বন্ধনহীন বাঁধন আনোয়ারুল হক ।।
সবচেয়ে বড় যে অভাব মানুষের মনের ভিতরে বাস করে তাকে দেখা যায় না। বস্তুগত প্রাচুর্য, অভাব এসব দেখা যায়। যে অভাব কাউকে দেখানো যায় না, বলাও যায় না, সওয়া এক রকম কষ্টকর নির্যতন- তার থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া ভার। সবসময় মনের ভিতর সে কুটকুট করে কামড়ায়। যে কারণে ললিতা আজকাল ঘরের যেখানে হাত রাখে সেখান থেকেই যেনো বেদনার একতারা বেজে ওঠে। মনে হয়, আর কত!
গত তিরিশ বছরে নিজের এই সংসারটাকে দেখতে দেখতে লালিতার মনে হয়, যাকে উপলব্ধিও বলা যায়, দেখতেও পাচ্ছে ওর চারপাশে, যে যত বড় ধনী সে তত বড় ভিখারি। ভিক্ষুক যেমন ভিক্ষা মাগে, ক্রমে সেটা স্বভাবে পরিণত হয়, একজন অর্থলোভী, পুঁজিপতিরও স্বভাব ঠিক তেমনি। কেবল চাই, চাই। ওদের স্বভাব বদলায় না। ললিতার মনে পড়ে, বিয়ের আগে সে তখন বাবা মায়ের সঙ্গে সে তখন আজিমপুর কলোনিতে থাকে। চারুকলায় সেকেণ্ড ইয়ারে। এক বিকেলে সে নিউমার্কেট পোস্ট অফিসে গেছে চিঠি পোস্ট করতে। অবশ্য কেবল চিঠি পোস্ট করাই তার কাজ ছিল না, ইচ্ছে ছিল আর্ট কলেজের চতুর্থ বর্ষের ফাইন আর্টস এর ছাত্র নিউমার্কেটের পশ্চিম-পাশে হোস্টেলে থাকে মাসুম ভাইকে এক নজর দেখা। এটা ঠিক, এক নজর দেখার জন্য ললিতার মতো বয়সের মেয়েরা সে আমলেই যেতো। যে আমল থেকে ললিতা ঠিক তিরিশ বছর পার করে এসেছে।
ললিতা যখন গেছে মাসুমের হোস্টেলে পৌঁছেছে তখন মাসুম কক্ষে ছিল না। আউটডোরে বুড়িগঙ্গার পাড়ে ইজেল,রঙ,তুলি নিয়ে বের হয়ে গেছে। সেজন্যে চিঠিটা হাতে দিতে না পেরে ললিতা এসেছে পোস্ট অফিসের ডাকবাক্সে পোস্ট করতে। কাউন্টার থেকে সে যখন খাম কিনছে তখন খর্বাকৃতির একজন ভিক্ষুক কাউন্টারের নিচে মাটিতে বসা ছিল। তার হাতে একটা মানি-অর্ডারের ফরম। ভিক্ষুকটি মিনতির চোখে ললিতার দিকে তাকিয়ে ছিল। সে খাম কিনে, ঠিকানা লিখে আঠা দিয়ে মুখ বন্ধ করে চিঠি পোস্ট করার পর ভিক্ষুকটি ললিতাকে বললো,
-আফা আমার একটা কাজ কইরা দিবেন ?
ললিতা পূর্ণ মনোযোগে ভিক্ষুকটির দিকে তাকালে সে হাতের মনি অর্ডার ফরমটি দেখিয়ে বললো,
-এই মানি-অডারে আমার বৌয়ের নাম-ঠিকানাডা লেইখা দিবেন ? আমি তো লেখতে জানি না।
নোয়াখালির বেগমগঞ্জে বাড়ি ভিক্ষুকটির নাম ঠিকানা লিখতে লিখতে ললিতা জানলো, এক মাসে ভিক্ষা করে পাওয়া রোজগার থেকে থাকা-খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে পাঁচশ টাকা সে বাড়িতে পাঠাচ্ছে বড় বউয়ের নামে। বাড়িতে ওর দুই বউ. দুজনের ঘরে দুই ছেলে-মেয়ে। তিনটে দোচালা টিনের ঘর আর ধানি জমিও আছে। তিন মাসে ছয় মাসে একবার বাড়ি যায়। গত বিশ-বাইশ বছর ধরে সে ভিক্ষা করে পোস্ট অফিসের সিঁড়ির গোড়ায়। বলতে বলতে ভিক্ষুকটির তৃপ্ত মুখের দিকে বিস্ময় চোখে তাকিয়ে দেখে ললিতা। প্রশ্ন না করে পারে না,
-বাড়িতে দুই বউ, ছেলে-মেয়ে, তিনটা ঘর, ধানের জমি, চাষের গরুও আছে বললা- এতসব এই ভিক্ষা করে হয়েছে তোমার ?
একটু যেন লজ্জিত ভিক্ষুকটি, হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে।
-তো এখনও তুমি ভিক্ষা করছো কেন ? তোমার তো এখন কোন অভাব নেই !বাড়িতে গিয়ে হালচাষ করলেও তো তোমার চলে যাবে!
কিন্তু চিরকালের অভাব যাদের, ধনী ভিক্ষুক আমজাদ আলী থেকে এই সামনের মাটিতে উপুড় হয়ে বসা ভিক্ষুকটি পর্যন্ত সেদিন জবাব দিয়েছিল একটাই, বলে-
কী করমু আফা, ভিক্ষা না করলে ভালা লাগে না। এইডা ত ছাড়ন যাইব না আফা!
ললিতা খাটের পাশে একটি গদি মোড়া টুলের ওপর বসে এসবই ভাবছিল। প্রতিদিনের মতোই মনোটোনাস আরও একটি দিন শুরু হয়েছে ওর। এখন সকাল দশটা। দুজন নার্স, একজন পুরুষ ও একজন মহিলা দুই শিফটে চারজন পালা করে সর্বাঙ্গ অসাড় আমজাদ আলীর সব কাজ করে। ললিতার কাজ হলো তিনবেলা খাওয়ার সময় চামচ দিয়ে খাইয়ে দেয়া আর বাকি সেবার তদারকি করা। ললিতা খাইয়ে না দিলে নার্সের হাতে সে খাবে না। সুদৃশ্য পালংকের ওপর সটান শুয়ে থাকা মানুষটি খাবার সময় ছাড়া দিন-রাতের অধিকাংশ সময় চোখ বন্ধ করে রাখে। ওষুধ এবং খাওয়ার সময় হলে নার্সদের ডাকে কেবল চোখ খোলে। কথা প্রায় বলেই না, বললেও গোঙ্গানির মত শব্দ হয়। চোখ ও মুখের দিকে তাকিয়ে ললিতা অনেক সময় বুঝতে পারে না, বেঁচে আছে তো! তখন সে নাকের কাছে হাত রেখে শ^াস উঠা-নামা করছে কি না দেখে। খুব মৃদু লয়ে হাতের ওপরের ত¦ক ছুঁয়ে যায় দম, জানান দেয়, সে বেঁচে আছে।
একে কি বেঁচে থাকা বলে! ললিতার জীবনে এই বেঁচে থাকাটা অন্যরকম হতে পারতো। বিয়ের আগে থেকেই ওর স্বামী আমজাদ আলী ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। প্রাচুর্য তার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। সেই ধন-সম্পদকে আরও বাড়িয়ে পাহাড় সমান করার মধ্যে যে আত্মগৌরব আছে সেই হাতছানিকে তরুণ আমজাদ ছাড়তে চাইলো না। সরে এলো না যথেচ্ছ নারীসঙ্গ। বিশেষত দ্বিতীয় স্বভাবটির কথা টের পেয়ে ললিতা প্রথম কয়েক বছর লাগাম টানতে গিয়ে ছিঁড়ে যাবার আশংকায় ক্ষ্যান্ত দিয়েছে। সরে এসেছে। বড় হতে হতে একমাত্র ছেলে সৌম্য, সেও একসময় সবকিছু জেনেছে। টের পেয়েছে। কিন্তু স্বভাবটা ওর বাপের মতো হয়নি। বুয়েট থেকে ট্রিপল ই’তে পাশ করে বের হয়ে বাপের ছায়া থেকে আলগোছে দূরে সরে গেছে। কানাডাতে সেটেল্ড হয়েছে গত বছর থেকে। মাকে ফোন করলেই বলে, -মা চলে এসো। সারা জীবন তুমি একা ছিলে। এখনও একাই আছো। তাও আবার এখন একটা জ্যান্ত লাশ আগলে বসে আছো। হয় আমার কাছে এসো, না হয় পালাও এই নরক থেকে।
-কোথায় পালাবো এই বয়সে ?
