জুলফিকার নিউটন ।।
৪
বিন্দু কি করে সিন্দুর কথা বলবে। বিন্দু এইটুকুই জানে সিন্ধুর ভেতরে সে আছে, আর সিন্ধুই আছে তার ভেতরে। বিন্দু আর সিন্ধু এক অথচ দুই। সাধকদের ভাষায় পরমাত্মা ও জীবাত্মা। একথা আমি বিশ্বাস করি, বহুর মধ্যে এক রয়েছেন, একছাড়া দুই নেই। সেই সঙ্গে এও বিশ্বাস করি দুই না হলে লীলা হয় না, মিলন হয় না, আর মিলনই শেষ কথা। মরমিয়ারা, মিষ্টিকরা সুফীরা সেই মিলনের জন্যেই ব্যাকুল। বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন ভাষায় সন্ত একই কথা একই সুরে গেয়েছেন। যার মর্ম হচ্ছে পরমাত্মার সঙ্গে আত্মার মিলন। যে মিলনে দুই এক হয়ে যায়।
আমার সাধনা তথাকথিত ধর্মীয় সাধনা নয়, রূপের সাধনা, রসের সাধনা। এই রূপ ও রসের সৃষ্টি নিয়ে আমি ব্যাপৃত, এই পথ দিয়েও স্রষ্ঠার অভিমুখে যাওয়া যায়। সৃষ্টির আনন্দস্বরূপ স্রষ্টা একজনের কাছে একরূপে আসেন। আমার কাছে এসেছেন প্রিয় মানুষ, প্রিয় প্রাণী, প্রিয় তরুলতা, প্রিয় পুষ্প ইত্যাদি রূপে। এদের মধ্যে আমি তাঁর সঙ্গ পাই। তাঁর জন্যে তীর্থে বা পবর্তগুহায় যেতে হয় না। তাঁর দয়া আপনিই বর্ষিত হয় আমার উপর। কখনও কখনও আঘাতরূপে। আমার মা বলতেন, “খোদা যা করেন, মঙ্গলের জন্যেই”। আমিও অনুভব করেছি যে, প্রথম তা মনে না হলেও আসলে সেটাই ঠিক।
এ জগৎ অনাদি অনন্ত নিজেকে নিজে পরিপূর্ণ। একে পরিপূর্ণতর করার কথা ওঠেই না। অথচ আধুনিক মনঙ্ক মানুষ আমি প্রতিদিন এত রকম দোষত্রুটি দুঃখ দূর্গতি দেখছি যে সমাজের রাষ্ট্রের দেশের পৃথিবীর মানবজাতির ও প্রকৃতির পরিবর্তনের সংশোধনের সংস্কারের বিপ্লবের পুনর্গঠনের পুনরুজ্জীবনের পুর্ণনবীকরণের প্রস্তুতির ও পারফেকশনের প্রয়োজন স্বীকার না করে পারিনে। এই নিয়ে আমার অর্ন্তজীবন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় ও দুই ভাগকে মেলাতে গিয়ে অন্তদ্বন্ধে জর্জর হই। ‘অশান্ত অশোক’ এরই প্রতিফলন।
স্রষ্টার কাছে জীবনভর আমি তিনটি বর চেয়েছি তার প্রথমটি হলো ইলুমিনেশন। আমার অন্তর যেন আলোয় ভরে যায়। বিশ্ব রহস্য যেন আমি সেই আলো দিয়ে ভেদ করতে পারি। সমস্ত যেন আমার কাছে পরিস্কার হয়ে যায়। দ্বিতীয়টি হলো প্রেম। আমার সত্তা আমার হৃদয় যেন সুধারসে ভরে যায়। আমি যেন রসের আস্বাদন পাই ও দিই। আমার প্রেম আমার সত্তা, আমার হৃদয় যেন সুধারসে ভরে যায়। আমি যেন রসের আস্বাদন পাই ও দিই। আমার প্রেম যেন সকলের প্রতি প্রসারিত হয় সকলের মধ্যে যিনি ঊর্ধ্ব তাঁর সমীপে পৌঁছায়। তৃতীয়টি হলো সৃষ্টির আনন্দ বেদনা। আমি যেন সৃষ্টি করে যেতে পারি। বিশ্বস্রষ্টা আমাকেও যেন তার সৃষ্টি শক্তির একটি কনা দেন। তাই দিয়ে আমিও যেন সৃষ্টি করতে পারি আমারও একটি ছোট খাটো জগৎ। আমার কয়েকটি নায়ক নায়িকা পাত্র পাত্রী। তারাও যেন জীবন্ত হয়। আমার সৃষ্টির কাজ যেন সম্পূর্ণ করে যেতে পারি।
