Published : Monday, 10 January, 2022 at 12:00 AM, Update: 10.01.2022 12:53:29 AM
আসিফ আকবর ||কুমিল্লা আমার প্রানের শহর। আগের সেই শান্ত সৌম্য ক্ল্যাসিক কুমিল্লার ছিটেফোঁটা কোথাও নেই। নব্য টাকাওয়ালাদের দৌরাত্ব্যে আদি বনেদী বাসিন্দারা কোনঠাসা। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সু্যােগ পাওয়ামাত্রই শহর ছেড়ে পালিয়েছে। যারা এখনো রয়ে গেছেন তারা মানিয়ে চলছেন তথাকথিক রাজনৈতিক নেতাটেতার বাধ্যতামূলক লেজুড়বৃত্তি করে। শহরের প্রতিটি মানুষ রাজনৈতিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ছোটবেলার বন্ধুবান্ধব এখন আর একসাথে ছবি তোলেনা। ফেসবুকে ছবি দেখলে নাকি মাথার উপর চেপে বসা উটকো মুরুব্বী মাইন্ড করে হা হা হাৃ দল মত আর এখন নাই, বিরাজমান আছে নেতা কিংবা গডফাদারদের পোষা ভৃত্য টাইপ মাস্তান আর মোসাহেব প্রজাতির ব্যক্তিত্বহীন কেঁচোর দল। কুমিল্লায় রাজনীতির নামে চলছে পারস্পরিক হিংসাদূষ্ট রাজনৈতিক ছোটলোকিপনা।
শহরজুড়ে চলে অটো টেম্পো সিএনজির প্রকাশ্য গুন্ডামী। মানুষ হাঁটার আর কোন রাস্তা বাকী নেই। হংকং এর মত হাইরাইজ বিল্ডিং জন্ম নিচ্ছে প্রতিদিন, তবে সেগুলো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আলোকে নয়। বিশাল বিল্ডিংয়ের মাঝখানে সরু গলির মত রাস্তা। রিক্সা অটো গাড়ীর জ্যাম আর হর্ণে জনজীবন অতিষ্ঠ। এগুলো দেখার কেউই নেই, শহরের তিতিবিরক্ত মানুষগুলো অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে এসব অনাচারে। রাস্তাঘাট বিল্ডিংয়ে নেতার স্তুতিগাহনে ব্যস্ত অন্ধ রাজনৈতিক প্রানীদের ব্যানার পোষ্টার বিলবোর্ড আর প্যানাফ্লেক্স এর যন্ত্রনায় আলো লাগেনা মানুষের গায়ে। কথিত-উপ- পাতি- চামচা-মোসাহেব নেতাকর্মীদের লংমার্চে শহরটা বিল্ডিংময় বস্তিতে পরিনত হয়েছে। উন্নয়নের বর্জ্য আর সিস্টেম লস এর ফাঁদে পড়ে কুমিল্লার কথিত গৌরব এখন শুধু পাঠ্যপুস্তকেই সীমাবদ্ধ।
বন্ধু এনায়েত এর দাওয়াতে কুমিল্লা গিয়েছিলাম গোমতী নদীর ঐ পাড়ে পাঁচথুবী ইউনিয়নের শাহপাড়ায়। ব্রীজ পেরিয়ে যেতে যেতে দেখলাম গোমতী নদীটি মোটামুটি খাওয়া হয়ে গেছে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের চৌর্য্যবৃত্তিতে। ঐ এলাকায় এখনো উন্নয়ন সভ্যতার অসভ্যতা লাগামহীন হয়ে ওঠেনি। কৃষিক্ষেত খেলার মাঠ স্কুল মাদ্রাসা মসজিদ মন্দির বাসস্থানগুলোতে রয়েছে সবুজের নির্যাস। বুক ভরে ফ্রেশ অক্সিজেন নেয়ার পরিবেশ এখনো আছে সেখানে। বেশীদিন থাকবে বলে মনে হয়না, শহুরে রাজনৈতিক ব্যবসায়ী দস্যুদের শ্যোন দৃষ্টি ইতিমধ্যেই আলোর মুখ দেখা শুরু করেছে। একটা বেলা আনন্দে কাটালাম সবুজের ছায়ায়। এখানেও বন্ধুদের একসাথে ছবি তোলা নিয়ে লুকোচুরি খেলা। শীর্নকায় প্রিয় গোমতীকে পেছনে রেখে একটা ছবি তুলে রাখলাম স্মৃতি হিসেবে। প্রানের কুমিল্লা দিনদিন মন খারাপের কারনই হবে সেটা ভেবেই অনেক কষ্ট নিয়ে ঢাকায় ফিরেছি।
ভালবাসা অবিরাম।