-কোথায় পালাবে মানে ?সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াও। যেখানে খুশি সেখানে যাও। তোমার স্বামীর তো টাকার অভাব নেই। আর কতদিন নিজেকে মারবে তুমি ?
এভাবেই কথা বলে সৌম্য। স্পষ্ট। কোন ভনিতা নেই। বলে,
ওই নার্সরাই ওকে দেখে রাখবে। প্যারালাইজড হবার আগে দিন-রাত তো ওনি অন্যদের নিয়ে বেঁচে ছিলেন। আমাদের দিকে ফিরেও তাকায় নি। টাকাই যখন ওর কাছে সব ছিল এখন বুঝুক। তুমি পালাও, নাহলে আমার কাছে চলে এসো। তাকে বুঝতে দাও মা।
হয়তো বা আমজাদ আলী এখন বুঝতে পারছেন। যদিও তা জানার উপায় নেই। গলা পর্যন্ত অসাড় মানুষটি কথাও বলতে পারে না। সময়ে বুঝতে পারেন নি, ভিক্ষুকের স্বভাব থেকে সরে আসা দরকার। যতদিন সুস্থ ছিলেন, রাত দিন এক করে টাকা রোজগারের পিছনে ছুটছেন তখন ললিতা এবং একমাত্র ছেলে সৌম্য দুজনেই তার সান্নিধ্য কামনা করেছে। পায়নি। সময় ছিল না ওর। আজ দেশে আছেন তো কাল বিদেশে। দেশে যখন আছেন তো বিজনেস ম্যাগনেটদের নিয়ে ধান্ধা, ছাব্বিশটা কোম্পানির বোর্ড মিটিং, রাজনীতিক, ক্লাব, সোসাইটি নানা জাতের সঙ্গে সভা, সৌজন্য সাক্ষাত, মত বিনিময় ইত্যাদি নিয়ে এতই ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন আমজাদ আলী যে সেই তালিকায় ললিতা এবং সৌম্যর নাম ছিল না। ললিতা নিজের জীবন দেখতে দেখতে মনে করে, প্রতিটি মানুষের নিজের দিকে নিজে তাকানোর ফুরসত থাকা দরকার। অন্যের কথা থাক, যে মানুষ নিজের দিকে নিজে তাকায় না, সেই মানুষের শরীর এক সময় তার দিক থেকেও বুঝি মুখ ফিরিয়ে নেয়। আমজাদ আলীর শরীর আজ যখন হাল ছেড়ে দিয়েছে তখন সে জড়বস্তুর মতো মুখ থুবড়ে পড়েছে। যেখান থেকে উঠে দাঁড়াবার শক্তি আর তার নেই।
কিন্তু ললিতার জীবন যে ফুরিয়ে যায়নি তা যেন টের পাইয়ে দিল মাসুম জাব্বার। এতগুলো বছর পর! আজ সকালে নাস্তা খাওয়ার আগে ল্যাপটপ খুলে ফেসবুকে সে একটা ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট পেলো। নাম দেখলো মাসুম জাব্বার। প্রোফাইল খুলে চেহারা আর নাম মিলিয়ে ভেজা কাপড় চিপে জল ফেলার মতো পুরোনো জং ধরা বুকের ভিতর একটা মোচড় খেলো ললিতা। রীতিমত তার হাত, বুক কাঁপতে শুরু করেছে ততক্ষণে। মাসুম ভাই! এতদিন কোথায় ছিলেন!
ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করলো না ললিতা। ল্যাপটপ বন্ধ করে উঠে বারান্দার বেলকনিতে এসে খোলা আকাশ থেকে এক বুক শ^াস নিলো সে। শ^াস ছেড়ে দিয়ে সামনের লেকে নীল জলের জীবন তার চোখে জল এনে দিলো। এই জল তাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে গেলো পিছনে। আর এত বছরের অবহেলিত জীবন যেনো আলো বাতাসের স্পর্শ পেয়ে সবুজ কুঁড়ি মেলে দিতে চাইছে দিগন্তে। অন্ধকার গবাক্ষের বাইরে মাথা গলিয়ে দিতে চাইছে মন! মরে যাবার আগে আরও একবার বাঁচা, একটা পরম আকুতি ললিতার বুকের ভিতর থেকে ইডেন কলেজে পড়ার সময়ের ললিতাকে টেনে বের করে আনতে চাইছে।
সারাবেলা নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে রাতে যখন সে নিজের ঘরে এলো তখন সে ল্যাপটপ খুলে মাসুমের আহ্বানে সাড়া দিল। -এতকাল পড়ে তুমি ? কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে বলো ?
সাথে সাথে জবাব এলো, কেমন আছো জিজ্ঞেস করবো না। আমি তোমার সব জানি। ইচ্ছে করলে তোমার সামনে যেতে পারতাম। যেতে পারি। শুধু জানতে চাই আমি যদি হাত বাড়িয়ে দিই তাহলে কি তুমি আমাকে গ্রহণ করবে ?
ললিতা জবাব দিল, না।
ল্যপটপ বন্ধ করলেও বুকের ধুকপুক বন্ধ হলো না। হুড়মুড় করে ভাঙছে নদীপাড়। এই ভাঙন থামাতেই বুঝি এরপর গত একমাস ফেসবুকে কোন সাড়া দিল না ললিতা।
কিন্তু গত একমাসে মাসুমের আকুতি থেমে থাকলো না। মেসেঞ্জারে মাসুম জানাতে থাকলো,
তোমার চিঠির জবাব না দেওয়ার কারণসহ পারিবারিক বিপর্যয়ের কাহিনি বলে অপরাধ কমাতে চাইনে। দেশের বাইরে ফ্রান্সে ছিলাম এত বছর। বিদেশিনী যাকে বিয়ে কিেছলাম তার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পর ভালো লাগছিলো না দেশের টানে ফিরে এসেছি।
আরেকদিন লিখলো, কাজকর্ম ঢাকাতেই যা করছি তাতে দিন চলে যায়। চলে যাবে। বাসার ঠিকানা দিলাম।
আরেকদিন, তোমাকে চাই।
আরও একদিন লিখলো, চলে এসো ললিতা। জীবনের শেষ দিনগুলি দুজনে একসঙ্গে বাঁচি। এখন তো শরীর চাইনে। মন চাই। মনে আছে তোমার, আর্ট কলেজে তুমি আমাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করতে!
আরেকদিন, তুমি ছবি আঁকা ছেড়ে দিয়েছো জানি। চলে এসো আমার কাছে। এবার দুজনে মিলে নতুন জীবনের ছবি আঁকবো ললিতা।
ফোন এলো সৌম্যর। প্রথম বাক্যটাই ললিতাকে চমকে দিল,
-শিল্পী মাসুম জাব্বারকে তুমি চেন কি করে মা ?
-চিনি মানে ? এ কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন ?
ললিতা চোখ বন্ধ করে দমকা ঘুর্ণী বাতাসটাকে ঝাপটা দেওয়া থেকে দুই হাতে যেন আটকাতে চাইল। সৌম্য আরও স্পষ্ট করলো জিজ্ঞাসা,
-বা রে, দেশে-বিদেশে একজন বিখ্যাত শিল্পী ইদানীং প্রতিদিন সকালে তোমাকে ফেসবুকে সুপ্রভাত, শুভকামনাসহফুলের তোড়া দিচ্ছে। যদিও তুমি তাকে কোন জবাবই দিচ্ছ না। আর সে ক্লন্তিহীন তোমাকে সম্ভাষণ জানিয়েই যাচ্ছে! ব্যাপারটা কি মা ? অতীতের কেউ ?
সৌম্যের একাধিক ব্যক্তিগত প্রশ্নে খুব বিব্রত হয়ে পড়ে ললিতা। কী জবাব দেবে ছেলেকে ! পাথর হয়ে গেছে সে !
