নিজস্ব
প্রতিবেদক: ওহিদুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার রাতে ছোট ভাইকে বিদেশে পাঠানোর জন্য
ঢাকায় এসেছিলেন। রাতে ভাইকে ফ্লাইটে তুলে দিয়ে ঝিনাইদহে ফেরার উদ্দেশ্যে
ভোরে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন। কিন্তু ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা
বাড়ার প্রতিবাদে ঘোষণা ছাড়াই শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে মালিক-শ্রমিকরা
রাজধানীসহ সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখায় ওহিদুল ইসলাম পড়েছেন চরম
ভোগান্তিতে। এ ভোগান্তি আজ গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে আসা সব যাত্রীর।
গাবতলী
থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত স্বাভাবিক সময়ে জনপ্রতি বাসভাড়া ১০০ থেকে ১২০
টাকা। সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে জনপ্রতি
ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা করে। রাস্তায় বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়েই এ
অতিরিক্ত ভাড়া গুনে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের।
শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের দুর্ভোগের এ চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে
দেখা যায়, গাবতলী টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার সব বাস বন্ধ রয়েছে। ফলে ঢাকা
থেকে জেলা শহরগুলোতে চলাচলে যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। আর এই সুযোগে
যাত্রীদের কাছ থেকে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছেন কিছু প্রাইভেটকার ও
মাইক্রোবাসচালক।
প্রাইভেটকারের পেছনে চারজন ও সামনে দুজন যাত্রী নিয়ে
পাটুরিয়া ঘাটে ট্রিপ দিচ্ছেন চালকরা। জনপ্রতি নেওয়া হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০
টাকা। প্রতি ট্রিপে তারা পাচ্ছেন তিন হাজার টাকা। আবার সাত সিটের
মাইক্রোবাসে ৯-১০ জন করে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে।
যশোর যাওয়ার জন্য পরিবারসহ
সকাল ৭টায় গাবতলী এসেছেন শামীম হোসেন। তিনি বলেন, পারিবারিক একটি
অনুষ্ঠানে যেতে সকালে গাবতলী এসেছি। আজ থেকে যে বাস বন্ধ তা আমি জানতাম না।
এখন রাস্তায় এসে দেখি বাস নেই। গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত ভাড়া
চাইছে ৫০০ টাকা। আর যদি যশোর সরাসরি যায় তাহলে ভাড়া চাইছে দুই হাজার টাকা।
এখন যাবো কিনা সেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি।
পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বাধ্য হয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুনে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত যেতে হচ্ছে বলে জানান যাত্রী শহিদুল ইসলাম।
তিনি
বলেন, আমি যাবো মাগুরায়। একটি পারিবারিক সমস্যার কারণে হঠাৎ যেতে হচ্ছে।
না গিয়ে উপায় নেই। টার্মিনালে এসে দেখি গাড়ি বন্ধ। আরিচাঘাট পর্যন্ত
প্রাইভেটকারে ভাড়া চাচ্ছে ৫০০ টাকা। এই ভাড়ায় আমি মগুরা পর্যন্ত যেতে
পারতাম।
তবে জনপ্রতি ৫০০ টাকা ভাড়া বেশি না, এমনটাই দাবি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসচালকদের।
চালক
আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ঠিকই আছে ৫০০ টাকা করে নিচ্ছি। আমাদেরও
রাস্তায় কয়েক জায়গায় টাকা দিতে হবে। টার্মনালে দিছি ১৫০ টাকা। সামনে আরও
দিতে হবে।
জানা গেছে, বুধবার (৩ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে ডিজেলের মূল্য
লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করেছে সরকার। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর)
পরিবহন খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে ভাড়া বাড়ানোর
সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ
বিষয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কোনো
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ ঘোষণা ছাড়াই শুক্রবার সকাল থেকে চলছে
অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট।
তবে তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে
শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ধর্মঘটের ডাক দেওয়া
হয়। জ্বালানি তেলের বর্ধিত দাম না কমানো পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলেও জানান
বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম।