সিএমপিই,
আহ্ছানিয়া মিশন ও সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন অ্যালায়েন্সের যৌথ উদ্যোগে
আয়োজিত ‘বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীতে শিক্ষা খাতের অর্জন, চ্যালেঞ্জ ও
করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজনে একজন ঝরে
পড়ছে। ওয়েবিনারে পঠিত মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে সাক্ষরতার
হার ৭৫ শতাংশের বেশি, যা স্বাধীনতার পর ছিল মাত্র ১৬ শতাংশ। সাক্ষরতার হারে
এগিয়ে গেলেও এখনো অনেক শিক্ষার্থী স্কুলের বাইরেই রয়ে গেছে।
শিক্ষা
ক্ষেত্রে আমাদের যেমন কিছু সাফল্য আছে, তেমনি ব্যর্থতাও অনেক। প্রাথমিক
পর্যায়ে শতভাগ শিশু বিদ্যালয়ে এলেও ২০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী প্রাথমিক
শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারে না। এরপর যারা মাধ্যমিক পর্যায়ে যায়, তাদেরও ৪০
শতাংশের বেশি শিক্ষা সমাপনের আগেই ঝরে যায়। অর্থাৎ এসএসসি পাস করার আগেই
ঝরে যায় অর্ধেকেরও বেশি। সরকারি হিসাবেই এমন তথ্য পাওয়া যায়।
আবার
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, মাধ্যমিক পর্যায়ে
ছেলেদের তুলনায় মেয়েরাই ঝরে পড়ছে বেশি। ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী,
ছাত্রীদের মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা সমাপন করতে পেরেছে মাত্র ৫৪.৮
শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ৪৬ শতাংশ ঝরে পড়েছে। মেয়েদের ঝরে পড়ার প্রধান কারণ হতে
পারে বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহ আইনত নিষিদ্ধ হলেও আইন প্রয়োগে দুর্বলতা ও
পারিবারিক সচেতনতার অভাব রয়েছে।
অনেক অভিভাবক নিরাপত্তার কথা ভেবেও
মেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেন। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির পর বখাটের
উৎপাতের কথা ভেবেই এমনটি বেশি করা হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নিয়েও
অনেক অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীর আগ্রহ সৃষ্টির চেষ্টা না করে
এখনো সেখানে শাস্তিকেই বেশি পছন্দ করা হয়। বিদ্যালয়ের রুক্ষ আচরণও অনেক
শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবিমুখ করে। পারিবারিক অভাব-অনটনও শিক্ষার্থীদের ঝরে
পড়ার একটি বড় কারণ। পরিবারের আর্থিক সহায়তার জন্য অনেক অভিভাবকই মাধ্যমিক
পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কোনো না কোনো কাজে ঢুকিয়ে দেন। কিছু গবেষণায়
পঠনপাঠন ও পরীক্ষা পদ্ধতির দুর্বলতাও উঠে এসেছে।
দারিদ্র্য, বাল্যবিবাহ ও
আবাসস্থল ত্যাগ শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার প্রধান কারণ। এক গবেষণায় দেখা
গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর জীবিকার প্রয়োজনে অনেক অভিভাবক সন্তানদের
উপার্জনমূলক বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন। এরপর এই শিশুরা আর কখনো
শিক্ষাজীবনে ফিরবে কি? প্রয়োজনের তুলনায় কম হলেও সরকার এরই মধ্যে কিছু
উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের উদ্যোগ আরো বাড়াতে হবে। ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকদেরও
বিশেষ দায়িত্ব নিতে হবে।
শিক্ষা যেন সর্বজনীন হয়, তা রাষ্ট্রকেই দেখতে
হবে। মেয়ে ও ছেলের পার্থক্য, ধনী ও দরিদ্রের পার্থক্য, গ্রাম ও শহরের
পার্থক্য এ সবই যদি খুব বেশি হয়ে যায়, তাহলে শিক্ষার সর্বজনীনতা
ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি শিক্ষা যাতে ভীতিকর না হয়ে আগ্রহের বিষয় হয়,
সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।