কুমিল্লার ৩০ ইউনিয়নের ১৬টিতে আওয়ামী লীগ, ১৩টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী
চেয়ারম্যান পদে বরুড়ার ঝলম ইউপির ফলাফল স্থগিত
‘তারা বিদ্রোহী নয়; বরং আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী হিসেবেই জয়লাভ করেছে’
তৃতীয়
ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কুমিল্লায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ
সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের টেক্কা দিচ্ছে স্বতন্ত্র-বিদ্রোহী
প্রার্থীরা। গতকাল ২৮ নভেম্বর কুমিল্লার তিন উপজেলায় ৩০ টি ইউনিয়ন পরিষদ
নির্বাচনে ১৬টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থীরা জয় লাভ
করেছে। বাকী ১৪ ইউপির মধ্যে ১৩ টিতে জয় লাভ করেছে সতন্ত্র প্রার্থীরা।
বরুড়ায় একটি ইউনিয়নে ফল প্রকাশ স্থগিত রয়েছে।
তবে স্থানীয় সুত্রে জানা
গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের যারা জয়ী হয়েছেন তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের
সক্রিয় নেতা-কর্মী। আওয়ামী লীগ থেকে অফিশিয়ালি মনোনয়ন দিয়ে দলটির
প্রার্থীকে নৌকা প্রতিক দেয়া হলেও এই সিদ্ধান্তের বিদ্রোহী হয়ে অন্য মার্কা
নিয়ে জয় লাভ করেন তারা।
নির্বাচনে বেসরকারি ফলাফল সূত্রে জানা গেছে,
হোমনা উপজেলায় ৯টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতিকে প্রার্থী জয় লাভ করেছেন ৪ জন। এর
বিপরীতে ৫ টি ইউনিয়নে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্ররা। এছাড়া
দাউদকান্দিতে ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি নৌকা এবং ৬টি তে স্বতন্দ্র
প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। তবে বরুড়ায় ৯ টি ইউনিয়নে ৬ টিতে আওয়ামী লীগের
প্রার্থী নৌকা প্রতিক নিয়ে জয়লাভ করেছে। ২ টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়
হয়েছে। স্থগিত ঝলম ইউপিতেও ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
হোমনা
উপজেলায় বেসরকারি হিসেব মতে - ৩ নং দুলালপুর জসিম উদ্দিন সওদাগর (নৌকা), ৪
নং চান্দেরচর মোজাম্মেল হল (নৌকা), ৬ নং নিলখী জালাল উদ্দীন (নৌকা), ৯ নং
জয়পুর তাইজুল ইসলাম (নৌকা)।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ১নং মাথাভাঙ্গা
জাহাঙ্গীর আলম (আনারস), ২ নং ঘাগুটিয়া মফিজুল ইসলাম গনি (ঘোড়া), ৫ নং
আসাদপুর জালালউদ্দিন পাঠান (আনারস), ৭ নং ভাষানিয়া সাদেক সরকার (আনারস) ও ৮
নং ঘারমোরা শাহজাহান মোল্লা (আনারস) বিজয়ী হন।
হোমনা উপজেলায় নৌকা
প্রতিকের হারের বিষয়টি জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
সিদ্দিকুর রহমান আবুল বলেন, স্বতন্ত্র যারা পাশ করেছে সবাই বিএনপি। তারা
কেউ আওয়ামী লীগের কেউ নয়।
এদিকে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা ৯ টি ইউনিয়নে ৬
টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতিক নিয়ে জয়লাভ করেছে। ৩ টিতে
স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় হয়েছে। নৌকা প্রতিক নিয়ে জয়লাভ যারা করেছেন তারা
হলেন, ভবানীপুর ইউনিয়নে মোঃ খলিলুর রহমান, খোশবাস উত্তর ইউনিয়নে মোঃ নাজমুল
হাসান সর্দার, চিতড্ডা ইউনিয়নে মোঃ জাকারিয়া, আড্ডা ইউনিয়নে মোঃ জাকির
হোসেন বাদল, পয়ালগাছা ইউনিয়নে সৈয়দ মাহিন উদ্দিন ও লক্ষীপুর ইউনিয়নে মোঃ
আবুল হাসেম।
স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন মোঃ মাজহারুল ইসলাম মিঠু, আদ্রা ইউনিয়নে রাকিবুল হাসান লিমন। ঝলম ইউনিয়নে মোঃ নুরুল ইসলাম।
এছাড়া
কুমিল্লার দাউদকান্দি পজেলার ১২টি ইউয়িনে ৬টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা
প্রতীকের প্রার্থী এবং বাকি ৬টিতে সতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন।
নৌকা
প্রতীকে বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন দাউদকান্দি উত্তর ইউনিয়নে কামরুজ্জামান
শাহীন, গোলামারী ইউনিয়নে মান্নান প্রধান, পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নে জামাল উদ্দিন
চৌধুরী, গৌরীপুরে নোমান সরকার, বিটেশ্বরে হুমায়ূন কবির ভূইয়া, এবং
মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে দুলাল মিয়া।
এই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র বিজয়ীরা হলেন
সুন্দলপুর ইউনিয়নে আসলাম মিয়াজী (আনারস), জিংলাতলী ইউনিয়নে আলমগীর হোসেন
(ঘোড়া), ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নে লোকমান হোসেন মুন্সী (আনারস), মালিগাঁও
ইউনিয়নে মোস্তাক মিয়া (ঘোড়া), পদুয়া ইউনিয়নে মনির হোসেন (আনারস) এবং মারুকা
ইউনিয়নে শাহজাহান ভূইয়া (ঘোড়া)।
দাউদকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ
সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মহিউদ্দিন শিকদার বলেন, দাউদকান্দিতে যারা আওয়ামী
লীগের স্বতন্ত্র হিসেবে জয়লাভ করেছেন- তারা বিপুল জনপ্রিয়তার কারণেই জয়ী
হয়েছে। কিন্তু দল থেকে মনোনয়ন পায়নি বলে তারা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নয়;
বরং আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী হিসেবেই জয়লাভ করেছে। স্বতন্ত্র হিসেবে
অন্য দলের প্রার্থীরাও অংশগ্রহণ করেছিলো। কিন্তু কেউ আওয়ামী লীগ মনোনীত
নৌকার প্রার্থী কিংবা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পাত্তাই
পায়নি।
এদিকে তৃতীয় ধাপের নির্বাচন এর আগেরবারের তুলনায় শান্তিপূর্ণভাবে
অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো.
মঞ্জুরুল আলম । তিনি জানান, আমরা যা আশা করেছিলাম- তা ৯৯ শতাংশ সফল হয়েছে।
আগামী ধাপের নির্বাচনগুলো সহিংসতা ছাড়া সুষ্ঠুভাবে হবে বলেই আশা করছি।