জহির শান্ত ||
বিচ্ছিন্ন
কয়েকটি ঘটনা ছাড়া কুমিল্লার তিন উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ
ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর জেলার আদর্শ সদর, চৌদ্দগ্রাম ও
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার এসব ইউনিয়নে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হয়।
সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হয়ে চলে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত। এর মধ্যে চেয়ারম্যান
পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০টি ইউনিয়নে। বাকি ৬ ইউনিয়নের ৫টিতে নৌকা
প্রতীকের প্রার্থী এবং একটি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী
বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেন। গতকাল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২০ ইউনিয়নের
১২টিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা এবং বাকী ৮টিতে
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। সব মিলিয়ে ৪র্থ ধাপে অনুষ্ঠিত
কুমিল্লার তিন উপজেলার ২৬ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ১৭টিতে আওয়ামী লীগ এবং
৯টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হলেন।
রবিবার ভোট
চলাকালে বিভিন্ন ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই প্রতিটি
কেন্দ্রে ভোটাররা আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কেন্দ্রগুলোতে
বাড়তে থাকে ভোটারের সংখ্যা। নির্বাচনকে ঘিরে নানা ধরনের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও
সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকলেও তা ছাপিয়ে উৎসবের আমেজেই ভোট দিয়েছেন ভোটাররা।
তবে
চৌদ্দগ্রাম ও সদর উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার খবর পাওয়া
গেছে। আর ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মহালক্ষীপাড়ায় জালভোট দেয়ার চেষ্টাকালে
দুইজনকে আটক করে সাতদিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এছাড়াও চৌদ্দগ্রামের ধনিজকরা কেন্দ্রে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। কেন্দ্র
দখল করে ভোট দেওয়ায় দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা
ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ধনিজকরা সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। অপরদিকে অরাজকতা সৃষ্টি করে
‘ছায়াবিতান’ নির্বাচনী কেন্দ্র দখলের প্রস্তুতিকালে হাজিবাড়ি সংলগ্ন
পুকুর-পাড় থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র ও ককটেল উদ্ধার করে আইন শৃঙ্খলা
বাহিনী।
বিচ্ছিন্ন এসব ঘটনা ছাড়া কুমিল্লায় শান্তিপূর্ণভাবেই ৪র্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।
সকাল
সাড়ে ৯টায় ব্রাহ্মণপাড়া সদর ইউনিয়নের মহালক্ষীপাড়া শরীফ প্রাথমিক বিদ্যালয়
কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটারদের দীর্ঘ সারি। নারী ও পুরুষ ভোটাররা আলাদা
আলাদা লাইনে আছেন ভোট দেয়ার অপেক্ষায়। ১০টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে ৫ শতাধিক
ভোট ‘কাস্ট’ হয়। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোঃ ছাদেকুর রহমান জানান,
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হচ্ছে। ভোটারদের উপস্তিতিও সন্তোষজনক।
সকাল
পৌনে ১০টার দিকে কেন্দ্রটি পরিদর্শনে আসেন কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক
(সার্বিক) শাহাদাৎ হোসাইন। কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ, ভোটার উপস্থিতি ও
শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বেলা পৌনে ১১টায়
শিদলাই গোলাবাড়ি কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
তবে ভোটারদের অভিযোগ ছিলো ধীরগতি নিয়ে। ১৫ মাসের শিশু বাচ্চাকে সাথে নিয়ে
কেন্দ্রে আসা শাহিনুর নামে এক ভোটার জানান, ‘সকাল ৮টায় ভোটের লাইনে
দাঁড়িয়েছি, এখন ১১টা বাজে- ভোট দিতে পারিনি। ভোট খুব স্লো’। জানতে চাইলে
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার বরুণ চন্দ্র দে বলেন, ভোটার উপস্থিতি ভালো।
তবে মহিলা ভোটগ্রহণে কিছুটা ধীরগতি হচ্ছে। ‘কেন্দ্রের কিছু সীমাবদ্ধতার
কারণে’ এ ধীরগতি বলে জানান তিনি। সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে ৫৮০ জনের
ভোট গ্রহণ করা হয়।
বেলা সাড়ে ১২টায় ধান্যদৌল কেন্দ্রে গিয়ে ভোটার
উপস্থিতি কিছুটা কম চোখে পড়ে। তবে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শরীফ উদ্দিন
