কতদিন
পর গ্যালারিতে আবার শোনা গেল গর্জন! দেখা গেল লাল-সবুজের ঢেউ আর বর্ণিল
সাজের মেলা। গ্যালারির সেই প্রাণের ছোঁয়া স্পর্শ করল যেন মাঠের
ক্রিকেটকেও। যথেষ্ট পুঁজি না পেয়েও বোলিং-ফিল্ডিংয়ে লড়াই করল বাংলাদেশ।
কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ নেতৃত্ব আর শেষদিকের বাজে বোলিংয়ে পিষ্ট হলো জয়ের
সম্ভাবনা। বিশ্বকাপ অভিযানের চরম হতাশার পর দেশেও হেরে আরও দীর্ঘায়িত হলো
দুঃসময়।
শাদাব খান ও মোহাম্মদ নওয়াজের পাওয়ার হিটিংয়ে শেষের সমীকরণ
মিলিয়ে বাংলাদেশকে ৪ উইকেটে হারাল পাকিস্তান। প্রথম ম্যাচ জিতে এগিয়ে গেল
তারা তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে।
বিশ্বকাপের পর নতুন শুরুর পথে বাংলাদেশ হোঁচট খেল শুরুতেই। বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ থেকে হারের বলয়ে থাকা দলের এটি টানা ষষ্ঠ হার।
মিরপুর
শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার ব্যাটিংয়ে বাজে শুরুর পর পরের ভাগে ভালো
করে বাংলাদেশ ২০ ওভারে তোলে ১২৭ রান। ব্যাটিংয়ের শুরুটা নড়বড়ে হয়
পাকিস্তানেরও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়িয়ে তারা ম্যাচ জিতে নেয় চার বল
বাকি থাকতেই।
দুই দলের ব্যাটিংয়েরই প্রথম অংশে ছিল অদ্ভূত মিল। পাওয়ার
প্লেতে বাংলাদেশ তোলে ৩ উইকেটে ২৫, পাকিস্তান ৪ উইকেটে ২৪। ১০ ওভার শেষে
দুই দলই একই সমান্তরালে, ৪ উইকেটে ৪০।
বাংলাদেশ শেষ ১০ ওভারে তোলে ৮৭।
রান তাড়া করা দলের কাজটা তুলনামূলক অনেক কঠিন হওয়ার কথা চাপের কারণে।
কিন্তু আলগা বোলিংয়ে বাংলাদেশ সেই চাপটাই দিতে পারেনি প্রতিপক্ষকে। নওয়াজ ও
শাদাব শেষ দিকে গড়েন ১৫ বলে ৩৬ রানের ম্যাচ জেতানো জুটি।
১০ বলে ২১ রানে অপরাজিত থাকেন শাদাব, ৮ বলে ১৮ রানে নওয়াজ।
বাংলাদেশের
একাদশে এ দিন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব থাকলেও বিস্ময়করভাবে লেগ স্পিনারকে
আক্রমণে আনেননি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। হয়তো দুই বাঁহাতি ফখর জামান ও খুশদিল
শাহ লম্বা সময় উইকেটে টিকে থাকেন বলেই দূরে রাখা হয় আমিনুলকে। তাকে
বোলিংয়ে আনা হয় শেষ ওভারে, যখন জয়ের জন্য পাকিস্তানের লাগে আর ২ রান!
শেষদিকে
হতাশাজনক ছিল মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিংও। ৪ ওভারে ২৬ রানে তার উইকেট ১টি,
দারুণ বোলিং ফিগার। কিন্তু ১৫ রানই দেন তিনি এক ওভারে এবং গুরুত্বপূর্ণ
সময়ে। শেষ ৩ ওভারে যখন প্রয়োজন ৩২ রান, মুস্তাফিজের বাজে বোলিং কাজে
লাগিয়েই পাকিস্তানকে জয়ের দিকে এগিয়ে নেন শাদাব ও নওয়াজ।
শেষের মতো
ম্যাচের শুরুটাও বাংলাদেশের জন্য ছিল বাজে। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা দলের
দুই ওপেনার বিদায় নেন ৩ ওভারের মধ্যেই। দুজনেরই রান ১। জায়গায় দাঁড়িয়ে অনেক
বাইরের বল তাড়া করে উইকেট বিলিয়ে আসেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। অভিষিক্ত সাইফ
হাসান তার নড়বড়ে টেকনিকের আরেকটি প্রমাণ রাখেন দৃষ্টিকটুভাবে আউট হয়ে।
তিনে নাজমুল হোসেন শান্ত পারেননি ফেরার ম্যাচে ভালো কিছু করতে (১৪ বলে ৭)। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও পারেননি দলের ভরসা হতে (১১ বলে ৬)।
পাওয়ার
প্লেতে বাংলাদেশ কেবল একটি বাউন্ডারি মারতে পারে, যেটি আসে আফিফ হোসেনের
ব্যাট থেকে। একাদশ ওভারে এই আফিফই দারুণ দুটি ছক্কা মারেন নওয়াজকে মাথার
ওপর দিয়ে।
১৪ ওভার পর্যন্ত আফিফ ছাড়া দলের আর কেউ কোনো বাউন্ডারিই মারতে পারেনি!