সেইটুকু সৃষ্টি শক্তি আমাকে দেওয়া হয়েছে সেটুকু এই মতে দেওয়া হয়েছে যে আমি তার সঠিক ব্যবহার করব তার অপব্যবহার ও রকম না, তাকে অব্যবহৃত ও রাখব না। তাকে অব্যবহৃত রাখলে যে অব্যবহার্য হয়ে উঠবে। তার অপব্যবহার করলে তা কেড়ে নেওয়া হবে। অতিব্যবহারও এক প্রকার অপব্যবহার। আমার জীবনে এরকম অনেকবার ঘটেছে যে সৃষ্টির প্রেরণা এসে দুয়ার থেকে ফিরে গেছে। আমি রুজি রোজগারে মগ্ন। পরে যখন দুয়ার খুলেছি তখন আর দেখা পাইনি। আমার যখন অবসর হবে তারও তখনও আবির্ভাব হবে হায়! এমন সৌভাগ্য কি চাইলেই মেলে। এমন বর কি স্রষ্টা কাছে পাওয়া যায়। না চাইতেই তিনি কখনো কখনো দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এর জন্যে আমাকে ত্যাগস্বীকার করতে হয়েছে। সব দেশে সব যুগে প্রায় সব সাহিত্যিকের জীবনেই এমনতর সংকট দেখা দিয়েছে। এক এক উপায়ে সৃষ্টির প্রবাহকে বহমান রেখেছেন। যারা পারেননি তারা দুচারটি সার্থক রচনার উপরে সমস্ত শক্তি নিয়োগ করেছেন। যেমন আমাদের জাতীয় কবি কাজি নজরুল ইসলাম। একজনের জীবনের পাঁচটি বছরও আরেকজনের জীবনের পঞ্চাশটা বছরের সমতুল্য হতে পারে। অনেকের বেলাই দেখা যায় যে একটি বিশেষ বয়সেই তারা সব চেয়ে সৃষ্টি কম। তার আগেও না, তার পরেও না।
তবে সম্প্রতি সাহিত্যিকের জীবনে নতুন এক আপদ জুটেছে। সাহিত্যিকের কাছে ফরমায়েস দেওয়া হয় সমাজের বা সভ্যতার ওলট-পালট ঘটানোর। যেন সে একটা ঐতিহাসিক বা প্রাকৃতিক শক্তি অথবা একটা মরাল কোর্স এর ভিতরে সত্য যে একেবারে নেই তা নয়। সাহিত্য বা দর্শন বা দর্ম বা রাজনীতি এক একটা পরস্পর বিচ্ছিন্ন কক্ষ। যাবতয়ি মানবিক কার্যকলাপই পরস্পরকে প্রভাবিত করতে পারে। কবে রুশো ভলটেয়ার কী লিখে গেছেন, তারপরে তার ফল হলো ফরাসী বিপ্লব। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলেও তো রবীন্দ্রনাথ, নজরুল। শব্দ একবার উচ্চারিত হলে কত দূর দেশে কত দূর কালে যেতে পারে ও কত বড়ো বড়ো ঘটনা ঘটাতে পারে তার আরো অনেক নজির আছে। কিন্তু তার উপর দৃষ্টি রেখে সৃষ্টি করতে গেলে একূল ওকূল দুই কূল যেতে পারে। আমি অন্তত একটা কূল রক্ষা করতে পারলে খুশি। সাহিত্যের কূল।
