ্রিন্ট
পাইনি।
এদিকে জেলা পুলিশের সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লায় কোরআন অবমাননা,
পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় কুমিল্লার কোতয়ালী, সদর দক্ষিণ,
দাউদকান্দি ও দেবিদ্বার থানায় পৃথক ১১টি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোতে
এজাহারনামীয় ৯২ জনসহ ১১০২জনকে আসামী করা হয়েছে। এরমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন
৭২জন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে দলীয় পরিচয়ে বিএনপির ৩৬ জন এবং জামায়াত ও
শিবিরের ১৬ জন নেতাকর্মী রয়েছেন।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লা
নগরীর কান্দিরপাড় দক্ষিণ জেলা বিএনপির এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক
প্রশ্নের জবাবে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ জাহাঙ্গীর
আলম বলেন পুলিশের তথ্যানুযায়ী গ্রেফতারকৃত ৩৬ জন কেউ বিএনপির নেতাকর্মী নয়।
এছাড়া এ পর্যন্ত কেউ গ্রেফতারও হয়নি। কারণ বিএনপির নেতাকর্মীরা এই ঘটনার
সাথে জড়িত নয় তিনি দাবি করেন।