মজুমদার জানান, সকালের দিকে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিলো। সাড়ে ১২টা
পর্যন্ত এ কেন্দ্রে ৮শ’ ভোট কাস্ট হয়।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করার পর থেকেই একটি
অবাধ, সুষ্ঠু, উৎসবমুখর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কাজ করা
হয়েছে। আজ (রবিবার) অনুষ্ঠিত হয়েছে বহুল আকাংখিত সেই নির্বাচন। অত্যন্ত
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, সুশৃঙ্খলভাবে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
দিনব্যাপি ভোটগ্রহণ শেষে রাতে ঘোষণা করা হয় ফলাফল। নির্বাচনে ৮টি
ইউনিয়নের মধ্যে ২টি আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এবং বাকি
৬টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন।
এর মধ্যে ব্রাহ্মণপাড়া সদর
ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জহিরুল হক, মাধবপুর
ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ফরিদ উদ্দিন, শিদলাই ইউনিয়নে চশমা প্রতীকের
স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম, সাহেবাবাদ ইউনিয়নে আনারস প্রতীকের
প্রার্থী মনির হোসেন চৌধুরী, শশীদল ইউনিয়নে আনারস প্রতীকের প্রার্থী আতিকুর
রহমান রিয়াদ, মালাপাড়া ইউনিয়নে আনারস প্রতীকের প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহ আল
মামুন, চান্দলা ইউনিয়নে কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী ওমর ফারুক এবং
দুলালপুর ইউনিয়নে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী আনিসুল হক ভূইয়া রিপন বিজয়ী
হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে কুমিল্লা সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন পরিষদের
নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪টি ইউনিয়নে
চেয়ারম্যান পদে ৪ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়েছেন। চেয়ারম্যান
পদে গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে ২টি ইউপির নির্বাচন। এর মধ্যে ১নং কালির বাজার
ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নুরুল ইসলাম সিআইপি এবং ৪নং আমড়াতলী
ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী মোজাম্মেল হক বিজয়ী হয়েছেন।
সদর
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে,
সুশৃঙ্খলভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটারদের উপস্থিতিও ছিলো সন্তোষজনক।
সন্ধ্যার পর থেকে প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের ফলাফল জানিয়ে দেয়া হয়।
এছাড়া
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে ৮টিতে আওয়ামী লীগ
চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং দুইটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এ
উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে মামলা জনিত কারণে ১টির নির্বাচন স্থগিত রয়েছে।
বাকি ১২টির মধ্যে শ্রীপুর ও ঘোলপাশা ইউনিয়নে আ’লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান
প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল অনুষ্ঠিত
নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফলে কাশিনগর ইউপিতে আ,লীগ প্রার্থী মোশারেফ হোসেন
উজিরপুরে নায়িমুর রহমান মাছুম,কালিকাপুরে মাহাবুব হোসেন মজুমদার,শুভপুরে
খলিলুর রহমান মজুমদার, মুন্সীর হাটে মাহফুজ আলম,বাতিসায় ফকরুল আলম
ফরহাদ,কনকাপৈতে জাফর ইকবাল, জগন্নাথে জানে আলম বিজয়ী হয়েছেন। এছাড়াও
গুণবতীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো:মোস্তফা কামাল এবং চিওড়ায় চিওড়ায় আবু তাহের
বিজয়ী হয়েছেন। এর আগে উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নে আ’লীগ প্রার্থী শাহজালাল
মজুমদার এবং ঘোলপাশায় এ কে খোকন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচন
পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ জানিয়ে কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ
দুলাল তালুকদার জানান, ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। নির্ঝঞ্ঝাট
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই
ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। আমরা মানুষকে অবশ্যই বুঝাতে সক্ষম হচ্ছি-
আপনারা ভোট কেন্দ্রে এসে যাকে ভোট দিবেন তিনিই নির্বাচিত হবেন। আমরা আশা
করি- পরবর্তী ধাপের নির্বাচন গুলো সুষ্ঠু সুন্দর নিরপেক্ষ নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হয়েছে।