কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে বিয়ের ছয় মাস পর যৌতুকের জন্য স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন সইতে না পেরে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার নাথেরপেটুয়া ভূঁইয়াবাড়ি এলাকায় স্বামীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূর নাম তামান্না আক্তার কনা (২১)। তিনি লাকসাম পৌরশহরে ফতেপুর এলাকার আনোয়ার হোসেনের মেয়ে। নিহত গৃহবধূর বাবা-মা ও স্বজনদের দাবি, বিয়ের ছয় মাস পর বিদেশে যাওয়ার এক লাখ টাকা দিতে না পারায় তার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি নির্মম নির্যাতন করে তামান্নাকে আত্মহত্যায় বাধ্য করেছে। ঘটনার পর থেকে তামান্নার স্বামী রাশেদুল ইসলাম টিটু, শ্বশুর অহিদুল ইসলাম ও শাশুড়ি রোকেয়া বেগম পলাতক রয়েছে বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছয় মাস আগে মনোহরগঞ্জ উপজেলার নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নের ভূঁইয়াবাড়ি এলাকার অহিদুল ইসলামের ছেলে রাজমিস্ত্রি রাশেদুল ইসলাম টিটুর সঙ্গে তামান্না আক্তার কনার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হন তামান্না। গত কয়েক দিন আগে স্বামী টিটুর সৌদি আরব যাওয়ার কথা বলে তামান্নাকে বাপের বাড়ির থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দেন স্বামী ও তার শ্বশুর-শাশুড়ি। গৃহবধূ তামান্না সেই দাবির কথা তার হতদরিদ্র বাবা-মাকে অবগত করেন। এর পর বাবা-মা তাদের আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে ৭০ হাজার টাকা দেবে বলে আশ্বাস দেন। গত দুদিন আগে স্বামীকে নিয়ে তামান্না বাবার বাড়িতে গেলে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা রোববার পাবে বলে আশ্বাস নিয়ে তারা ফিরে যান।
পরে রোববার এক লাখ টাকা না আনায় স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে গৃহবধূ তামান্নার কথা কাটাকাটি হয়। যৌতুকের জন্য শারিরীক ও মানসিক যন্ত্রণা সইতে না পেরে রোববার সন্ধ্যায় নিজ ঘরে গৃহবধূ তামান্না বিষপান করে। পরে তার আত্মচিৎকার বাড়ির লোকজন ছুটে এসে আহতাবস্থায় তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লায় পাঠানোর পরামর্শ দেন। পরে কুমিল্লা হাসপাতালে নিলে মারা যান গৃহবধূ তামান্না।
নিহত গৃহবধূর বড় ভাই সজীব বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই তামান্নাকে তার স্বামী টিটু অত্যাচার করত। মাঝে মধ্যে মারধরও করত। টিটু বিদেশে যাবে বলে আমাদের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে। আমরা নিরীহ এত টাকা কই পাই? মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করে ৭০ হাজার টাকা দেব বলে আশ্বাস দিয়েছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, দুদিন আগে তামান্না ও টিটু আমাদের বাড়িতে আসেন। এ সময় নগদ ২০ হাজার আর বাকি টাকা একদিন পরে দেব বললে তারা বাড়ি চলে যায়। এর পর রোববার রাতে টিটু আমাকে ফোন করে বলে তামান্নার শরীরটা ভালো না; তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসেন। তাদের বাড়িতে যাওয়ার পথে শুনলাম তামান্না মারা গেছে। এ বিষয়ে আমি মনোহরগঞ্জ থানায় আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা দায়ের করেছি। আশা করি, দ্রুত অভিযুক্তদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে মনোহরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুল কবির বলেন, ‘নিহত গৃহবধূর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত গৃহবধূর বড় ভাই সজীব বাদি হয়ে মনোহরগঞ্জ থানায় আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা দায়ের করেছেন। তদন্তপূর্বক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’