
চলমান মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট
বাদ দিলে নিউজিল্যান্ডে এমন দিন খুব কমই এসেছে বাংলাদেশের। কিউই কঠিন
কন্ডিশনে সুন্দর সমাপ্তিতে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ড্রেসিং রুমে ফেরার উপলক্ষ
সফরকারী যেকোনও দলের জন্যই আসলে ‘বিশেষ’। এবারের সফরে গিয়ে প্রথম টেস্টের
তিন দিনেই বলতে গেলে সেই উপলক্ষ পেয়েছে বাংলাদেশ। যে ব্যাটিং সবচেয়ে
দুশ্চিন্তায় জায়গা ছিল, সেখানেই বাজিমাত মুমিনুল হকদের। নিউজিল্যান্ডের রান
টপকে লিড নেওয়া, নতুন বছরে সত্যিই নতুনভাবে ধরা দিচ্ছে বাংলাদেশের টেস্ট
পারফরম্যান্স।
আজ (সোমবার) মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের রান ৪০০ ছাড়িয়েছে। দিনশেষে সফরকারীদের সংগ্রহ ১৫৬
ওভারে ৬ উইকেটে ৪০১ রান। ফলে কিউইদের ৩২৮ রান টপকে মুমিনুলরা পেয়েছে ৭৩
রানের লিড।
তবে আক্ষেপ হয়ে থাকবে দুটো সেঞ্চুরি না পাওয়া। শতকের
সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি মুমিনুল হক ও লিটন দাস। মুমিনুল আউট হয়েছেন ৮৮
রানে, আর লিটন ফিরে যান ৮৬ রানে। মাহমুদুল হাসান জযের ব্যাট থেকে আসে ৭৮
রান। ব্যর্থ হয়েছেন মুশফিকুর রহিম, ১২ রানে আউট অভিজ্ঞ ব্যাটার। তৃতীয় দিনে
বাংলাদেশ এই চার ব্যাটারকে হারিয়ে স্কোরে জমা করেছে ২২৬ রান।
দ্বিতীয়
দিনে আলো ছড়িয়ে ওপেনার জয় প্রত্যাশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তৃতীয়
দিন নড়বড়ে ব্যাটিংয়ের মাশুল দেন। অফ স্টাম্পের বাইরের বল অযথা খেলতে গিয়ে
ক্যাচ দিয়েছেন গালিতে। তাতে দিনের শুরুতে উইকেট পতনে ব্যাকফুটে চলে যায়
বাংলাদেশ।
জয় মাঠে নেমেছিলেন আগের দিনের ৭০ রান নিয়ে। সঙ্গে ছিলেন টেস্ট
অধিনায়ক মুমিনুল। নিল ওয়াগনারের বাইরের বলটা ছেড়ে দিলেও হতো। কিন্তু
ফুটওয়ার্ক না করে খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন জয়। ক্যাচ নিয়ে নেন হেনরি
নিকোলস। তাতে ২২৮ বলে ৭৮ রানে শেষ হয় জয়ের দুর্দান্ত একটি ইনিংস। তারপর
মুমিনুলও ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন কাইল জেমিসনকে। কিন্তু কিউই পেসার তা হাতে
জমাতে পারেননি।
নতুন বল নেওয়ার আগের ওভারে তো ভাগ্যের পরশে বেঁচে যান
মুমিনুল! আবারও ওয়াগনারের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু থার্ড
আম্পায়ার পায়ের ‘নো’ ডাকায় জীবন পান বাংলাদেশ অধিনায়ক।
তারপর অবশ্য
মুশফিক-মুমিনুল মিলে সতর্ক থেকেই পার করার চেষ্টা করেন কিছুটা সময়। কিন্তু
মনোযোগ ধরে রাখতে না পারায় থিতু হতে পারেননি মুশফিক। লাঞ্চ ব্রেকের তখন ২০
মিনিট বাকি। বোল্টের ফুলার লেন্থের বল বুঝতেই পারেননি অভিজ্ঞ ব্যাটার। ভুল
লাইন ধরে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন ১২ রানে। তার ৫৩ বলের ইনিংসে ছিল
একটি চার।
নিউজিল্যান্ড কন্ডিশন জয় করে দারুণ ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী
বাংলাদেশের। দেশের বাইরে ব্যর্থতার ‘সিল’ লেগে যাওয়া মুমিনুল হকের ব্যাটেও
ফুটলো হাসি। চমৎকার ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু দুর্ভাগ্য, মাত্র ১২ রানের আক্ষেপে পুড়তে হলো তাকে। কয়েকবার জীবন
পাওয়া বাংলাদেশ অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত ৮৮ রানে আউট হয়ে গেছেন।
তৃতীয় দিনের
শুরুতে উইকেট হারালেও একপ্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা বাড়িয়ে নিয়েছেন
মুমিনুল। ব্যক্তিগত প্রাপ্তিতে নতুন আরেকটি অর্জন যোগ করতে যাচ্ছিলেন তিনি।
কিন্তু ট্রেন্ট বোল্টের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে শেষ তার ইনিংস। রিভিউ নিয়েও
বাঁচতে পারেননি। ৮৮ রানে আউট হয়ে যান তিনি। ২৪৪ বলের ধৈর্যশীল ইনিংসটি
বাংলাদেশ অধিনায়ক সাজান ১২ বাউন্ডারিতে।
তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনে দুটি
উইকেট পড়লেও দ্বিতীয় সেশনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন লিটন-মুমিনুল।
কিন্তু মুমিনুলের বিদায়ে ভাঙে লিটনের সঙ্গে তার ১৫৮ রানের জুটি। সঙ্গীকে
হারিয়ে লিটনও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
টেস্ট ক্রিকেটে দুর্দান্ত সময় পার
করছেন লিটন। পাকিস্তানের বিপক্ষে সতীর্থ ব্যাটাররা যখন লজ্জায় মুখ
লুকিয়েছিলেন, তখন তার ব্যাট থেকে এসেছে দেখার মতো ইনিংস। পারফরম্যান্সের
সেই ধারা নিউজিল্যান্ডেও ধরে রাখলেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। চমৎকার
ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ারে আরেকটি টেস্ট সেঞ্চুরি যোগ করার স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছিল
মনে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে লিটনের।
জ্বলে ওঠা বোল্টে বলে ঘায়েল
বাংলাদেশের উইকেটকিপার ব্যাটার। নান্দনিক সব শটে মুগ্ধ করা ইনিংসে টেস্ট
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পথে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু বোল্টের
বাইরে ফেলা বল ব্যাটের কানায় লেগে জমা পড়ে উইকেটকিপার টম ব্লান্ডেলের
গ্লাভসে। ফলে ৮৬ রানে শেষ হয় লিটনের ইনিংস। ১৭৭ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ১০
বাউন্ডারিতে।
তার বিদায়ের পর আর বিপদ বাড়েনি। দিনের বাকিটা পার করে দেন দুই অপরাজিত ব্যাটার মেহেদী হাসান মিরাজ (২০*) ও ইয়াসির আলী (১১*)।
তৃতীয়
দিনে বাংলাদেশের হারানো ৪ উইকেটের তিনটিই বোল্টের। বাঁহাতি পেসার ৬১ রান
দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। তার সমান ৩ উইকেট নিতে ওয়াগনারের খরচ ৯৮ রান।