ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
বাংলাদেশের রিপোর্টে প্রথম ওমিক্রন
Published : Saturday, 18 December, 2021 at 12:00 AM
বাংলাদেশের রিপোর্টে প্রথম ওমিক্রনঅধ্যাপক ডা: মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ||
বাংলাদেশে এই প্রথম ধরা পড়ল করোনার ওমিক্রন ভেরাইটি দু’জন বাংলাদেশী নারী ক্রিকেটারের মধ্যে যারা জিম্বাবুয়ে থেকে গত সপ্তাহে দেশে ফিরেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত শনিবার (১১.১২.২১ইং) বলেছেন, দুজনকেই কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে এবং দুজনেই ভাল আছে। বিশেষজ্ঞরা সীমান্তে ও সীমান্তের ওপারে সতর্ক থাকতে বলছে। তাদের মতে জনসাধারণ ও সরকার ডেলটা ভেরিয়েন্ট এর লব্ধ শিক্ষা থেকে সতর্কতা ও প্রতিরোধ এর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলে মৃত্যুঝুঁকি অনেক হ্রাস পাবে এবং অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে। স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেছেন- “স্কিনিং জোরদার করা হয়েছে এবং ওমিক্রনকে মোবাকেলার জন্য হাসপাতালে শয্যা প্রস্তুত রাখ হয়েছে। দুজন নারী ক্রিকেটারের একজন ৩০ ও অন্যজন ২১ বছর বয়সিকে বর্তমানে রাজধানীর একটি হোটেলে কোয়ারেন্টিনে আছেন। সকল চিকিৎসাদির ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং সময় সময় অমিক্রনের লোড তাদের শরীরে কি রকম আছে তার পরিমাপ হচ্ছে। তবে তাদের পূর্ণ পরিত্রানে দুই সপ্তাহ লাগবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় জানান।
দেড় মাস আগে বাংলাদেশ মহিলা দল কোয়ালিফাইং রাউন্ডের একদিনের বিশ্বকাপ মহিলা ক্রিকেট খেলতে জিম্বাবুয়ে গিয়েছিল। কিন্তু করোনার ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের কারণে অর্ধ সমাপ্ত অবস্থায় খেলাটি স্থগিত ঘোষণা হয়। খেলায় অগ্রসরমান থাকায় বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে এবং ১ ডিসেম্বর’২১ দেশে ফেরত আসে। ৬ ডিসেম্বর ২১ দুজন খেলোয়াড়ের করোনা ভাইরাসে আক্রমনের সংবাদ পাওয়া যায়।
৬ ডিসেম্বর দুজন মহিলা ক্রিকেটারের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর’এ জেনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট নিশ্চিত হন বলে জানান চিফ সাইন্টিফিক অফিসার ডা: এএসএম আলমগীর। পরীক্ষার ফলাফল গ্লোবাল জেনোম সিকোয়েন্স ডাটাবেইস এওঝঅওউ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ৭টি আফ্রিকান দেশ থেকে আগত লোকজনকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন আবশ্যিক করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৫৭টি দেশে ওমিক্রন ভেরাইট চিহ্নিত হয়েছে এবং রোগীদের হাসপাতারে ভর্তির ব্যবস্থা রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন আমরা অধিকতর সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত কেননা ওমিক্রন খুব তাড়াতাড়ি ছড়ায় এবং ভেক্সিন নেয়া না থাকলে মুত্যুর ঝুঁিক অত্যধিক এবং পুন: সংক্রমনের শংকাও বেশি। ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট নিয়ে সতর্ক থাকতে মন্ত্রীপরিষদের সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (১৩.১২.২১) মন্ত্রীসভায় বৈঠকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভাপতির ভাষণে এ নির্দেশনা দেন। মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন কিভাবে, কবে এবং কাদের বুস্টার ডোজ দেয়া হবে এবং তা বিনামূল্যে নাকি অর্থের বিনিময়ে দেয়া হবে তা নির্ধারণে কাজ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রী পরিষদ বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাসের টিকার বুস্টার ডোজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন যাঁরা ষাটোর্ধ এবং সম্মুখসারির কর্মী তাঁদের দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সুরক্ষা অ্যাপসকে কিছুটা হালনাগাদ করতে হবে। আশা করা হচ্ছে এমাসেই একাজ আরম্ভ করা যাবে। যাঁরা এখনও এক ডোজ টিকা নেননি তাদের অগ্রাধিকার সব সময়ই থাকবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এপর্যন্ত ১১ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। এমাসে আরও দেড় কোটি থেকে দুই কোটি টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। হাতে আরও প্রায় চার কোটি টিকা আছে। টিকার কোন অসুবিধা নেই।
সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্তের কথা জানান। ভয়াবহ এ ভেরিয়েন্ট ইতিমধ্যে বিশ্বের ৫৭টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ দুজন সনাক্ত এবং পার্শ্ববর্তী ভারতে ৩৪ জনের দেহে অমিক্রনের হদিস মিলেছে। যুক্তরাজ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে দেশটি নিশ্চিত করেছে। আইইডিসি আর’এর উপদেষ্টা ডা: মুশতাক হুসেন বলেছেন, ওমিক্রন ধরনটি অনেক বেশি পরিবর্তন হচ্ছে। ধরনটির বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণায় দেখা যায়- এটার ট্রান্সমিশন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় অন্যান্য ভেরিয়েন্টের চেয়ে খুব বেশি পুন:সংক্রমণ করছে। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বেশি পরিমানে অসুস্থ করে কিনা- এটা এখনো প্রমানিত হয়নি। ধরনটি শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে “কনসার্ন অব ভ্যারিয়েন্ট” ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কাজেই সাবধানে থাকতে হবে। এটি আরও মারাত্মক রুপ নিতে সময় লাগতে পারে। মনে রাখতে হবে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে ভারতের বিজ্ঞানীরা ডেল্টা শনাক্ত করেই তারা কনসার্ন ঘোষণা দেননি। প্রথমে ভেরিয়েন্ট অব আন্ডার মনিটরিং, তারপর ভেরিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট এবং সবশেষে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন বলেছেন। অমিক্রনের ক্ষেত্রে শুরুতেই ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন বলা হচ্ছে। কাজেই খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে না- সেটা বলা যাচ্ছে না। প্রতিরোধের জন্য এখনই শক্ত প্রস্তুতি নিতে হবে। সবাইকে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
ইউজিসি অধ্যাপক ডা: এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ইতিমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার জিম্বাবুই ফেরত দুই বাংলাদেশির মধ্যে ধনরটি শনাক্ত হয়েছে। ফলে অন্যদের মধ্যে সংক্রমন ঝুঁকি বাড়ছে। এদিকে আমাদের হাট বাজার, শিল্পকারখানা, পর্যটন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। ধরনটি দ্রুত ছড়ায় বলা হচ্ছে। কিন্তু পর্যবেক্ষণ বলছে, এখন পর্যন্ত ধরনটি মারাত্মক নয় বলে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তির গলা ব্যাথা, জ্বর, সর্দি, কাশির মতো মৃদু উপসর্গ দেখা দেয়। রোগী খুব ক্লান্ত থাকে। তবে দেশে এখন পর্যন্ত কোন রোগীর অক্সিজেন, আইসিইউ বা হাসপাতালে যাওয়ার দরকার হয় নাই। ঘরে বসেই চিকিৎসা নেয়া যায়। কেউ একবার আক্রান্ত হলে পুনরায় আক্রান্ত হতে পারেন। তবে এটা থেকে বাঁচার একটাই উপায়- সকর্তকা, সচেতনতা, কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা। সবচেয়ে জরুরী টিকা নেয়া। তাঁর মতে, এ মুহূর্তে জল, স্থল, এয়ারপোর্ট, ট্রেন, লঞ্চ যে পথেই কেউ বাইরে থেকে আসুক এসব জায়গায় কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। কারও শরীরে পজিটিভ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে আইসোলেশনে নিতে হবে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের অনেক বড় সীমান্ত। প্রতিদিন অনেক মানুষ যাতায়াত করছে। এটা আপাতত: ঠেকাতে হবে। এজন্য কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। যারাই আসবে তাদের পরীক্ষা করাতে হবে। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা বা অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশিরাও যেন না আসে সে ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এখনই লকডাউন, ফ্লাইট বা বর্ডার বন্ধ করার দরকার নাই। স্কিনিং টেস্ট পজিটিভ হলে আইসোলেশন করা ও হাসপাতাল প্রস্তুত রাখতে হবে।
ওমিক্রন বাংলাদেশে শনাক্ত গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কভিড-১৯ বিষয়ে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। দ্রুত সংক্রমনশীল এ ভেরিয়েন্ট ঠেকাতে চারটি সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে:-
    ১। মাস্ক পরা
    ২। হাত ধোয়া
    ৩। শারিরীক দুরত্ব রাখা
    ৪। টিকা নেয়া
সব ধরনের সভা সমাবেশ ও জনসমাগম সীমিত করা এবং ষাটোর্ধ ও সম্মুখসারীর কর্মীদের যারা কমপক্ষে ছয় মাস পূর্বে দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদের তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার দেয়া। দেশে প্রবেশের সকল পয়েন্টে স্কিনিং, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন কার্যক্রম আরও জোরদার করতে বলা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন অফ লাইন সভা পরিহার করে অনলাইন সভা আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছে এই কমিটি।

লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চল