আমি আমার স্বদেশ ও স্বকালের প্রত্যেকটি বিষয়ে আগ্রহান্বিত তা বলে আমি কি প্রত্যেকটি বিষয়ে কথা বলার অধিকারী? মাঝে মাঝে কণ্ঠক্ষেপ করলেও আমি জানি যে আমার উপরে যে রূপের দায় ও রসের দায় বর্তেছে তার থেকে মুক্তিই আমরা শিল্পী সত্তার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যের দিকে পদক্ষেপ যদি অব্যাহত থাকে তবে আর পাঁচটা বিষয়ে কন্ঠক্ষেপ সঙ্গে সঙ্গে চলতে পারে। লক্ষ্যভেদই আমার অন্তরাত্মার নির্দেশ।
এই প্রসঙ্গে মহাপ্রাণ যীশুর একটি অনুশাসনও আমি প্রত্যহ স্মরণ করি। স্রষ্টার রাজ্য অন্বেষন করবে। স্রষ্টার রাজ্য বলতে আমি বুঝি প্রেমের রাজ্য, সত্যের রাজ্য, মঙ্গলের রাজ্য, রসের রাজ্য, রূপের রাজ্য, আনন্দের রাজ্য, ন্যায়ের রাজ্য। এ রাজ্য যে যে কোথাও নেই তা নয়। সর্বত্র রয়েছে। এ রাজ্য কোথাও অবিশ্রিত তাও নয়। প্রেমের সঙ্গে রয়েছে অপ্রেম, সত্যের সঙ্গে অসত্য, মঙ্গলের সঙ্গে অমঙ্গল, রসের সঙ্গে নীরসতা, রূপের সঙ্গে কুশ্রীতা, আনন্দের সঙ্গে বেদনা, ন্যায়ের সঙ্গে অন্যায়। যখন বিপরীতটাকে দেখি বা তার দ্বারা আহত হই, তখনি বিচলিত হয়ে ভাবি স্রষ্টা থাকলে এ অন্যায় বা এ অমঙ্গল কী করে সম্ভব হয়? এ অপ্রেম বা এ অসত্য কেন? বারবার স্রষ্টার উপর মানুষের বিশ্বাস হারাই। পরে সে বিশ্বাস ফিরেও পাই। কারণ অন্ধকার রাতেও তারা ফোটে, রাতের শেষে সূর্য ওঠে। ইতিহাসও একদিনে সমাপ্ত হয় না।
এখন যীশুর সেই অনুশাসনের আমি এই অর্থ করি যে অপ্রেম দেখলে প্রেম দিতে হবে, অন্যায় দেখলে ন্যায়ের জন্য ক্ষুধিত ও তৃষ্ণিত হতে হবে। নীরসতার মধ্যে রস আনতে হবে, রূপের মধ্যে রূপ। নিরানন্দের মধ্যে আনন্দ। অসত্যের মধ্যে সত্য। লেখনী যখন আমার হাতে দেওয়া হয়েছে তখন লেখনীকেও কাজে লাগতে হবে। তার ফলে আর্ট হয়তো সৃষ্টি হলো না। তবে সেটা অবশ্য করণীয়। শুধু মনে রাখতে হবে যে সৃষ্টা সকলের কাে সব কাজ চান না, আমার কাছে চান আমারই বিশেষ কাজ। সে কাজটায় যাতে অবহেলা না হয়। প্রকৃতি যেমন নিত্য সক্রিয় আর্ট ও তেমনি নিত্য সাধনীয়। আমার শিল্প সত্তাকে আমি বন্ধা হতে দেব না। প্রকৃতির মতো সে হবে উর্বর।
এ জগতকে কেবলমাত্র প্রকৃতির জগৎ বলে মেনে নিলে একজন বিজ্ঞানীরা হয়তো বেশ চলে যায়। কিন্তু একজন শিল্পীর বা সাহিত্যিকের চলে না। প্রকৃতির জগতের অন্তরালে রয়েছে নীতির জন্য বা নিয়তির জন্য। রয়েছে স্বপ্নের বা ফ্যানটাসির জন্য। রয়েছে, ধ্যানের বা আদর্শের জগৎ। সেই জন্যে আর্ট কেবল প্রকৃতির প্রতিফলন বা চিত্রণ হলেই সার্তক হয় তা নয়। অনেক সময় আমি বুঝতে পারি যে মানুষকে চালনা করছে এক অদৃশ্য নিযতি। আবার এমনও মনে হয় যে তার চরিত্রই তার নিয়তি। প্রাচীনরা থাকে কর্ম বলতেন তারও সারবত্তা মানি। যেমন কর্ম তেমন ফল। আবার স্রষ্টার করুনা বা গ্রেস ও