পুলিশের সাথে গোলাগুলিতে নিহত দুইজনের দাফন এলাকায় না হওয়ার দাবিতে সুজানগর পাথুরিয়া পাড়ায় ঝাড়ুমিছিল
তানভীর
দিপু: কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী
লীগের সদস্য সৈয়দ মোঃ সোহেল ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা হরিপদ সাহা হত্যা
মামলার প্রধান দুই আসামী শাহ আলম ও জেল সোহেলকেও দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি
জানিয়েছে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। গত সোমবার দিবাগত মধ্য রাতে
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে গোলাগুলিতে মামলার অন্যতম দুই আসামি সাব্বির ও সাজন
নিহত হবার পর প্রতিক্রিয়ায় কাউন্সিলর সোহেলের পবিারের সদস্যরা জানান,
প্রশাসন আসামিদের গ্রেপ্তার করতে যথেষ্ট চেষ্টা করছে। তবে প্রধান দুই আসামি
শাহ আলম ও জেল সোহেল গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত তাদের সন্তুষ্টি নেই।
এদিকে গোলাগুলিতে নিহত সাব্বির ও সাজনের মরদেহ যে সুজানগর এলাকায় দাফন না
হয় এজন্য প্রতিবাদ জানিয়ে ঝাড়ু মিছিল করেছে সুজানগর পাথুরিয়া পাড়া
এলাকাবাসী।
এই মামলায় এজাহার নামীয় পাঁচ আসামি এবং তদন্তে বেরিয়ে আসা
জড়িত অন্তু নামে আরো এজন গ্রেপ্তার হয়েছে। এছাড়া আসামি ধরতে গেলে
সন্ত্রাসীদের সাথে গোলাগুলির ঘটনায় মৃত্যুবরন করে আরো দুই জন। বাকি প্রধান
আসামি শাহ আলম ও জেল সোহেলসহ ১০ এবং ১১ নম্বর আসামিকে এখনো গ্রেপ্তার করতে
পারেনি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
নিহত কাউন্সিলর সোহেলের স্ত্রী রুনা ইসলাম
জানান, আমি স্বামী হারা হয়েছি। আমার সন্তানেরা এতিম হয়েছে। কি কারনে তারা
আমার স্বামীকে খুন করলো আমি জানিনা। আমি খালি প্রধানমন্ত্রীর কাছে,
দেশবাসীর কাছে সব আসামির দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার চাই।
কাউন্সিলরের বড়
মেয়ে সিদরাতুল মুনতাহা ছোঁয়া জানান, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সর্বোচ্চ
চেষ্টা করছে আসামি ধরতে। এর মধ্যে দুই জন গোলাগুলিতে মারা গেছে আর অন্যরা
গ্রেপ্তার আছে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত শা আলম ও জেল সোহেল গ্রেপ্তার না
হবে-আমাদের কোন শান্তি নাই। আমরা বাবাকে হারিয়েছি। দুঃখ তো আর কমবে না,
তারপরও প্রধান দুই আসামি গ্রেপ্তার হলে এলাকাবাসী অন্তত শান্তি পাবে।
মঙ্গলবার
দুপুরে হত্যা মামলার আসামিদের মরদেহ সুজানগর পাথুরিয়া পাড়া এলাকায় এনে
দাফন করা হবে শুনে স্থানীয়রা কাউন্সিলর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে এই
প্রতিবাদ জানায়। প্রতিবাদে অংশ নেয়া এলাকাবাসী জানায়, একজন জনসেবী
জনপ্রতিনিধিতে যারা হত্যা করেছে তাদের মরদেহের দাফন সুজানগর পাথুরিয়া পাড়া
এলাকায় হতে পারে না।
মঙ্গলবার বিকালে ময়নাতদন্ত শেষে সাব্বির ও সাজনের
মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় টিক্কার চর কবরস্থানে। জোড়া খুনের হত্যা মামলার
আসামিদের জানাজা ও দাফনে এগিয়ে আসে নি কেউ। শুধুমাত্র পরিবারের সদস্য ও
কয়েক স্বজনেরা তাদের দাফনের কাজ সম্পন্ন করে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ
সুপার এম তানভীর আহমেদ বলেছেন, কাউন্সিলর সোহেলসহ জোড়া খুনের ঘটনায় ছয়
আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এর মধ্যে একজন পুরো ঘটনার বর্ননা আদালতের কাছে
দিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজেও তার সত্যতা আমরা পেয়েছি এবং আমরা শনাক্ত করতে
পেরেছি কারা কারা জড়িত আছে। তাদেরকে ধরার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা শাখা এবং ঢাকার বিশেষায়িত টিমগুলো
একসাথে কাজ করে যাচ্ছে। আরো বাকি যে চারজন আছে আমরা খুব দ্রুত তাদের আইনের
আওতায় নিয়ে আসবো।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত সোমবার দিবাগত
মধ্যরাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সংরাইশ এলাকায় কাউন্সিলর সোহেল ও হরিপদ
সাহা হত্যামামলা আসামি ধরতে যায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। সেখানে গোমতীর
বেরিবাঁধে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁেড়
সন্ত্রাসীরা। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এসময় অন্যান্য
সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলেও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুই যুবককে পরে থাকতে দেখা
যায়। স্থানীয়রা তাদেরকে সাব্বির ও সাজন বলে শনাক্ত করে। পরে তাদেরকে
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা
করে। গোলাগুলিথে পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে একটি ৭.৬৫
পিস্তল, একটি পাইপগান, পিস্তলের অব্যবহৃত গুলি, গুলির খোসা ও কার্তুজের
খোসা উদ্ধার করা হয়।
সরকারি কাজে বাঁধা, হত্যা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার সংক্রান্তে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।