মায়ের কোন জবাব না পেয়ে সৌম্য এবার শরীর থরথর করে কেঁপে ওঠার মতো বাক্যটি বলে,
-মা, নিজেকে আর কত ফাঁকি দেবে ? আমি বুঝতে পারছি মা। যদি তেমন কিছু তোমার থেকে থাকে মা, ফিরিয়ে দিও না। জীবন জীবনই। জীবন থেমে থাকে না। তোমার এমন জীবন পালন জীবনের অপমান। পালাও মা। সুযোগ থাকলে পালাও।
জবাবে ললিতাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সৌম্য লাইন কেটে দিল।
দুই
এরপরের তিনদিন কাজের ফাঁকে নিজের সাথে যুদ্ধ করে গেল ললিতা।
জিতল মাসুম জাব্বার। মেসেঞ্জারে লিখলো সে, আমি আসছি।
বিকেলের দিকে ঘরের মানুষটাকে শেষবারের মতো দেখতে এলো ললিতা। আমজাদ আলী তখন ঘুমাচ্ছে। ডিওটিতে থাকা নার্স মাথার পাশে একটু দূরে চেয়ারে বসে আছে। দরজার ওপাশে আছে দুজন হুকুমের অপেক্ষায়। এছাড়াও রান্নার লোক, দারোয়ানসহ আরও লোকজন আছে বাড়িতে। ঘড়ির কাঁটায় সব চলে কেয়ার টেকারের নির্দেশে। কেবল তিনবেলা ললিতাকে খাইয়ে দেবার কাজটুকু ছাড়া। স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে একবার ভাবনাটা মাথায় এলো,
-আজ রাতে খাবার সময় ললিতাকে কাছে না পেলে ঠিকঠাক খাবে তো মানুষটা!
মনে হলেও কথাটা পাত্তা দিল না ললিতা। গত তিরিশটা বছর ধরে বয়ে বেড়ানো ভালোবাসার নামে এই আবেগ দমিয়ে রাখতে না পারলে পালাবে কী করে সে!
আগে থেকে গুছিয়ে রাখা মাঝারি ট্রলি সুটকেসটা নিয়ে রাস্তায় নেমে এলো ললিতা। কোথায় যায়, কখন ফিরবে ললিতা- এই প্রশ্ন করার কেউ কোনদিন ছিল না, আজও নেই।
যাবে সে আজিমপুরে। গ্রীনরোডের চৌমাথায় রিক্সাটা ট্রাফিক সিগনেলে থেমে আছে অনেকক্ষণ হলো। ললিতা অনুভব করছে, ওর শরীরটা হালকা লাগছে কিন্তু মাথাটা ভার হয়ে আছে। মনটাকে ফেরাবার জন্যেই সে চারিদিকের হৈ চৈ, যানবাহনের হুল্লুড়, ছুটতে থাকা মানুষের মুখ দেখতে থাকলো। দেখতে দেখতে ললিতার চোখ এসে থমকে দাঁড়াল ফুটপাতে। দেয়াল ঘেঁষে চারটে বাঁশের খুঁটিতে পলিথিনে মোড়া একচালার নিচে লোলচর্মের দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধার দিকে তকিয়ে সে দেখতে পেলো, এক বৃদ্ধা পরম আদরে ভিক্ষালব্ধ খাবার এক বৃদ্ধের মুখে তুলে দিচ্ছে। আর কী কথায় দুজনেই দন্তহীন মাড়ি দেখিয়ে হু হু করে হাসছে। হাসির দমকে বৃদ্ধার মুখ থেকে ভাত ছিটকে পড়ছে মাটিতে। তাতে মৃদু বকুনি দিয়ে বৃদ্ধা ওর মলিন শাড়ির আঁচল দিয়ে বৃদ্ধের এঁটো মুখ মুছে দিয়ে গেলাসের জল বাম হাতে মুখের সামনে তুলে ধরে বলছে,
-জলদি পানি খাও, ন্ইলে ভিরমি খাইবা। মরবা!