না মেনে পারিনে। নইলে ট্রাজেডির হাত থেকে রক্ষা নেই। যে নীতি সাদা ছাড়া আর কোন রং দেখতে পায় না সে নীতির উপর সমকালীন সাহিত্যে করা বিশ্বাস হারিয়েছেন। আমিও হারিয়েছি। কিন্তু এতদূর যেতে আমি প্রস্তুত নই যে নীতি বলে কিছু নেই বা আর্টে তার স্থান নেই। আমি নিজে কয়েকটি মূলনীতির অনুসরণ করি। আমার নিজের জীবন অন্য রূপ হতে পারত, কিন্তু হয়নি, তার কারণ সেই কয়েকটি মূলনীতি। তা বলে এ কথা বলাও শক্ত যে আমি যা হয়েছি তা সেই কয়েকটি মূলনীতির অুনসরণের ফলেই হয়েছি। নানা বিচিত্র যোগাযোগ আমার জীবনকে যেখানে এনে পৌঁছে দিয়েছে সেখানে দাঁড়িয়ে আমি নিজের দোষ কোনটাকেই প্রাধান্য দিতে পারছিনে। আমার দেশ, আমার কাল আবার সমাজ, আমার রাষ্ট্র, আমার চেনা অচেনা অসংখ্য মানুষ, আমার অন্তরে যা আছে বাইযে যা আছে, প্রকৃতি ও স্রষ্টা ও বিশ্বের অন্তনির্হিত নৈতিক বিধান সবাইকে নিয়ে আমি, আমাকে নিয়ে সবাই। এই যদি হয়ে থাকে আমার বেলা সত্য তাহলে আমার সৃষ্ট চরিত্রের বেলাই বা এর চেয়ে সরল হবে কী করে? সেকালের নীতি নিপুনদের মতো সরল করা একালের সাহিত্যিকদের রীতি নয়। বোধ হয় নীতি ও নয়।
আমার জীবনদর্শন মোটের উপর একজন শিল্পীর জীবনদর্শন। সে শিল্পীর বহির্জীবনের চেয়ে অন্তর্জীবনই সক্রিয়। নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া সমস্তক্ষণ চলেছে। তেমনি বিশ্বের সঙ্গে বোঝাপড়া সহস্রাংশের একাংশও আমি লিখিনি, লিখতে পারবও না। অনুভূতি বাক্যের অতীত। বাক্যে অনেক সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মুখের কথা মনের কথা হয় না। যথাসম্ভব সত্য বলতেই চেষ্টা করি, কিন্তু পূর্ণ সত্য বলা আমার সাধ্য নয়। বোধ হয় কারো সাধ্য নয়। তা করতে হলে বহুজনকে বিব্রত করতে হয়। আমার নীতিবোধ বাধে। তা ছাড়া স্রষ্টার চোখে হয়তো পূর্ণ সত্য নয়। তা করতে হলে বহুজনকে বিব্রত করতে হয়। আমার নীতিবোধে বাদে।
আমার ধারণা ছিল জীবনও একটা শিল্প হতে পারে। সেই হিসেবে আমিও হতে পারি জীবনশিল্পী। কিন্তু জীবনের একটা বড়ো অংশ হতো জীবিকা। জীবিকার অনুরোধে আইনকানুন মেনে কাজ করতে হয়, কখনো কখনো ওপরওয়ালার সঙ্গে আপসও করতে হয়। পাবলিকের কাছেও জবাবদিহির দায় আছে। সেই কারণে আমি জীবনশিল্পীর হবার সাধ ত্যাগ করি। শুধু শিল্পী হওয়ার সাধনাই বজায় রাখি। সে সাধনার সঙ্গে প্রেমিক হওয়ার সাধনাও ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। যেমন রস আর রূপ তেমনি প্রেম আর আর্ট। এছাড়াও ছিল সত্যের অন্বেষণ। জীবনের প্রতৌক পর্বেই আমি সত্যের অন্বেষণ করেছি। যাচাই না করে কিছুই সত্য বলে মেনে নেইনি। গুরুবাক্য হলেও তা স্বতঃসিদ্ধ নয়।
