জহির শান্ত: গণতান্ত্রিক যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে অধ্যক্ষ আফজল খান ছিলেন প্রথম সারিতে। রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক- সব ক্ষেত্রেই ছিলো তাঁর বিচরণ। তিনি ছিলেন কর্মীবান্ধব নেতা। দলের প্রতি তার যেমন বিশাল টান ছিলো- তেমনি কর্মীদের প্রতিও ছিলো ব্যাপক দরদ। তিনি সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্মান দিয়ে কথা বলথেন, ছিলেন সকল মত-পেশার মানুষের অভিভাবক। এ জন্যই আফজল খান ‘গণমানুষের নেতা’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার মৃত্যুতে কুমিল্লার রাজনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে- যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তাঁর স্মৃতি কুমিল্লায় চির জাগ্রত থাকবে। স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে ইতিহাসে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আলো বিলিয়ে যাবেন তিনি।
গতকাল কুমিল্লা টাউন হল মাঠে কুমিল্লার গণমানুষের নেতা ও বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ অধ্যক্ষ আফজল খান স্মরণে আয়োজিত নাগরিক শোক সমাবেশে বক্তাগণ এসব কথা বলেন। নাগরিক স্মরণ পর্ষদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ শোক সমাবেশে কুমিল্লার সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। দুপুরের পর থেকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে টাউন হল মাঠ।
বক্তাগণ বলেন, আফজল খান সর্বক্ষেত্রেই নতুন প্রবাহ তৈরি করতে পেরেছেন। ৬২’র ছাত্র আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। আফজল খান ছিলেন একজন নির্লোভ-নির্ভীক সাহসী যোদ্ধা। সারাজীবন তিনি দেশের জন্য, মানুষের জন্য লড়াই করেছেন। মানুষের অধিকারের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁর বিস্তৃতি কুমিল্লা ও দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছে। তিনি সত্যিকার অর্থেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করতেন। সোনার মানুষ গড়তে, আলোকিত মানুষ গড়তে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। নিয়োজিত ছিলেন সমবায় আন্দোলনেও। তার অবদান আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী।
শিক্ষাক্ষেত্রে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, তিনি কুমিল্লার গণমানুষের নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। দুর্দিনে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আফজল খান। দলের দুঃসময়ে যখন কেউ ছিলো না- তখন বুক চিতিয়ে লড়েছেন আফজল খান। তিনি রাস্তায় হাঁটলে মিছিল হয়ে যেতো। তিনি পাশে থাকলে সাহস পেতেন কর্মীরা।
শোক সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, অর্থমন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম ওবায়দুর মোক্তাদির চৌধুরী এমপি, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, এডভোকেট আবুল হাসেম খান এমপি, জাসদের কেন্দ্রীয় নেত্রী শিরিন আক্তার এমপি, হামর্দদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ মান্নান মজুমদার, কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব ওমর ফারুক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট গোলাম ফারুক, জেলা জাসদের সভাপতি অধ্যক্ষ সফিকুর রহমান, কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ছড়াকার জহিরুল হক দুলাল, মহিউদ্দিন আহমেদ, ন্যাপ নেতা মোহাম্মদ আলী ফারুক, বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও গবেষক অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক, কমরেড পরেশ কর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ, সাপ্তাহিক অভিবাদন সম্পাদক আবুল হাসানাত বাবুল, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কৃষক লীগের সভাপতি নির্মল পাল, বিএমএ কুমিল্লার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. হেদায়েত উল্লাহ, ডা. আতাউর রহমান জসিম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সফিকুল ইসলাম শিকদার, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, আলহাজ্ব শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান, কাজী মোতাহের হোসেন, সাংবাদিক গাজিউল হক সোহাগ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শাহীনুল ইসলাম শাহীন, ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রছাত্রী সংসদের সাবেক ভিপি নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ করিম মজুমদার, এডভোকেট মাসুদ সালাউদ্দিন, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কবিরুল ইসলাম শিকদার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পার্থ সারথি দত্ত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্যানেল ভিপি তরিকুল ইসলাম তরিক, অভিজিৎ রায় পার্থ, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা জিএস জাকির হোসেন, মহিউদ্দিন ফারুকী মহি, পাপন পালসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি সৈয়দ আহমাদ তারেক।
নাগকি শোক সমাবেশের শেষ পর্যায়ে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন আফজল খান কন্যা আঞ্জুম সুলতানা সীমা এমপি ও আফজল খানের পুত্র মাসুদ পারভেজ খান ইমরান। সভাপতিত্ব করেন নাগরিক স্মরণ পষর্দ কুমিল্লার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ।
নাগরিক শোক সমাবেশ পরিচালনা করেন এডভোকেট সহিদুল হক স্বপন ও সাংবাদিক আবুল কাশেম হৃদয়। বিকাল ৩টায় শুরু হওয়ায় নাগরিক শোক সমাবেশ শেষ হয় রাত ৮টায়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন বলেন, অধ্যক্ষ আফজল খান সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধু তাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাকে খুব ভালোবাসতেন। আফজল খান একটি ইতিহাস। আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী নেতা, তিনি কখনো পথভ্রষ্ট হননি। আমৃত্যু তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। সবসময় কুমিল্লার উন্নয়নের কথা বলতেন আফজল খান।
অর্থমন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) এমপি বলেন, অধ্যক্ষ আফজল খান ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। সারাজীবন দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তিনি তার কর্মের মাঝেই চিরদিন বেঁচে থাকবেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আফজল খান সারাজীবন কুমিল্লার মানুষের জন্য কাজ করেছেন। আফজল খানের পথ অনুসরণ করতে হবে। তার পরিবারের সদস্যদের পাশে থেকে আফজল খানের স্বপ্নপূরণে কাজ করতে হবে।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব বলেন, কুমিল্লার আওয়ামী রাজনীতিতে অধ্যক্ষ আফজল খানের অবদান সব চে’ বেশি। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার পরিবারের অবদান পাকিস্তান আমল থেকেই। আমরা দীর্ঘদিন আফজল খানের নেতৃত্বে রাজনীতি করেছি। তিনি মাঠে আসলেই মিছিল বড় হতো। তিনি দাঁড়ালেই মানুষ পাশে এসে ভিড় করতো। এক কথা বললে- সফল রাজনীতির জাদুকর আফজল খান।
সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, আফজল খান এ মাটির সন্তান। তার দেশপ্রেম নিয়ে সন্দেহ নেই- কিন্তু তার কুমিল্লা-প্রেম আরো গভীর। তিনি কুমিল্লাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তার প্রতিষ্ঠানগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমার রাজনৈতিক পরিচয় ভিন্ন হলেও আজকে ঢাকা থেকে এসেছি কেবল তার শোকসভায় যোগ দিতে। কারণ তিনি কুমিল্লাকে ভালোবাসতেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম ওবায়দুর মোক্তাদির চৌধুরী এমপি বলেন, একজন মানবিক আফজল খানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। গণতান্ত্রিক প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি অংশ নিয়েছেন। ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার পরও তিনি থেমে থাকেননি। সোনার মানুষ গড়তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। সমাজের দুঃখি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আফজল খান যদি কুমিল্লার মেয়র হতেন- তবে এ শহরের চেহারা ভিন্ন হতো, আরো উন্নত হতো। আফজল খান কুমিল্লার গণমানুষের নেতা ছিলেন। তিনি মেয়র হলে কুমিল্লার সঠিক উন্নয়ন হতো- জয়তু আফজল খান।