দেশের
অর্থনীতি বড় হচ্ছে। মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন যানবাহন
নামছে সড়ক-মহাসড়কে। কিন্তু সড়ক-মহাসড়কে জীবনের নিরাপত্তা থাকছে না। সাতটি
জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যমে
প্রচারিত খবরের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি এক প্রতিবেদনে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন
জানাচ্ছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে এক হাজার ৬৫৩টি
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক হাজার ৭৫৮ জন নিহত এবং এক হাজার ১২৩ জন আহত হয়েছে।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছর দুর্ঘটনা বেড়েছে ৬৩.৬০ শতাংশ আর প্রাণহানি
বেড়েছে ৭১.৩৫ শতাংশ। মানসম্মত গণপরিবহনের অভাব এবং যানজটের কারণে
মোটরসাইকেলের ব্যবহার অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৩৫ লাখ
মোটরসাইকেল চলছে। এর মধ্যে ১২ লাখের বেশি চলছে রাজধানীতে। মানসম্মত
গণপরিবহনের অভাব এবং যানজটের কারণে মোটরসাইকেলের ব্যবহার অস্বাভাবিক হারে
বাড়ছে বলেও প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে
প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, সড়ক ও মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা ও প্রাণহানির বড় কারণ
বেপরোয়া মোটরসাইকেল। সারা দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের ২৫ শতাংশই ঢাকায়।
২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর সড়কে শৃঙ্খলা আনতে
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দেওয়া ১৮ নির্দেশনার মধ্যে মোটরসাইকেল চালনায়
সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে হেলমেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
তার আগে থেকেই তিন আরোহী নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এখন আর মোটরসাইকেল চলাচলে
কঠোর নজরদারি নেই বলে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে। রাজধানীর প্রধান সড়ক ও
অলিগলিতে বেশির ভাগ মোটরসাইকেলচালকই অন্য যানবাহনকে অতিক্রম করার চেষ্টা
করেন সব সময়। সে ক্ষেত্রে তাঁরা নিয়ম না মেনে উল্টোপথে, ফুটপাত দিয়েও
বাহনটি চালিয়ে যান। রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার ছাড়াও চুক্তিতে মোটরসাইকেল
চলছে রাজধানীতে।
১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মোটরসাইকেল দুুর্ঘটনা নিয়ে
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক ও দুুর্ঘটনা
গবেষণা ইনস্টিটিউট এআরআই ‘আ রিভিউ অব মোটরসাইকেল সেফটি সিচুয়েশন ইন
বাংলাদেশ’ শীর্ষক যে গবেষণাপত্র প্রকাশ করে সেখানে বলা হয়েছে, এশিয়ার
দেশগুলোর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ।
গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত গতির কারণে ৫১ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার
শিকার হয়। অমনোযোগী অবস্থায় চালাতে গিয়ে ৪০ শতাংশ এবং মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪৯
শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে।
মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে
হবে। দুর্ঘটনা রোধে বিআরটিএ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে
হবে। পাশাপাশি পরিবার ও চালকদেরও সচেতন হতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার চেষ্টায়
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে আমরা মনে করি।