খ্রিষ্টানরা বলেন বিধাতা প্রেমস্বরূপ। যীশু তাঁর শিষ্যদের উপদেশ দিয়েছেন, বিধাতাকে সমস্ত মন দিয়ে, সমস্ত হৃদয় দিয়ে, সমস্ত আত্মা দিয়ে ভালোবাসবে। আর প্রতিবেশীদের নিজের মতো ভালোবাসবে। খ্রিষ্টীয় সন্তদের জীবন আদর্শে পরিচালিত হয়েছে। সুফী সাধকদের জীবনেও এর অনুরূপ লক্ষিত হয়। লালনশাহ, হাসনরাজা, হযরত শাহজালাল (রাঃ), হযরত শাহপরান (রাঃ), খাজা মইনুদ্দিন চিশতী, নানক কবীর চৈতন্যের জীবনেও। বৌদ্ধরা বিধাতা সম্বন্ধে নীরব। তাঁদের মৈত্রীর ও করুণার আদর্শ কেবলমাত্র মানুষে সীমাবদ্ধ নয়, সর্বজীবে প্রসারিত। জৈনদের আদর্শও অনুরূপ। প্রেম, মেত্রী, অহিংসা দুর্বলতার সূচক নয়। শিবি রাজা তো একটি কপোতকে আশ্রয় দিতে গিয়ে নিজের শরীরের মাংস কেটে দেন বাজপাখিকে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মানবগোষ্ঠর মধ্যে পরের জন্য জীবনদানের দৃষ্টান্ত আছে। জীবনটা দিয়ে ফেলা অত সহজ নয়, কিন্তু কিছু না কিছু নিঃস্বার্থভাবে দান করা অসম্ভব নয়। আমার সাহিত্যসৃষ্টিও নিঃস্বার্থ দান। তবু তাই যথেষ্ট নয়। পরের জন্যে নিঃস্বার্থভাবে কিছু করতে পারলে আমি নিজেকে কৃতার্থ মনে করি। পর যাকে বলা হয় সেও তলিয়ে দেখলে আত্মীয়। আত্মার আত্মীয়। দেহের থেকে দেহ আলাদ, একটা স্পষ্ট। কিন্তু মনের সঙ্গে মনের ও হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের অস্পষ্ট যোগ আছে। তাই পরের কল্যাণ করলে নিজেরও কল্যাণ হয়।
আজকাল সব দেশেই সবাই কম বেশি মেটিরিয়ালিষ্ট। ধর্মবিশ্বাস এই কালস্রোত রোধ করতে পারছে না। তার পালটা প্রভাব আনুষ্ঠানিকতায় নিবদ্ধ হয়ে বীর্যহীন। ধর্মের সবারবস্তু ছেড়ে তার খোলসটাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মৌলবাদ। যেমন মুসলিম আরবে, ইরানে, পাকিস্তানে তেমনি হিন্দু ভারতে। অন্ধের দ্বারা নীযমান অন্ধ জনতা গভীর কর্দমে পতিত হচ্ছে। তবে চিরকালের জন্য নয়। মানুষের স্বয়ংসংশোধিকা শক্তিতে আমার বিশ্বাস অটল। একটা প্রজন্মের ভুল আর একটা প্রজন্ম সংশোধন করবে। একটা শতকের ভুল আর একটা শতক। তবে কতক মানুষকে সদা সজাগ থাকতে হবে। তাা হবেন অতন্দ্র প্রহরী। জনপ্রিয় হওয়ার জন্য আমার লেখা নয়। জনপ্রিয় যদি হই তবে সেটা বাড়তি পাওনা। আমার বলবার কথা আমি প্রাণ খুলে বলতে পেরেছি এতেই আমার পরিতৃপ্তি। আমার জ্ঞাতসারে আমি কখনও অসত্য লেখিনি। লেখাকে কখনও অসুন্দর হতে দেইনি। সত্য ও সৌন্দর্যের কাছে আমি দায়বদ্ধ। যেখানে সত্য আছে, সৌন্দর্য আছে, সেখানে মননশীল পাঠক পাঠিকাও আছে আমার ধারণা।
চলবে....