ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
বাজারদর
মূল্যস্ফীতি না সাময়িক অস্থিরতা?
Published : Saturday, 20 November, 2021 at 12:00 AM, Update: 20.11.2021 10:13:20 PM
মূল্যস্ফীতি না সাময়িক অস্থিরতা?ড. মাহবুব উল্লাহ ||
'সভ্যতার ইতিহাস হলো দাম বৃদ্ধির ইতিহাস' কথাটি প্রবাদ বাক্যের মতো সুধী সমাজে প্রচলিত। আমরা যখন আমাদের বয়োবৃদ্ধ আপনজনদের সঙ্গে কথা বলি তখন বাজারে জিনিসপত্রের দাম সম্পর্কে কথা উঠলে তারা তাদের শৈশবে দেখা জিনিসপত্রের দাম সম্পর্কে আমাদের জানান। তাদের কথা শুনলে মনে হয়, তাদের ছেলেবেলায় জিনিসপত্র বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খুব সামান্য দামে কেনা হতো। বাংলার ইতিহাসে মোগল শাসনের সময় শায়েস্তা খান ছিলেন বাংলার সুবেদার। ইতিহাসের পাঠ থেকে জানা যায়, শায়েস্তা খানের আমলে টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত। চালের দাম এমন সস্তা হতে পারে, তা এই সময়ের কারও পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন। যতই দিন যাচ্ছে ততই বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। নগণ্যসংখ্যক জিনিসের নাম বলা যেতে পারে, যেগুলোর দাম বছরখানেক আগের দামের তুলনায় একটু সস্তা দামে পাওয়া যাচ্ছে। মানুষের ব্যবহূত জিনিসপত্রের দাম নিয়ে অনেক সময় আমরা ধন্দে পড়ে যাই।
পানি ছাড়া কোনো জীবজন্তু, মানুষ ও গাছপালা বাঁচতে পারে না। তাই পানির আরেক নাম জীবন। পানির পাশাপাশি যদি হীরার টুকরাকে তুলনা করি, তাহলে দেখা যাবে হীরার দাম এতই বেশি যে তা দেশের অধিকাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। হীরার টুকরা মানুষের জীবন বাঁচায় না। অথচ দেখা যায় জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় পানির কোনো দাম নেই, অথচ হীরার টুকরা খুবই দামি। এটাকে অর্থনীতিবিদরা 'ওয়াটার ডায়মন্ড প্যারাডক্স' বলে উল্লেখ করেছেন। যে কোনো কারণেই হোক সুদূর অতীত থেকে মানুষ হীরার টুকরাকে অতিমূল্যবান জিনিস হিসেবে বিবেচনা করেছে। কারণ হীরার টুকরা খনি থেকে উত্তোলন থেকে শুরু করে মানুষের ব্যবহার-উপযোগী বস্তু হিসেবে তৈরি করতে অনেক শ্রম ব্যয় হয়। পানি বিনামূল্যেই পাওয়া যেত। কিন্তু আমরা এখন বিশ্বের যেখানেই যাই না কেন, তৃষ্ণা নিবারণের জন্য বোতলজাত পানি পান করি। এই পানি অর্থের বিনিময়ে বিক্রয় করা হয়।
আশির দশকের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফারুক জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার কাছ থেকে পানি নিয়ে ব্যবসার এক মজার কাহিনি শুনেছি। একদিন এক ব্যক্তি তার সঙ্গে দেখা করে বললেন, তিনি পানির ব্যবসা করতে চান। অধ্যাপক ফারুক তার এই প্রস্তাবের কথা শুনে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে, পানি নিয়ে ব্যবসা হতে পারে। এর কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশে বোতলজাত পানির ব্যবসা শুরু হয়। এখন বাংলাদেশের বাজারে বেশ কয়েকটি কোম্পানি বোতলজাত পানি সরবরাহ করে। এই পানির কি আলাদা মূল্য আছে- যে কারণে এই পানি টাকার বিনিময়ে কিনতে হয়। মেনে নিলাম যে বোতলে পানি দেওয়া হয়েছে সেই বোতলের একটা দাম থাকতে পারে। কারণ এই বোতলটি কারখানায় তৈরি হয়েছে। পানির পরিমাণ নির্বিশেষে বোতলের আকারভেদ হয়। অন্যদিকে বোতলে যে পানি দেওয়া হয় তার সম্পর্কে দাবি করা হয় এটি জীবাণুমুক্ত। জীবাণুমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিতে হয়। এসব কারণেই বোতলজাত পানির একটা উৎপাদন ব্যয় আছে। উৎপাদন ব্যয়ের কারণেই বোতলজাত পানির ব্যবসায়ী টাকার বিনিময়ে পানি সরবরাহ করতে পারছেন।
