অনেক দিন পর আবাহনী লিমিটেড হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পেয়েছে। অল্প দিনের ব্যবধানে দুটি টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে আকাশি-নীল জার্সিধারীরা। স্বাধীনতা কাপের পর এসেছে ফেডারেশন কাপের ট্রফি। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে খেলোয়াড়-সংগঠক ও সমর্থকদের মধ্যে বইছে আনন্দের ফল্গুধারা। এই মুহূর্ত উদযাপন করতে আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে স্থানীয় এক সম্মেলন কেন্দ্রে মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে দুটি টুর্নামেন্ট জেতার পর বর্তমান সময়কে ‘ম্যাজিক্যাল মোমেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ক্লাবটির ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর ইনচার্জ কাজী নাবিল আহমেদ।
আবাহনীর জেতা দুটি ট্রফি দুই দিকে সাজানো মঞ্চে উঠে কাজী নাবিল শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করলেন, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না। ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ পালন করছি আমরা। খেলার মাঠে বলেছি, এই বিজয় উৎসর্গ করছি সব মুক্তিযোদ্ধাকে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমি আবারও সম্মান জানাচ্ছি ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের প্রতি। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি লাল-সবুজ পতাকা।’
আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা শহীদ শেখ কামালকে স্মরণ করার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কাজী নাবিল, ‘স্মরণ করছি আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামালকে। যার কথা এখনও আমরা অনুপ্রেরণা হিসেবে শুনে থাকি। যার সান্নিধ্য পেয়েছেন অনেকেই। ধন্যবাদ দিতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও। যিনি অনুপ্রেরণা জুগিয়ে থাকেন সবসময়’
আবাহনীর সাফল্য উদযাপন অনুষ্ঠানে ক্লাবটির ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর ইনচার্জ কাজী নাবিল আহমেদ। ছবি: সাজ্জাদ হোসেনআবাহনীর সাফল্য উদযাপন অনুষ্ঠানে ক্লাবটির ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর ইনচার্জ কাজী নাবিল আহমেদ। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন
ক্লাবটির চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও ডিরেক্টর ইনচার্জ কাজী শাহেদ আহমেদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাফুফের এই সহ-সভাপতি বলেছেন, ‘সম্মান জানাচ্ছি ক্লাবের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের প্রতি। একই সঙ্গে সম্মান জ্ঞাপন করছি আমার বাবা ও (আবাহনীর) ডিরেক্টর ইনচার্জ কাজী শাহেদ আহমেদের প্রতি। যিনি গতকালও (সোমবার) আমার সঙ্গে খেলা নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। বিভিন্ন মতামত আমার সঙ্গে শেয়ার করেছেন।’
দুটি টুর্নামেন্ট জয় নিয়ে কাজী নাবিল বলেছেন, ‘বর্তমান মুহূর্তটি আমাদের সবার কাছে ম্যাজিক্যাল মোমেন্ট। ২০ দিনের মধ্যে দুটি কাপ জয় করেছি। শক্তিশালী সব দলকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে পেয়েছি। বসুন্ধরা কিংস, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সাইফ স্পোর্টিংকে পেয়েছি। সব দলকে দুই টুর্নামেন্টে আমাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমাদের এই চ্যাম্পিয়নশিপ এসেছে। সব খেলোয়াড় ও টিম ম্যানেজমেন্ট নিরলস পরিশ্রম করে আমাদের এই সাফল্য এনে দিয়েছেন।’
মৌসুমের প্রথম দুই শিরোপা জেতায় আবাহনীর খেলোয়াড়রা পেয়েছেন বোনাস। ছবি: সাজ্জাদ হোসেনমৌসুমের প্রথম দুই শিরোপা জেতায় আবাহনীর খেলোয়াড়রা পেয়েছেন বোনাস। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন
মৌসুমের শুরুতে পরিকল্পনা ছিল দল যেন ভালো ফল করে। আবাহনীর ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর ইনচার্জ তাই একটু পেছনে ফিরে গেলেন, ‘আমাদের শুরু থেকে পরিকল্পনা ছিল যে করেই হোক সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে, অবশ্যই এই বছর যেন চ্যাম্পিয়নশিপ পাই। সেজন্য আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাদের ম্যানেজারকে। যিনি বিভিন্ন সময়ে আমার সঙ্গে ফোনে-হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেছেন। আমার ভাইয়ের (কাজী ইনাম আহমেদ) সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কীভাবে আমাদের দলকে পুনর্গঠন করা যায়, সেই কাজটি তিনি সুন্দরভাবে করেছেন।’
এরপর এই কর্মকর্তা যোগ করেন, ‘এই মৌসুমের শুরুতে আমার ভাই ইনাম ম্যানেজারের সঙ্গে আলোচনা করেছিল। আমাদের নতুন করে যাত্রা শুরু করতে হবে। গত আড়াই বছর সাফল্য পাইনি। যেকোনও কারণেই হোক। উই মাস্ট ট্রাই সামথিং। ট্রাই এনিথিং। ট্রাই সামথিং ডিফারেন্ট। সেই কাজই এবার করেছি। বিভিন্ন পরিকল্পনা বদলে সাফল্য পেতে পারি। সেই সাফল্য কিন্তু এসেছে।’
আবাহনীর খেলোয়াড়দের উল্লাস। ছবি: সাজ্জাদ হোসেনআবাহনীর খেলোয়াড়দের উল্লাস। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন
খেলোয়াড়দের উদ্দেশে কাজী নাবিল বলেছেন, ‘সবাইকে বলবো আমাদের সামনে লিগ আছে। ট্রেবল জিততে হলে তোমরা যে পরিমাণ কাজ করেছো গত তিন মাসে, এর ডাবল একাগ্রতা ও অধ্যবসায় থাকতে হবে। বাকি সব দল চ্যালেঞ্জ নিয়ে তোমাদের দিকে আসছে। তেমন মেন্টাল টাফনেস থাকতে হবে। স্পিরিট থাকতে হবে। কমিটমেন্ট থাকতে হবে। যা তোমাদের সবার মধ্যে আছে। আমার দৃঢ়বিশ্বাস, কাজটি করতে পারবে। আশা করছি মৌসুম শেষে ট্রেবল জিততে পারবো আমরা।’