আফিফ শেষ পর্যন্ত ৩৪ বলে ৩৬ করে আউট হয়ে যান শাদাব খানের গুগলিতে। বাংলাদেশের তখন একশ নিয়েই টানাটানি।
নুরুল হাসান সোহান ও শেখ মেহেদি হাসান সেখান থেকে উদ্ধার করেন দলকে। ৪ ওভারে ৩৫ রানের জুটি গড়েন দুজন। দলের যা সর্বোচ্চ জুটি!
আফিফ
আউট হওয়ার পর দুটি ছক্কায় রান বাড়ান সোহান। ২২ বলে তিনি করেন ২৮। শেষ দিকে
২ ছক্কায় মেহেদি করেন ২০ বলে ৩০। একটি ছক্কা ছিল হারিস রউফের ১৪৯
কিলোমিটার গতির বলে স্কুপ করে!
ইনিংসের শেষ বলে বিশাল ছক্কা মারেন তাসকিন আহমেদ। শেষ ২ ওভারে ২৬ রান তুলে বাংলাদেশ ইনিংস শেষ করে মোমেন্টাম নিয়ে।
সেই
প্রেরণা দল ধরে রাখে বোলিংয়ের শুরুতেও। এই সংস্করণে সময়ের সেরা উদ্বোধনী
জুটি ও এই বছরের সফলতম দুই ব্যাটসম্যান বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানকে
দ্রুতই ফেরায় বাংলাদেশ।
মুস্তাফিজের সিমে পিচ করে ভেতরে ঢোকা অসাধারণ এক ডেলিভারিতে ডিগবাজি খায় রিজওয়ানের স্টাম্প। তাসকিনের বল স্টাম্পে টেনে আনেন বাবর।
আগ্রাসী
তরুণ হায়দার আলিকে রানই করতে দেননি মেহেদি। উইকেটের পেছন থেকে সোহানের
দারুণ ক্ষীপ্রতা ও দক্ষতায় শূন্যতে রান আউট হন শোয়েব মালিক। এই আউটে অবশ্য
অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের খামখেয়ালিপনাও দায়ী।
২৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে
পাকিস্তান তখন ধুঁকছে। বাংলাদেশের শরীরী ভাষা অনেক দিন পর মনে হতে থাকে
দারুণ। উজ্জ্বল হতে থাকে স্মরণীয় এক জয়ের সম্ভাবনা।
লেগ স্পিনার
আমিনুলকে তখনই এনে আরও চাপে রাখার চেষ্টা করা যেত পাকিস্তানকে। কিন্তু
মাহমুদউল্লাহর ভাবনা ছিল ভিন্ন। আক্রমণে আসেন নিজেই। ফখর জামান ও খুশদিল
শাহ গড়ে তোলেন ৫০ বলে ৫৬ রানের জুটি।
এই জুটিতে রানের গতি খুব ভালো ছিল
না। কিন্তু পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের গভীরতা তো ছিল অনেক। ফখর ও খুশদিল তাই
কাজ শেষ করতে না পারলেও তৈরি করে দেন শেষ দিকে ঝড় তোলার মঞ্চ। সেই মঞ্চে
দাঁড়িয়েই জয়োৎসব সারেন শাদাব ও নওয়াজ।
বাংলাদেশের শেষ সময়ের ভরসা হতে
পারতেন যিনি, সেই মুস্তাফিজ অনেক বাইরে ও শর্ট বল করে সুযোগ দেন রান করার।
শাদাব ও নওয়াজ লুফে নেন দুহাতে। আরও একবার বাংলাদেশ মাঠ ছাড়ে মাথা নুইয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ:
২০ ওভারে ১২৭/৭ (নাঈম ১, সাইফ ১, শান্ত ৭, আফিফ ৩৬, মাহমুদউল্লাহ ৬, সোহান
২৮, মেহেদি ৩০*, আমিনুল ২, তাসকিন ৮*; নওয়াজ ৪-০-২৭-১, হাসান ৪-০-২২-৩,
ওয়াসিম ৪-০-২৪-২, রউফ ৪-০-৩৩-০, শাদাব ৪-১-২০-১)।
পাকিস্তান: ১৯.২ ওভারে
১৩২/৬ (রিজওয়ান ১১, বাবর ৮, ফখর ৩৪, হায়দার ০, মালিক ০, খুশদিল ৩৪, শাদাব
২১*, নওয়াজ ১৮*; মেহেদি ৪-০-১৭-১, তাসকিন ৪-০-৩১-২, মুস্তাফিজ ৪-০-২৬-১,
শরিফুল ৪-০-৩১-১, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-১৯-০, আমিনুল ০.২-০-৬-০)।
ফল: পাকিস্তান ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: শাদাব খান।