বোতলজাত পানির দৃষ্টান্ত থেকে আমরা বুঝতে পারি, সময়ের প্রয়োজনে নতুন নতুন পণ্যসামগ্রী বাজারে আসতে পারে। বোতলজাত পানি এখন সেমিনার-সিম্পোজিয়াম-গোলটেবিল বৈঠক, বিয়েশাদিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেদার ব্যবহার হয়। বোতলজাত পানি পান করার পর যে শূন্য বোতলটি থাকে, তা আবর্জনা হিসেবে যত্রতত্র ছুড়ে ফেলা হয়। শেষ পর্যন্ত এগুলো সিটি করপোরেশনের ডাম্পিং স্টেশনে স্তূপীকৃত হয়। পথশিশুরা এগুলো অন্য ময়লা থেকে আলাদা করে সংগ্রহ করে রিসাইকেলকারী কারখানায় বিক্রি করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বোতলে পানির ব্যবসা শুধু সম্পদশালীদের কাজে আসে না; এই ব্যবসা আরও নতুন ধরনের ব্যবসা সৃষ্টি করেছে এবং নিরন্ন পথশিশুদের বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবেও কাজে আসছে।
আমরা যদি জিনিসপত্রের উৎপাদন নিয়ে ভাবি তাহলে দেখব দৈনন্দিন জীবনে আমরা যেসব জিনিস ব্যবহার করি, সেগুলোর কোনোটি আমরা উৎপাদন করিনি। তবে সমাজে কোনো কোনো শ্রেণি নিজের ভোগের জন্য উৎপাদন করে, বাজারে বিক্রয়ের জন্য নয়। যেমন কৃষকরা যে খাদ্যশস্য এবং শাকসবজি উৎপাদন করে, সেগুলো উদ্বৃত্ত না হলে নিজের ভোগের জন্য ব্যবহার করে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, মাঠে উৎপাদিত ফসল উদ্বৃত্ত না হলেও কৃষক অসময়ে বিক্রয় করতে বাধ্য হয়। 'অসময়ে' শব্দটি ব্যবহার করছি এ কারণে যে, ভালো দাম পাওয়ার জন্য সময়টি সঠিক নয়। উন্নয়নশীল দেশের কৃষি খাতে নিয়োজিত খুদে কৃষক এবং বর্গাচাষিরা এ ধরনের দুর্গতির মধ্যে পড়ে। কারণ, ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে তাদের মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়। এই ঋণের জন্য মহাজনরা চড়া সুদ দাবি করে। গরিব কৃষকরা ফসল ওঠার পরপরই এর একটা অংশ বিক্রয় করতে বাধ্য হয় ঋণ শোধ করার জন্য। এই পরিস্থিতি বাজারের একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত হলেও এটি মুক্তবাজার নয়। কারণ, গরিব কৃষকরা তাদের জন্য সুবিধাজনক সময়ে ফসল বিক্রি করতে পারে না। তারা যে সময়ে ফসল বিক্রি করে, সে সময়ে দাম থাকে কম। এভাবে বাজারে অংশগ্রহণকে বাধ্যতামূলক বাণিজ্যিকীকরণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, কখনও কখনও কোনো একটি সুনির্দিষ্ট পণ্য বাজারে দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে। সেই পণ্যের দাম হুহু করে বাড়তে শুরু করেছে। সাম্প্রতিককালের দৃষ্টান্ত দিতে হলে পেঁয়াজের দৃষ্টান্ত দেওয়া যায়। বাংলাদেশে যে পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়, তা দিয়ে প্রয়োজনের ২০ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হয়। কাজেই পণ্যটি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানি বিলম্বিত হলে এর দাম আকাশ ছুঁইছুঁই অবস্থায় পৌঁছে যায়। অতি সম্প্রতি ভারত থেকে পেঁয়াজ এনে ঘাটতি পূরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। কিন্তু ভারত সরকার অন্য দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে। ফলে বাংলাদেশে পেঁয়াজ সংকট তীব্র হয়। পেঁয়াজের মতো অভিজ্ঞতা আরও কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে গরিব শ্রেণির মানুষের জন্য ডাল একটি প্রয়োজনীয় খাদ্য। রাজনীতিবিদরা সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করার জন্য ডাল-ভাতের ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি বিভিন্ন সময়ে দিয়েছেন। ডাল একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদন। সেই ডালও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এভাবে বিদেশ থেকে আমদানি করা জিনিসের দেশীয় বাজারে দাম নির্ভর করে আমদানি মূল্যের ওপর। বিভিন্ন সময়ে খাদ্যের কিছু কিছু আইটেম দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে। দুষ্প্রাপ্যতা হ্রাস করার একমাত্র উপায় বিদেশ থেকে আমদানি। বাংলাদেশের জনগণ কত দামে এই জিনিস কিনবে, সেটা নির্ভর করে আমদানি মূল্যের ওপর।
গত শতাব্দীর ২০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের 'সাইলেন্ট চলচ্চিত্র' একটি নীরব ছায়াছবির টিকিটের দাম ছিল মাত্র ১ নিকেল। ৪০-এর দশকে যখন হলিউডের পরিচিতি তুঙ্গে তখন একটি সিনেমার টিকিট বিক্রি হতো ৫০ সেন্টে। ৬০-এর দশকে এটা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় দুই ডলার। পরবর্তীকালে এটা ছয় ডলার কিংবা এরও বেশি হয়ে যায়। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ধারাবাহিক নিয়মে জিনিসের দাম বাড়লে সেটা কোনো চিন্তার বিষয় নয়। আলোচনা শুরু করেছিলাম এই কথা বলে, 'সভ্যতার ইতিহাস হলো দাম বৃদ্ধির ইতিহাস'। স্বাভাবিকভাবে বাজারে সব পণ্যের দাম ধীরে ধীরে ও ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেলে তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ থাকে না। যদি বাজারে সব পণ্যের দাম মোটামুটি কাছাকাছি হারে বৃদ্ধি পায় তাহলে সেটা মূল্যস্ম্ফীতি বলে বিবেচিত হবে। কর্মসংস্থানের অভাব জনগোষ্ঠীর একটি নির্দিষ্ট অংশের মধ্যে দেখা যায়। অন্যদিকে সব পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে যে অর্থনৈতিক অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় মূল্যস্ম্ফীতি। বেকারত্ব জনগোষ্ঠীর সুনির্দিষ্ট অংশকে কষ্টে ফেললেও মূল্যস্ম্ফীতির অভাব সবার ওপর পতিত হয়। এ কারণে মূল্যস্ম্ফীতি বাজারনীতিতে ঝড়ের সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছর বিক্ষিপ্তভাবে কিছু সময়ের জন্য কিছু পণ্যের দাম বাড়তে দেখা যায়। কিন্তু যখন সব পণ্যের দাম একসঙ্গে বাড়তে শুরু করে, সেটাকে সঠিকভাবে আমলে না নিলে জনগোষ্ঠীর সব অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এখন বাজারে শাকসবজি থেকে শুরু করে মাছ-মাংস এবং ফলফলাদির দাম ৫০ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে লক্ষ্য করা যায়। এই অবস্থাটাই মূল্যস্ম্ফীতি। বাংলাদেশের অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছেন, তারা মূল্যস্ম্ফীতিকে দুই ভাগে ভাগ করেন। এর একটি হচ্ছে খাদ্যসামগ্রীর মূল্যস্ম্ফীতি এবং অন্যটি হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী-বহির্ভূত মূল্যস্ম্ফীতি। খাদ্যসামগ্রী-বহির্ভূত পণ্যের ক্ষেত্রেও মূল্যস্ম্ফীতির চাপ অনুভব করা যায়। ওষুধের দাম অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে জীবনযাপন করে এবং জীবনযাত্রার মান সম্পর্কে যতটা সচেতন হয়েছে, তাতে দেখা যায় ওষুধের নিয়মিত ভোক্তার সংখ্যাও কম নয়। গরিব-ধনী নির্বিশেষে সবার ওষুধের দরকার হয়। বাংলাদেশে উৎপাদিত কোনো কোনো ট্যাবলেটের দাম ৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। ওষুধের দাম সরকারের নিয়ন্ত্রণ করার কথা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ওষুধের দাম নিয়ে সরকারের সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকে আমরা মূল্যস্ম্ফীতি হিসেবে চিহ্নিত করব কিনা। এই প্রশ্নের জবাব নির্ভর করে কত পণ্যের দাম বেড়েছে এবং কতদিন ধরে সেই দাম অব্যাহত আছে এবং ভবিষ্যতেও এই বৃদ্ধি অপসারিত হবে কিনা তার ওপর।
