গ্লাসগোতে
জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিয়ে লন্ডন সফর শেষে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের
পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সকালে লন্ডনের হিথ্রো
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি
ফ্লাইটে রওনা হয়ে প্যারিসের স্থানীয় সময় বেলা সোয়া ১১টার পর তিনি শার্ল দ্য
গলআন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে
স্ট্যাটিক গার্ড দেওয়া হয়।
ফ্রান্স সফরের প্রথম দিনে দেশটির প্রেসিডেন্ট
ইমানুয়েল ম্যাক্রোর আমন্ত্রণে তার সরকারি বাসভবন এলিসি প্রাসাদে যাবেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে দুই নেতার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।
বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি চুক্তি, দলিল এবং
সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজের পর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ কাসতেক্সের বাসভবনে
যাবেন। সেখানে দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
ফ্রান্সের
ব্যবসায়ীদের অন্যতম সংগঠন মুভমেন্ট অব দ্য এন্টারপ্রাইজ অব ফ্রান্স
(এমইডিইএফ) এর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন
প্রধানমন্ত্রী। অংশ নেবেন প্যারিস পিস ফোরামের (পিপিএফ) অনুষ্ঠানেও।
এছাড়া
ইউনেস্কো সদর দপ্তরে সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান’ পুরস্কার বিতরণ এবং ইউনেস্কোর ৭৫তম বার্ষিকীর উদ্বোধন
অনুষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের
প্রস্তাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই পুরস্কার চালু
করেছে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা – ইউনেস্কো। গত ১১
ডিসেম্বর ইউনেস্কোর নির্বাহী পরিষদের শরৎকালীন অধিবেশনে এ পুরস্কার
প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বঙ্গবন্ধুর নামে জাতিসংঘের কোনো সংস্থার
প্রবর্তন করা প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার এটি।
শিক্ষা, সংস্কৃতি,
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন অঙ্গনে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সদস্য
রাষ্ট্রগুলোর আর্থিক সহযোগিতায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করে
ইউনেস্কো। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিমান ব্যক্তি বা ‘প্রতিষ্ঠানের নামে
এরকম ২৩টি ইউনেস্কো পুরস্কার এখন চালু আছে।
‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দি ফিল্ড অফ
ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ দেওয়া হবে প্রতি দুই বছরে একবার, যার আর্থিক মূল্য ৫০
হাজার ডলার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন গত বছর এক সংবাদ
সম্মেলনে বলেছিলেন, “ইউনেস্কোর মত জাতিসংঘের একটি সংস্থার প্রবর্তিত এ
পুরস্কার বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করবে,
বিশ্বময় সংস্কৃতিকর্মীদের সৃজনশীল অর্থনীতির বিকাশে অনুপ্রেরণা জোগাবে।”
৩১
অক্টোবর জাতিসংঘ আয়োজিত কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে স্কটল্যান্ডের
গ্লাসগোতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে অবস্থানকালে সম্মেলনের মূল
পর্বের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকে অংশ নেন।
গ্লাসগোতে
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিটেনের রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রিন্স
চার্লসসহ বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, বিভিন্ন সংস্থা প্রধানের সঙ্গেও
বৈঠক করেন।
কপ-২৬ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে গত ৩ নভেম্বর লন্ডনে পৌঁছান
প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১: বিল্ডিং
সাসটেইনেবল গ্রোথ পার্টনারশিপ’ শীর্ষক রোড শো উদ্বোধন ছাড়াও বিভিন্ন
কর্মসূচিতে অংশ নেন।
মঙ্গলবার লন্ডনের হোটেল ক্ল্যারিজ থেকে প্যারিসের
উদ্দেশে রওনা দিয়ে বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় প্রবাসী আওয়ামী লীগ
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দলীয়
নেতা-কর্মীদের তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সবার সঙ্গে সরাসরি
দেখা করা সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবার সঙ্গে দেখা হবে।
এসময়
নেতা-কর্মীদের দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে বলেন শেখ হাসিনা। আগামী
১৩ নভেম্বর প্যারিস থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা হয়ে ১৪ নভেম্বর সকালে দেশে
পৌঁছানোর কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।