যেনো খুব হাসির কথা। আবারও দুজনে ফোকলা দাঁতে হাসে।
অপরূপ দৃশ্যটি দেখতে দেখতে ললিতার চোখে জল এসে গেল। প্রতিবেলা খাবার সময় সৌম্যর বাবার কাক্সিক্ষত দৃষ্টি ওর চোখের সামনে দেখতে পেলো সে। তাকে না পেলে যদি মানুষটা না খায়! জেদ করে! মুখে যার বলার ক্ষমতা নেই তার মনের ভাষা কে বুঝবে! সে ছাড়া!
মনের অজান্তে কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়া নিজের চোখের জল শাড়ির আঁচলে মুছে নিয়ে যুবক রিক্সাওয়ালাকে ললিতামৃদু স্বরে বললো,
-ভাই রিক্সাটা ঘুরিয়ে যেখান থেকে এসেছি সেখানে ফিরে চলুন।
তারপর মনে মনে মনকেই শোনালো ললিতা,
-ঘরে যাকে ফেলে এসেছি তাকেও সঙ্গে নিতে হবে। না হলে যাই কী করে!
২১. ১২. ২০২১
সঞ্জয় গোস্বামীরকবিতাজোছনারকলঙ্ক
----------------------
আত্মদহনেরঅবারিতনগ্নতায়
প্রীতিবর্য্যেরআকস্মিক
চুম্বনেরমোহঅযথাই।
স্বীকৃতবন্ধনেরআবেশহীন
সহমরনেরসাদাদেয়ালে
তৃতীয়সত্তারঅবুঝচোখের
কাতরচাহনিতে
ম্রিয়মানদ্রোহেরসকলক্ষোভ।
দ্বৈতসত্তারঅবাধআনাগোনা
দেহমনেরঅতৃপ্তবাসনার
বিয়োগান্তআত্মদহন,
পরিযায়ীঅতৃপ্তবাসনার
তৃপ্তস্নানেঅপমৃত্যু।
নির্লজ্জতারকরুন প্রিয়তা
আঁধারেরচোখেরকোনে
জমেথাকারক্তবিন্দুদিয়ে
রঙ্গীনহরফেলিখেরাখে
পূর্ণচন্দ্রেরকলঙ্ক, জোছনা।।
৷৷আকুতি
"""""""""""""
হেস্রষ্ঠা
কোনশত্রুমিত্রনেই
আপনিসবাইকেক্ষমাকরুন।
আমাদেরউল্টোদিকেচলাসত্বেও
আমাদেরপ্রতিবর্ষিতকরুন
আপনারকরুনাধারা।
আমাদেরতরেদানকরুন
শক্তি ,আলোএবংদৈবস্পর্শ।
অসহনীয় ,অজানাব্যাধি
নিরাময় করুন ,
দূরকরুনআমাদের
অগনিতঅজ্ঞানতা।
কঠোরহাতেদমনকরুন
মানুষেরমধ্যকারগরমিল।
আর ,ধীরেধীরেশুদ্ধকরুন
মানবপ্রানেরশিরাউপশিরায়
বসতকরাঅশুদ্ধতাকে।
আলো, দানকরুনমানবকুলে
উচ্ছসিতহোকমানুষের
মনস্তাত্বিকসুপ্তমানবিকতা ,
পরিশুদ্ধহোক মানবপ্রান।
উদ্ভাসিতহোক ,পরমপ্রিয়তা
আপনারতরে ,আপনায়।
যখনইপরিশুদ্ধহবেমানবিকতা
মানুষ ,তখনই ফিরেআসবে
বিপরীতদিকে - সত্যেরদিকে।
পরিত্রাণপাবেমানবকুল
অজানাব্যাধিথেকে।
অগনিতঅপরাধ ,অজ্ঞানতা
ক্ষম, ক্ষম ,ক্ষমনিজগুণে ।
পরিত্রান , শুধুতোমাতেই
বর্ষিততোমারপরমকরুনাধারায়।
হেসর্বনিয়ন্তক ,জগতেরপ্রতিপালক
পুরনোসভ্যতারপুরনোঘরদোর
ভেঙ্গেফেলুন ,তাকাতেদিন
নতুনআলোয়ঝলমল ,
নতুনশৈলীরসভ্যতার।