Published : Saturday, 20 November, 2021 at 12:00 AM, Update: 20.11.2021 12:49:12 AM
শাহীন আলম, দেবিদ্বার ||
কুমিল্লার
দেবিদ্বারে ৫ বছরের শিশু ফাহিমা হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে ঘাতক লাইলি
আক্তার। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ফাহিমার বাবাসহ পাঁচ আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে
র্যাব। এর মধ্যে বৃহস্পতিার বিকালে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক
জবানবন্দিতে ফাহিমাকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে লাইলি আক্তার। বাকি
চার আসামী বর্তমানে চারদিনের রিমান্ডে আছেন। আসামীরা হলো, ঘাতক বাবা মো.
আমির হোসেন (২৫), মো. রবিউল আউয়াল (১৯), মো. রেজাউল ইসলাম ইমন (২২), মোসা.
লাইলি আক্তার (৩০) ও মো. সোহেল রানা (২৭)। ঘাতক পাঁচ আসামীর বাড়ি দেবিদ্বার
পৌর এলাকার চাপানগর গ্রামে।
লাইলি জবানবন্দিতে জানিয়েছে, গত ৫
নভেম্বর লাইলি আক্তার ও আমির হোসেনকে মেয়ে ভিকটিম ফাহিমা আক্তার আপত্তিকর
অবস্থায় দেখে ফেলে। এ ঘটনা ফাহিমা তার মাকে সব বলে দিবে জানিয়ে ওখান থেকে
চলে আসে। এরপর লাইলি আমির উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, যে করে হোক ফাহিমাকে থামাকে
চাপ প্রয়োগ করে লাইলি। না হলে তার সংসার ভেঙে যাবে। লাইলির এমন চাপে গত ৬
নভেম্বর রাতে রেজাউল ইসলাম ইমনের ফার্নিচারের দোকানে ঘাতক আমির হোসেন টাকার
বিনিময়ে রবিউল আউয়াল, রেজাউল ইসলাম ইমন ও সোহেল রানাকে সঙ্গে নিয়ে শিশু
ফাহিমা আক্তারকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এ হত্যার পরিকল্পনা লাইলিকে জানালে
লাইলি সম্মতি দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরদিন (৭ নভেম্বর) সকালে হত্যায়
ব্যবহৃত ছুরি ও দুটি প্লাস্টিকের ব্যাগ সংগ্রহ করে আমির। পরে বিকালে
ফাহিমাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যায় বাবা আমির হোসেন।
ঘাতক সোহেল রানার সিএনজিতে করে অন্য আসামীরাসহ শিশু ফাহিমাকে বিভিন্ন
স্থানে ঘুরাফেরা করে সন্ধ্যায় দেবিদ্বার মাছুয়াবাদ ডোন এলাকার গোমতীর চরের
একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর লাইলি আক্তারের
উপস্থিতিতে আমির হোসেন প্রথমে এক হাতে তার মেয়ে শিশু ফাহিমার মুখে চেপে ধরে
অন্য হাতে নিজে মেয়েকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। রেজাউল ইসলাম ইমন ছুরি দিয়ে
ফাহিমার পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে, সোহেল ছুরি দিয়ে শিশু
ফাহিমার পিছনে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়।
রবিউল শিশু ফাহিমার যৌনাঙ্গ টেনে ছিড়ে ফেলে এবং পেট থেকে নাড়ি ভূড়ি বের
করে ফেলে, এসময় শিশু ফাহিমা মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করায় ঘাতক বাবা আমির তার
হাত-পা চেপে ধরে রাখে এবং সর্বশেষ লাইলি আক্তার ফাহিমার ঘাড় ভেঙে মৃত্যু
নিশ্চিত করে। ঘটনাস্থলের পাশে হঠাৎ লোকজনের চলাচল আঁচ করতে পেরে দ্রুত
ফাহিমার লাশ দুটি বাজারের প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে সিএনজিতে করে রওনা করে
আমির। পথিমধ্যে সন্ধা সাড়ে ৭টার দিকে আমিরের বাড়ি থেকে স্ত্রী ফোনে জানায়
ফাহিমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ কথা শুনে আমির স্ত্রীকে দ্রুত বাড়ি
আসতেছি বলে জানায়। এরপর আমির সিএনজিতে ফাহিমার বস্তাবন্দি লাশ নিয়ে চাপানগর
এলাকা বাড়ির কাছে এসে স-মিলের কাছে ঘাতক লাইলিকে নামিয়ে দেয়। পরে ঈমনের
বাড়ির একটি ড্রামের মধ্যে ফাহিমার বস্তাবন্দি লাশ লুকিয়ে রাখে আমির। পরদিন
ফাহিমা কে খুজে না পেয়ে একই সিএনজিতে করে ঘাতকরা ফাহিমা নিখোঁজের মাইকিং
করে। এবং লাশ গুম করার জন্য নির্জন জায়গা খুঁজতে থাকে। এভাবে ঘাতকরা টানা
দুইদিন নির্জন স্থান খুঁজে কোথাও না পেয়ে এক পর্যায়ে ৯ নভেম্বর রাত ১০টার
দিকে ফাহিমার লাশ জিএনজিতে করে এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসারই এলাকার একটি
সরকারি খালের নিচে ফেলে চলে আসে।