বাংলাদেশে মূল্যস্ম্ফীতির মতো পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হলো তা বোঝা দরকার। মূল্যস্ম্ফীতির একটি সংজ্ঞা হলো- 'টু মাচ মানি চ্যাজিং টু ফিউ গুডস' অর্থাৎ অতিরিক্ত অর্থ সামান্য কিছু পণ্যের পিছু ধাওয়া করছে। যদিও এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো গবেষণা নেই। তা সত্ত্বেও হাইপোথেসিস হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশের বাজারে অতিরিক্ত অর্থ চঞ্চল হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন সংবাদপত্রে কয়েক কোটি থেকে কয়েকশ কোটি টাকার দুর্নীতির খবর ছাপা হয়। দুর্নীতির যত খবর সংবাদপত্রের পাতায় আসে তার তুলনায় এর ব্যাপকতা সহস্র গুণ বেশি বলে ধারণা করা যায়। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো অকেজো হয়ে গেছে। এ জন্য দুর্নীতিবাজ এবং অন্যায়কারীদের জবাবদিহি করা যায় না। এই জবাবদিহিতা থেকে মুক্ত দুর্নীতিবাজরাই কাঁচা টাকার গরমে বাজারকেও উত্তপ্ত করে তুলেছে। একদিকে দুর্নীতি উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে দুর্নীতি কাঁচা টাকার মালিক সৃষ্টি করে বাজারে অর্থের সরবরাহ কাম্য মাত্রার বাইরে নিয়ে যায়। এভাবে বিচার-বিশ্নেষণ করলে আমরা বলতে পারি, বাংলাদেশের মূল্যস্ম্ফীতি পরিস্থিতি যুগপৎ 'কসট পুশ' এবং 'ডিমান্ড পুল'।
উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়নের একটি প্রধান বিষয় হলো অবকাঠামোর উন্নয়ন। এখন দেশে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য একাধিক মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, ঢাকা নগরীর উড়ালপথ, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রেললাইন এবং সড়ক বর্ধিতকরণের প্রকল্প। এসব মেগা প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং বিনিয়োগ চলতে থাকবে যতদিন না প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়। এসব মেগা প্রকল্প চালু করার জন্য আরও দুই থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে। কিন্তু প্রকল্পের জন্য ব্যবহূত টাকার একটি বড় অংশ বাজারে ইতোমধ্যে প্রবেশ করেছে। ফলে বৃহৎ প্রকল্পজনিত অর্থের পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রকল্পগুলো সমাপ্ত না হওয়ার ফলে এগুলো থেকে 'বেনিফিট' পাওয়া যাচ্ছে না। বেনিফিট পাওয়ার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলো সমাপ্ত হওয়ার পর অনেক ধরনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডও বৃদ্ধি পাবে। কেবল সেই সময় থেকেই মেগা প্রকল্প সৃষ্ট অর্থের প্রবাহের সমান্তরালে পণ্যের প্রবাহও বৃদ্ধি পাবে। এভাবেই অর্থনীতিতে প্রবিষ্ট কাঁচা টাকা উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহূত হতে থাকবে এবং বাজারে নৈরাজ্য ও অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে আসবে। আজকাল প্রায়ই সবাইকে বলতে শুনি, ঢাকার বাজারে সবজির ন্যূনতম দাম হচ্ছে ৫০ টাকা। এ ধরনের পরিস্থিতিতে স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য প্রয়োজন কিছু স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ। সেই পদক্ষেপ কী হতে পারে, তা অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে নিরূপণ করা জরুরি।
লেখক: অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক